হাকালুকি হাওরে সামগ্রিকভাবে পাখির সংখ্যা অনেকটাই কম

হাকালুকি হাওরে সামগ্রিকভাবে পাখির সংখ্যা অনেকটাই কম

সুরমার ঢেউ সংবাদ :: হাকালুকি হাওরে এবছর জলচর পাখির সংখ্যা কিছুটা বাড়লেও সামগ্রিকভাবে পাখির সংখ্যা আগের কয়েক বছরের তুলনায় অনেকটাই কম। গত ২৮ ও ২৯ জানুয়ারি হাকালুকি হাওরে পাখিশুমারি হয়। পাখি বিশেষজ্ঞ ইনাম আল হক ১০ ফেব্রুয়ারী শুক্রবার সন্ধ্যায় পাখিশুমারির তথ্য জানিয়েছেন। বনবিভাগ, বাংলাদেশ বার্ড ক্লাব ও ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব ন্যাচারের (আইইউসিএন) যৌথ উদ্যোগে এ শুমারি হয়।
মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া, জুড়ী ও বড়লেখা এবং সিলেট জেলার ফেঞ্চুগঞ্জ ও গোলাপগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকাজুড়ে হাকালুকি হাওর বিস্তৃত। ১৯৯৯ সালে সরকার এ হাওরকে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ বা ইকোলজিক্যালি ক্রিটিক্যাল এরিয়া) বলে ঘোষণা করে।
জানা গেছে- বাংলাদেশে ৭১৮ প্রজাতির পাখির মধ্যে ৩৮৮ প্রজাতির পাখিই পরিযায়ী। শীতকালে পরিযায়ী হয়ে বিভিন্ন দেশ থেকে ছুটে আসে বাংলাদেশে। আশ্রয় হিসেবে বেছে নেয় হাকালুকি হাওরের মতো জলাশয়। প্রায় ১৮১ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এ হাওরে রয়েছে ছোট-বড় ২৭৬টি বিল।
এবারের পাখিশুমারি অনুয়ায়ী- হাকালুকি হাওরে এবছর এসেছে প্রায় ২৫ হাজার পাখি- যা গতবছর থেকে অনেক কম। ২০২০ সালে এ সংখ্যা ছিলো প্রায় ৪০ হাজার ১২৬টি। মাত্র কয়েক বছর আগে দেশে ৫-৬ লাখ পরিযায়ী পাখি আসতো। এসব পাখির বেশিরভাগ মৌলভীবাজার ও সিলেটের হাওরে অবস্থান করতো।
পাখি বিশেষজ্ঞ ইনাম আল হক বলেন- ‘শুমারিতে ৫২ প্রজাতির ৩৭ হাজার ৭৭৮ জলচর পাখির দেখা মিলেছে। এর মধ্যে হাওরের খাল-বিলে সর্বোচ্চ ১২ হাজার ৭৩২টি পাখি দেখা গেছে। এছাড়া বেশি দেখা মিলেছে পিয়াং হাঁসের। এর সংখ্যা ৫ হাজার ৪৫৭টি। এরপর ছোট পানকৌড়ির সংখ্যা ৪ হাজার ৫৩৭টি। শুমারির সময় হাকালুকিতে বিরল ও বিপন্ন প্রজাতির দুটি ফুলুরি হাঁস দেখা গেছে ।
বাংলাদেশ বার্ড ক্লাব ও ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব ন্যাচার (আইইউসিএন) এর পর্যবেক্ষণ বলছে- গত ২০ বছরে সারাদেশে পরিযায়ী পাখির সংখ্যা কমেছে ৩৫ শতাংশ। হাকালুকিতে কমেছে ৪৫ শতাংশ। ২০০০ সালের আগে হাওরে বিচরণ করতো প্রায় ৭৫-৮০ হাজার পাখি। তার ৮০ শতাংশই হাকালুকি হাওরে।
পরিযায়ী পাখির সংখ্যা কমে যাবার কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন- হাওরের জীববৈচিত্র ধ্বংস, নদীদূষণ, জাল, বিষ টোপ ও পটাশ দিয়ে পাখি শিকার। একসঙ্গে বেশ কয়েকটি বিলে মাছ আহরণ, বিল শুকিয়ে মাছ নিধন, বিলে ২৪ ঘণ্টা পাহারা ও জলজ বৃক্ষ নিধনসহ নানা কারণে পাখি কমছে।
হাকালুকি হাওরে যে নদীগুলো মিলিত হয়েছে এখন সেগুলো প্লাস্টিক, পলিথিন, দূষিত পানি ও ময়লার ভাগাড়। পাখি কমার বিশেষ কয়েকটি কারণের মধ্যে এটি একটি। হাওর অরক্ষিত থাকায় দিন দিন কমছে পাখির সংখ্যা। হাওরের পরিযায়ী পাখি রক্ষায় স্থানীয়দের সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি প্রশাসনের কঠোর ভূমিকা থাকতে হবে।
মৌলভীবাজার বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ) রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ‘প্রতিবছর হাকালুকি হাওরে বিল ইজারা দেয়া হয়। এ বছরও ইজারা দেয়া হয়েছে। এতে বেশ লোক সমাগম ঘটে। দিন-রাত পাহারা দেয়া হয়। নানা কারণে পরিযায়ী পাখিরা স্বাচ্ছন্দ্যে থাকতে পারে না হাওরে। বিল শুকিয়ে মাছ আহরণের কারণে নষ্ট হচ্ছে হাওরের জীববৈচিত্র। ফলে, পরিযায়ী পাখির সংখ্যা কমছে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *