সুরমার ঢেউ সংবাদ :: সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ই-গেট কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়েছে ৮ জানুয়ারি রোববার সকালে। এর মাধ্যমে ঢাকা-চট্টগ্রামের পর সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরেও শুরু হলো ই-গেট কার্যক্রম। এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। ই-গেট চালু হওয়ায় মাত্র ১৮ সেকেন্ডেই ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করতে পারবেন যাত্রীরা। তবে, এজন্য অবশ্যই ই-পাসপোর্ট থাকতে হবে। সংশ্লিষ্টরা জানান, ই-গেট চালুর মাধ্যমে বিমানবন্দরের কার্যক্রম আরও গতিশীল হবে। ই-পাসপোর্টে থাকা মাইক্রোপ্রসেসর চিপ এবং অ্যান্টেনা স্ক্যান করে ই-গেট পাসপোর্টধারী ব্যক্তির পরিচয় শনাক্ত করবে। যাত্রীরা ই-গেটে পাসপোর্ট দেয়ার পরই স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে খুলে যাবে গেট। ১৮ সেকেন্ডের মধ্যে শেষ হবে বিদেশগামীদের ইমিগ্রেশন কার্যক্রম। যাত্রী নিজে নিজে এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারবেন। এজন্য কোনো কর্মকর্তার প্রশ্নের মুখেও পড়তে হবে না।
বিমানবন্দর সূত্রে জানা যায়, ই-গেটের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান ফ্লোরা লিমিটেড এরই মধ্যে ই-গেট মেশিন স্থাপনসহ সব কাজ সম্পন্ন করেছে। যাত্রীদের বহির্গমনের জন্য তিনটি এবং প্রবেশের জন্য ৩টি গেট চালু রয়েছে। বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিসের উপ-পরিচালক মহের উদ্দিন শেখ বলেন, ই-গেট চালু হলে প্রবাসীদের ভোগান্তি লাঘব হবে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে ইমিগ্রেশনের কাজ শেষ হবে। প্রবাসীদের কথা চিন্তা করেই সরকার এ উদ্যোগ নিয়েছে। এর আগে বাংলাদেশে ই-গেট কার্যক্রম শুরু হয় ২০২১ সালের ৩০ জুন। ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বসানো ই-গেটের উদ্বোধন হয়েছিল সেদিন। সেখানে ২৬টি ই-গেট চালু রয়েছে। এরপর চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরেও ৬টি ই-গেট চালু করা হয়। বিশ্বের ১১৮টি দেশে ই-পাসপোর্ট ব্যবহার করছে। বাংলাদেশ হলো ১১৯তম দেশ।
ই-গেটের সুবিধা : আন্তর্জাতিক ভ্রমণে একজন যাত্রীর পরিচয়পত্র তার পাসপোর্ট। পুরোনো পাসপোর্টের চেয়ে বেশি সুরক্ষিত ই-পাসপোর্ট। এটি এমন এক ধরনের ইলেক্ট্রিক সিস্টেম যার কভারে একটি চিপ থাকে। যার মধ্যে থাকে পাসপোর্ট বহনকারীর তথ্য, সেই সাথে তথ্য জালিয়াতি থেকে সুরক্ষা ব্যবস্থা। পুরনো এমআরপি পাসপোর্টে দশ আঙুলের ছাপ সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকলেও ই-পাসপোর্টে তা রয়েছে। এর মাইক্রোপ্রসেসরে একজন ব্যক্তির বায়োমেট্রিক ও বায়োগ্রাফিক ৪১টি তথ্য থাকে। এর মধ্যে ২৬টি তথ্য খালি চোখে দেখা যায়। ২টি বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা আছে- যা বিশেষ যন্ত্র ছাড়া পাঠ করা যায়না।
এদিকে, ই-পাসপোর্ট উদ্বোধনকালে সিলেটে আরেকটি পাসপোর্ট অফিস করার তাগিদ দিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। মন্ত্রী বলেন, সিলেটের বর্তমান পাসপোর্ট অফিস যেখানে আছে সেখানে সেবাপ্রত্যাশীদের নানা ধরণের সমস্যার সম্মুখিন হতে হয়। চাহিদার তুলনায় সেবা কম পাওয়ায় অভিযোগ উঠেছে পাসপোর্ট অফিসের বিরুদ্ধে। কিন্তু বর্তমান সরকার মানুষকে সেবা দেয়ার জন্য সবকিছু সহজ করে দিচ্ছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমি নিজেই সিলেটের পাসপোর্ট অফিস দেখেছি। এখানকার রাস্তা খুবই সরু। কেউ যদি অসুস্থ লোককে নিয়ে আসে তাদের জন্য খুবই কষ্টকর। প্রতিদিন হাজার হাজার পাসপোর্ট জমা হয়। কিন্তু সঠিক সময়ে সেগুলো দেয়া সম্ভব হয়ে উঠেনা। পাসপোর্টের জন্য সাধারণ মানুষের হাহাকারের কথা উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সময় মত পাসপোর্ট না পেলে জনগণ নানা অভিযোগ করেন তাদের অনেক অভিযোগ সত্য এবং অনেক অভিযোগের সত্যততা থাকে না। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ইতোমধ্যে স্বররাষ্ট্রমন্ত্রীকে সিলেটে আরেকটি পাসপোর্ট অফিসের করার জন্য বলেছি। নতুন একটি পাসপোর্ট অফিস হলে তিলকে তাল করে কেউ অভিযোগ করতে পারবেন না। সেবার মান বৃদ্ধি পাবে এতে জনগণও সঠিক সময়ে সেবা পাবেন।
ড. মোমেন বলেন, সিলেটের বিরাট সংখ্যক মানুষের দ্বৈত নাগরিকত্ব আছে। আমাদের যারা ডুয়েল সিটিজেন আছেন তাদেরকে নো ভিসা সার্ভিস আরো বেগবান করতে হবে, যাতে করে প্রবাসীরা আরো দ্রুত এই সার্ভিস পায়। ই- গেইট চালু হওয়াতে সুবিধাভোগীদের অনেক উপকারে আসবে। উদ্বোধনকালে আরও বক্তব্য রাখেন পাসপোর্ট ও ভিসা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল নুরুল আনোয়ার, সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান, সুরক্ষা বিভাগের সচিব আব্দুল্লাহ আল মাসুদ, সিলেট বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিসের উপ-পরিচালক মহের উদ্দিন শেখ, সিলেট জেলা আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন খান।