সুরমার ঢেউ সংবাদ :: ব্রিটেনে কেয়ার ভিসার অভিবাসীদের পরিবার নেয়ার নিয়ম বাতিল। এ ভিসায় আসা ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে নিয়মটি গত ১১ মার্চ থেকে প্রযোজ্য হয়েছে। ব্রিটিশ সরকার বলেছে- এ পদক্ষেপ সরকারের অভিবাসনের হার কমানোর পরিকল্পনার অংশ। যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জেমস ক্লেভারলি গত সোমবার ব্রিটিশ পার্লামেন্টে অভিবাসন নিয়ে এ সংক্রান্ত পরিবর্তনের ঘোষণা দেন। তবে, তিনি নীতিটি প্রথমবারের মতো ঘোষণা করেছিলেন গত বছরের ডিসেম্বর মাসে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেয়া এক বার্তায় তিনি বলেন- ‘এ পদক্ষেপটি ব্রিটিশ অভিবাসনের সংখ্যা হ্রাস করার পরিকল্পনার অংশ’।
আগের নিয়ম অনুযায়ী, যুক্তরাজ্যে পরিচর্যাকর্মীর ভিসায় যাওয়া ব্যক্তিরা তাদের স্বামী কিংবা স্ত্রী এবং সন্তানকে নিয়ে আসতে পারতেন। তবে, ১১ মার্চ থেকে পরিবারের সদস্যদের স্পন্সর করতে বেশ কিছু অতিরিক্ত আয়সহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা যুক্ত করা হয়েছে- যা পূরণ করা অভিবাসীদের জন্য কার্যত অসম্ভব হবে।
নতুন পরিবর্তনগুলো প্রবর্তনের পেছনে যুক্তরাজ্য সরকার জানায়- বর্তমানে ব্রিটেনে অভিবাসনের হার অনেক বেশি। অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী, আশ্রয়প্রার্থী এবং বিভিন্ন মানবিক প্রকল্প ছাড়াও সাম্প্রতিক সময়ে অভিবাসীদের সামগ্রিক সংখ্যা বৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে কেয়ার ভিসায় যাওয়া ব্যক্তি এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা।
যুক্তরাজ্য সরকারের মতে- ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশটিতে ১ লাখ কেয়ার কর্মী এবং তাদের পরিবারের ১ লাখ ২০ হাজার সদস্য এসেছেন। দেশটির বৈধ অভিবাসন বিষয়ক মন্ত্রী টম পার্সগ্লোভ বলেন- এ সংখ্যা ‘অসমানুপাতিক’ এবং নিঃসন্দেহে ‘উদ্বেগজনক’।
অন্যদিকে, অভিবাসী সহায়তাকারী এনজিও এবং দাতব্য সংস্থাগুলো বলেছে- বিদেশি পরিচর্যা কর্মীদের পরিবারের সদস্যদের তাদের সঙ্গে যোগদান করতে বাধা দেয়া ‘অমানবিক’ এবং এর ফলে কর্মীরা মানসিকভাবে নিঃস্ব হয়ে পড়বে। সরকারের এ পরিবর্তন ঘোষণার পর ওয়ার্ক রাইটস সেন্টারের প্রধান ডোরা-অলিভিয়া ভিকোল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজমকে বলেন- অভিবাসী শ্রমিকরা ইতিমধ্যে অনিশ্চিত পরিস্থিতিতে বাস করছে। নতুন উদ্যোগের অর্জন হবে পরিবার ভেঙে দেয়া, কর্মীদের ভয়ে রাখা এবং পারষ্পরিক বিশ্বাস নষ্ট করা।
যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে বিরোধীরা বলেছেন- এ পদক্ষেপ ব্রিটিশ অর্থনীতির ক্ষতি করতে পারে। কেয়ার সেক্টরগুলো কর্মী ঘাটতিতে ভুগছে। বেশ কয়েকজন মন্ত্রী বলেছেন- নতুন নিষেধাজ্ঞাটি সংকটে থাকা খাতে প্রয়োজনীয় অভিবাসী শ্রমিকদের আসতে বাধা দেবে।
স্কটিশ দৈনিক দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে- সোশ্যাল কেয়ার খাতের নিয়োগকর্তারা স্পষ্টভাবে বলেছেন, তারা বিদেশি কর্মীদের ওপর নির্ভরশীল। ব্রিটিশ পাবলিক সেক্টর ইউনিয়নের প্রধান গেভিন এডওয়ার্ডস বলেন- পরিচর্যা কোম্পানিগুলো অভিবাসীদের ছাড়া সহজভাবে কাজ করতে পারেনা।
অভিবাসন আইন নিয়ে কাজ করা ব্যক্তি ও আইনজীবী কলিন ইয়ো বলেন, পরিচর্যা কর্মীদের পরিবারের মানুষদের আনতে বাধা দিলে এ সেক্টরে কর্মী ঘাটতি দেখা দেবে বলে তিনি মনে করেননা। প্রচুর অভিবাসী আছেন যারা পরিবার ছাড়া ব্রিটেনে আসতে চাইবে।
তিনি বলেন- এ পরিবর্তনের কারণে আরও বেশি লোক যুক্তরাজ্যে আসতে পারবে। কারণ বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় পরিবারের কাছে রেমিটেন্স পাঠানোর প্রথা রয়েছে। অনেক দেশে শুধুমাত্র কাজের জন্য দেশত্যাগের অনুশীলন ও সংস্কৃতি রয়েছে। বৈধভাবে আসার ৫ বছর পর তারা এখানে স্থায়ী হতে পারলে যুক্তরাজ্যের অভিবাসন নিয়মের অধীনে তাদের সন্তান এবং অংশীদারদের নিয়ে আসতে পারবেন।
নতুন পরিবর্তনের অর্থ হল যারা চলতি বছরের ১১ মার্চ থেকে থেকে আসবেন তারা তাদের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আসতে পারবেননা। নতুন আইনের আওতায় প্রভাবিত পেশার কোড হল এসওসি ৬১৪৫ এবং ৬১৪৬। এ সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাবে ব্রিটিশ সরকারের ওয়েবসাইটে।
নতুন নিষেধাজ্ঞা ইতিমধ্যে যুক্তরাজ্যে বসবাসরত পরিচর্যা কর্মীদের ও তাদের পরিবারের জন্য প্রযোজ্য হবেনা। এ ভিসায় কর্মী আনতে শুধুমাত্র সেসব কোম্পানি স্পন্সর করতে পারবেন যারা ব্রিটিশ কেয়ার কোয়ালিটি কমিশনে নিবন্ধিত।
সম্প্রতি স্কিলড্ ওয়ার্কার ভিসার পরিবর্তিত বেতন কাঠামোর শর্তগুলো এ স্বাস্থ্য এবং কেয়ার ভিসার জন্য প্রযোজ্য হবেনা। ব্রিটিশ স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বা এনএইচএস সংশ্লিষ্ট নিয়োগকর্তাদের জন্য নিবেদিত ওয়েবসাইটে এ সংক্রান্ত বিস্তারিত দেখা যাবে।