শ. ই. সরকার জবলু :: মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নস্থিত টাট্টিউলি গ্রামের যুগিটিলাসহ আশপাশের পাহাড়ী টিলায় ৩টি জঙ্গি আস্তানার সন্ধান পাওয়া গেছে। দুই দফায় এসব জঙ্গি আস্তানা থেকে জঙ্গি সন্দেহে সিটিটিসি ও পুলিশের হাতে এবং অটোরিকশা চালক ও স্থানীয়দের হাতে আটক হয়েছে ২৩ পুরুষ ও ৪ নারী। সিটিটিসি ও পুলিশের হাতে আটক ৬ পুরুষ ও ৪ নারীর সাথে ছিলো তাদেরই ৩ শিশুসন্তান। দ্বিতীয় দফায় আটককৃতদেরকে নিয়ে দ্বিতীয় দফা অভিযানে ৩টি পাহাড়ী আস্তানা থেকে উদ্ধার করা হয় প্রায় ৫ কেজি বিষ্ফোরক, ৯৫টি ডেটোনেটর, ১৪টি পিস্তলের গুলি, রামদা ও নগদ ২ লাখ টাকা। ১৫ আগষ্ট মঙ্গলবার সন্ধা ৬টার দিকে মৌলভীবাজার পুলিশ লাইনে সংবাদ সম্মেলন করে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট (সিটিটিসি) প্রধান মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান এসব তথ্য জানান। ১৪ আগষ্ট সোমবার রাতে জঙ্গিদের জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী দূর্গম পাহাড়ী এলাকায় এ অভিযান পরিচালনা করা হয়।
তিনি আরও জানান- জেলার কুলাউড়া উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নের পূর্ব টাট্টিউলী গ্রামের ওই জঙ্গি আস্তানা এলাকায় আরও জঙ্গি আস্তানা রয়েছে এমন সন্দেহে অভিযানে নেমে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি)। আটককৃত সকলেই নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘ইমাম মাহমুদ কাফেলা’র সদস্য। আপাততঃ পাহাড়ী এলাকায় অভিযান সমাপ্ত করা হয়েছে। তাদেরকে আরও জিজ্ঞাসাবাদ প্রয়োজন। জিজ্ঞাসাবাদে নতুন তথ্য বের হলে আবার ওই এলাকায় অভিযান চালানো হবে। মৌলভীবাজার জেলা পুলিশ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মৌলভীবাজজারের পুলিশ সুপার মোঃ মনজুর রহমান পিপিএম (বার), কাউন্টার টেরিরিজম ইউনিটের সহকারী পুলিশ কমিশনার সফিক, মৌলভীবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস্) সুদর্শন কুমার রায়, কুলাউড়া থানার ওসি আব্দুস ছালেকসহ পুলিশ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
১৫ আগষ্ট মঙ্গলবার সকাল ৭টার দিকে কর্মধা ইউনিয়ন কার্যালয় প্রাঙ্গন থেকে ১০টি সিএনজি অটোরিক্সা যোগে আটককৃত ১৭ জঙ্গির মধ্যে ৩ জনকে নিয়ে সিটিটিসি প্রধান মোহাম্মদ আসাদুজ্জামানসহ সংশ্লিষ্ট ঊর্ধতন কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে সিটিটিসি ওই এলাকায় অভিযানে নামে। তারা কালাপাহাড়সহ কয়েকটি পাহাড়ী এলাকায় এ অভিযান চালায়। দুপুর ২টার দিকে অভিযান শেষ হয়। অভিযানে সার্বিক সহযোগিতা করে মৌলভীবাজার জেলা পুলিশ। সংবাদ সম্মেলন শেষে দ্বিতীয় দফায় আটককৃত ১৭ জঙ্গিকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়।
আটক সন্দেহভাজন ১৭ জঙ্গি হলেন- জুয়েল মাহমুদ (২৮), পিতা- মৃতঃ আব্দুল কাদের, মাতা- সাহারা বেগম, গ্রাম- গাঁওপাড়া, থানা- বাগাতি পাড়া, জেলা- নাটোর। সোহেল তানভীর রানা (৩০), পিতা- মোঃ হেলাল উদ্দিন, মাতা- মোছা রাহেলা খাতুন, গ্রাম- পুরাবাড়ি, থানা ও জেলা- সিরাজগঞ্জ। সাদমান আরেফিন ফাহিম (২১), পিতা-হামিদুল হক, মাতা-হাসিনা বেগম, গ্রাম-দক্ষিন শ্রীকুল, থানা-রামু, জেলা-কক্সবাজার। মোঃ ইমতেজার হাসসাত নাবীব (১৯), পিতা- মোঃ এনামুল হক, মাতা- নাছিমা খানম, গ্রাম- মধ্যম মংনোয়া, থানা- রামু, জেলা- কক্সবাজার। ফাহিম খান (১৭), পিতা- আইয়ূব খান বাবু, মাতা- মৃতঃ সাবিনা ইয়াছমিন, গ্রাম- মোল্লাপাড়া, থানা ও জেলা-যশোর। মোঃ মামুন ইসলাম (১৯), পিতা- আব্দুল্লাহ, মাতা- মৃতঃ রোজিনা, গ্রাম- আতাইকুলা, থানা- আতাইকুলা, জেলা-পাবনা। রাহাত মন্ডল (২৪), পিতা- আব্দুর রহিম মন্ডল, মাতা- আঙ্গুর বিবি, গ্রাম- চাদপাড়া, থানা- গোবিন্দগঞ্জ, জেলা-গাইবান্ধা। সোলাইমান মিয়া (২১), পিতা- মোঃ নূর আলম, মাতা- সুলতানা বেগম, গ্রাম- পূর্ব দত্তেরচর, থানা- বকশিগঞ্জ, জেলা- জামালপুর। আরিফুল ইসলাম (৩৪), পিতা- সেকান্তা শেখ উরফে শান্ত শেখ, মাতা- খালেদা বেগম, গ্রাম- গোলা কান্দাইল, থানা- রূপগঞ্জ, জেলা- নারায়নগঞ্জ। মোঃ আশিকুল ইসলাম (২৯), পিতা- আব্দুল লতিফ, মাতা- রাশিদা বেগম, গ্রাম- হাটশিপুর, থানা- সারিয়াকান্দি, জেলা- বগুড়া।
মামুন ইসলাম (২৬), পিতা- ফজলু মল্লিক, মাতা- আলেয়া খাতুন, গ্রাম- আতাইকুলা, থানা ও জেলা- পাবনা। তানভীর রানা (২৪), পিতা- নজরুল ইসলাম, মাতা- নূরুন্নাহার, গ্রাম- ছয়াইল, থানা ও জেলা- ঝিনাইদহ। জুয়েল শেখ (২৫), পিতা- জহুরুল শেখ, মাতা- মেহেরুন্নেছা বেগম, গ্রাম- দক্ষিন নলতা, থানা- তালা, জেলা-সাতক্ষীরা। রফিকুল ইসলাম (৩৮), পিতা- ইসলাম মন্ডল, মাতা- হামিদা খাতুন, গ্রাম- কয়জুড়ি শ্রীপুর, থানা- আতাইকুলা, জেলা- পাবনা। মোঃ আবির হোসেন (২০), পিতা- আমজাদ হোসেন, মাতা- আম্বিয়া খাতুন, গ্রাম- দারামোদহা, থানা- সাথিয়া, জেলা- পাবনা এবং মেহেদী হাসান মুন্না (২৩), পিতা- মোঃ রেজাউল করিম, মাতা- দিনারা মমতাজ, গ্রাম- পূর্ব চিয়াইপাড়া, থানা ও জেলা- মাদারিপুর। কোয়েল (২৫), পিতা- সাখাওয়াত হোসেন, মাতা- জহুরা বেগম, গ্রাম- মুমিনপুর, থানা- ধনবাড়ী, জেলা- টাঙ্গাইল।
উল্লেখ্য- এর আগে ১১ আগষ্ট শুক্রবার রাত ৮টা থেকে গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন, সোয়াট ও পুলিশের বিপুল সংখ্যক সদস্য টাট্টিউলী গ্রামের যুগিটিলায় জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে একটি বাড়ি ঘিরে রাখে। ১২ আগষ্ট শনিবার সকালে সিটিটিসি ওই বাড়িতে “অপারেশন হিলসাইড” পরিচালনা করে জঙ্গি সন্দেহে ৬ পুরুষ ও ৪ নারীকে আটক করা হয়। এসময় তাদের সাথে ছিলো তাদেরই ৩ শিশু।
ওই আস্তানা থেকে প্রায় ৩ কেজি বিস্ফোরক, ৫০টির মতো ডেটোনেটর, নগদ ৩ লাখ ৬১ হাজার টাকা, প্রশিক্ষণ সামগ্রী, কমব্যাট বুট, বক্সিন ব্যাগ এবং কয়েক বস্তা জিহাদি বই উদ্ধার করা হয়।
আটক সন্দেহভাজন ১০ জঙ্গি হলেন- শরীফুল ইসলাম (৪০), পিতা- ওমর আলী, মাতা- ছমিরুন, গ্রাম- দক্ষিন নলতা, থানা ও জেলা- সাতক্ষীরা। হাফিজ উল্লাহ (২৫), পিতা- আবুল কাশেম, মাতা- জহুরা খাতুন, সাং- কানলা, থানা- ইটনা, জেলা- কিশোরগঞ্জ। খায়রুল ইসলাম (২২), পিতা- নজরুল ইসলাম, মাতা- সানোয়ারা বেগম, গ্রাম- রসুলপুর, থানা- ফতুল্লা, জেলা- নারায়নগঞ্জ। মেঘনা (১৭), স্বামী- খায়রুল ইসলাম, পিতা- মানিক মিয়া, মাতা- আলেয়া বেগম, গ্রাম- রসুলপুর, থানা- ফতুল্লা, জেলা- নারায়নগঞ্জ। রাফিউল ইসলাম (২২), পিতা- সাইফুল ইসলাম, মাতা- রেবা সুলতানা, গ্রাম- মাইজবাড়ী, থানা- কাজীপুর, জেলা- সিরাজগঞ্জ। মাইশা ইসলাম (২০), পিতা- সাইদুল ইসলাম, স্বামী- সোহেল তানজীম রানা, গ্রাম- চাদপুর (পিত্রালয়), থানা ও জেলা- নাটোর। মোছাঃ সানজিদা খাতুন (১৮), পিতা- আব্দুল জলিল, স্বামী- সুমন মিয়া, গ্রাম- নিজবলাই, থানা- শরিয়াকান্দি, জেলা- বগুড়া। আমিনা বেগম (৪০), পিতা- জলমত খা, স্বামী- শফিকুল ইসলাম, গ্রাম- দক্ষিন নলতা, থানা- তালা, জেলা- সাতক্ষীরা এবং মোছাঃ হাবিবা বিনতে শফিকুল (২০), পিতা- শফিকুল ইসলাম, মাতা- আমিনা বেগম, গ্রাম- দক্ষিণ নলতা, থানা- তালা, জেলা- সাতক্ষীরা। শাপলা বেগম (২২), পিতা- মজনু মল্লিক, স্বামী- আঃ ছত্তার, মাতা- আলেয়া বেগম, গ্রাম- শ্রীপুর, থানা- আটঘরিয়া, জেলা- পাবনা।
সন্দেহভাজন ১০ জঙ্গির সাথে থাকা তাদের সন্তানরা হলো- আবিদা (১২ মাস), পিতা- খায়রুল ইসলাম, মাতা- মেঘনা, গ্রাম- রসুলপুর, থানা- ফতুল্লা, জেলা- নারায়নগঞ্জ। জুবেদা (১৮ মাস), পিতা- আঃ ছত্তার, মাতা- শাপলা বেগম, গ্রাম- শ্রীপুর, থানা- আটঘরিয়া, জেলা- পাবনা এবং হুজাইফা (০৬), পিতা- আঃ ছত্তার, মাতা- শাপলা বেগম, গ্রাম- শ্রীপুর, থানা- আটঘরিয়া, জেলা- পাবনা।