সুরমার ঢেউ সংবাদ :: মৌলভীবাজারে মিথ্যা অজুহাতে বাড়ীঘরে হামলা চালিয়ে চাচাতো ছোটভাই ও তার স্ত্রীকে মারধোর এবং থানায় উল্টো মিথ্যামামলা দায়ের করে হয়রনীর অভিযোগ উঠেছে চাচাতো লন্ডনী বড়ভাইয়ের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে উভয় পরিবারের মধ্যে। ঘটনাটি চলমান রয়েছে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার একাটুনা ইউনিয়নের উলুয়াইল গ্রামের চাচাতো দুইভাই নানু মিয়া লন্ডনী ও তোফাজ্জল মিয়ার মধ্যে।
ছোটভাই তোফাজ্জল মিয়ার দাবী- মূল বিরোধ আমার ভূমি বিক্রি নিয়ে। আমার বেশী মূল্যের ভূমি কমমূল্যে তার কাছে বিক্রি না করায় বিরোধ সৃষ্টি করেন। এছাড়া, উনার পাওনা ছিলো ভূমি ক্রয় বাবদ ২ লাখ ৭ হাজার টাকা ও হাওলাত বাবদ ২ লাখ টাকা এবং আমার পাওনা ছিলো ১ লাখ ৭২ হাজার টাকা। উনি বার বার মিথ্যা মামলা দিয়ে আমাকে জেল খাটান। তার লোকজন নিয়ে হামলা করে আমাকে ও আমার স্ত্রীকে মারধোর করে গুরুতর আহত করেন। এর শারিরিক প্রমান, চিকিৎসার প্রমান, মামলা ও সালিশের প্রমান এবং হামলা ও মারধোরের ভিডিও রয়েছে। মামলার আসামী করায় পুলিশের ভয়ে আমার পুত্র শেখ রাব্বি এসএসসি পরীক্ষা দিতে পারেনি। আমরা ৫টি পরিবারের লোকজন মসজিদে যাতায়াতের রাস্তা এবং বাড়ীর উঠান উনি দেয়াল ও গেইট নির্মান করে বন্ধ করেছেন। মিথ্যামামলা দিয়ে আমাকে দীর্ঘদিন জেল খাটিয়েছেন। আমার মানসিক, শারিরিক ও আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি বিবেচনা করে সালিশে ইউপি চেয়ারম্যান, মেম্বার ও মুরব্বীয়ানরা ক্ষতিপূরন হিসাবে উনার পাওনা টাকা আমার অনুকুলে উসুল করে দেনা-পাওনা নিষ্পত্তি করে দিয়েছেন। তা সত্তেও উনি আবারও পাওনা দাবী করে আমার গায়ে হাত তুলেছেন, বাড়ীঘরে হামলা করেছেন। আবারও থানায় মিথ্যামামলা করেছেন। বক্তব্য শেষে তোফাজ্জল মিয়া প্রমান হিসাবে শরীরের জখম, চিকিৎসাপত্র, মামলা ও সালিশের কাগজাত এবং হামলা ও মারধোরের ভিডিও ফুটেজ দেখান।
অপরদিকে, চাচাতো বড়ভাই নানু মিয়া লন্ডনীর দাবী- সে মুদি ব্যবসায়ী ছিলো। ব্যবসার জন্য সে আমার কাছ থেকে ১২ লাখ টাকা হাওলাত নিয়েছিলো। এর মধ্যে ৫ লাখ টাকা ফেরত দিয়েছে এবং ৭ লাখ টাকা পাওনা রয়েছে। কিন্তু, এ ৭ লাখ টাকা এখনও দিচ্ছেনা। এ নিয়েই সে আমার সাথে বিরোধ সৃষ্টি করেছে। তার স্ত্রীকে দিয়ে আমার চাচার পরিবারের বিরুদ্ধে মিথ্যামামলা করেছে- যা পরবর্তীতে সালিশে নিষ্পত্তি হয়েছে। আমার পাওনা টাকার বিষয়ে সালিশ হয়ে সে টাকা ফেরত দেয়ার জন্য ১ বছর সময় নিয়েছিলো। কিন্তু, ৩ বছর গত হলেও টাকা ফেরত দিচ্ছেনা। সম্প্রতি পুকুর পাড়ে তাকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে টাকা দিতে বললে, সে আমার পাওনা টাকা অস্বীকার ও আমার সাথে দূর্ব্যবহার করেছে। এ নিয়ে কথা কাটাকাটির জেরে সে ও তার ছেলে আমার বাড়ীঘরে হামলা করেছে। আমি নিরুপায় হয়ে থানায় মামলা করতে বাধ্য হয়েছি।
তবে, পরিচয় গোপন রাখার নিশ্চয়তা সাপেক্ষে স্থানীয় একাধিক বিশ্বস্থ সূত্র জানিয়েছে- তোফাজ্জল মিয়ার কাছে নানু মিয়া লন্ডনীর টাকা পাওনা ছিলো বলে শুনেছিলাম। কত টাকা তা জানা নেই। বিষয়টি ইউপি চেয়ারম্যান, মেম্বার ও মুরব্বীয়ানরা সালিশে নিষ্পত্তি করে দিয়েছিলেন বলেও শুনেছি। সম্প্রতি তাদের মধ্যে আবার পাওনা টাকা নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি হয়েছে বলে শুনেছি। নানু মিয়া লন্ডনী এ নিয়ে কথা কাটাকাটি করে তোফাজ্জল মিয়াকে থাপ্পর মেরেছে এবং পরে তোফাজ্জল মিয়ার বাড়ীঘরে হামলা করে তাকে এবং তার স্ত্রীকেও মারধোর করেছে বলে শুনেছি।
ইউপি চেয়ারম্যান আবু সুফিয়ান জানান- এটা বেশ আগের ঘটনা, বিস্তারিত মনে নেই। বিষয়টি পঞ্চায়েতকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে, তারা দেখছেন। বর্তমানে তাদের মধ্যে বিরোধ ও মামলা-মোকদ্দমা সম্পর্কে শুনেছি। তবে, তারা কেউ আমাকে জানাননি।
স্থানীয় সুন্দর মিয়া জানান- এটা বেশ আগের ঘটনা। সবকিছু সঠিক মনে করতে পারছিনা। যতটুকু মনে পড়ে, মূলতঃ নানু মিয়া লন্ডনী বাড়ীর উঠানে সীমানা দেয়াল নির্মান করা নিয়েই বিরোধ সৃষ্টি হয়েছে। এটা থেকেই পরে দেনা-পাওনার বিষয় এসেছে। একাধিক মামলা মোকদ্দমা হয়েছে। তোফাজ্জল মিয়া জেল খেটেছে। উভয়েরই উভয়ের কাছে দেনা-পাওনা ছিলো। পরবর্তীতে সালিশে চেয়ারম্যান সাহেব একটা ন্যায়সঙ্গত সিদ্ধান্ত দিয়ে বিষয়টি নিষ্পত্তি করে দিয়েছিলেন।
স্থানীয় ইউপি মেম্বার গিয়াস মিয়া জানান- এদের আলাদা গ্রুপ আছে। আমার ওয়ার্ডের লোক হলেও এরা আমাকে কিছু জানায়না। তারা তাদের গ্রুপ নিয়েই সবকিছু করে। তাই, আমি এসব জানিনা। বেশ আগে চেয়ারম্যান সাহেব তাদের একটা বিষয় নিষ্পত্তি করে দিয়েছিলেন বলে জানি। তবে, বিস্তারিত জানা নেই।