ছালেহ আহমদ সেলিম, বিশেষ প্রতিনিধি :: মৌলভীবাজারে এবার অনুকুল পরিবেশ ও পোকা মাকড়ের আক্রমন কম থাকায় আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে। নতুন ধানের মৌ-মৌ গন্ধে মূখরিত মৌলভীবাজার জেলার চারিপাশ। কেউ ধান কর্তন করছেন। আবার কেউ প্রস্তুতি নিচ্ছেন। চলতি আমন মৌসুমে আনুষ্ঠানিক ভাবে খামার যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে একই জমিতে রোপা আমন ধান রোপনের পর কম্বাইন হারভেস্টার দিয়ে কর্তন শুরু হয়েছে। কৃষি বিভাগ বলছে যান্ত্রিক নির্ভর হলে শ্রমিক সংকট থাকবে না। যন্ত্রের ব্যবহারের ফলে উৎপাদন খরচ কমে যাওয়ায় কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন। প্রতিবছর ধান কাটার মৌসুমে দেখা দেয় শ্রমিক সংকট। অনেকেই সময়মতো ধান ঘরে তুলতে পারেননা। এতে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্থের পাশাপাশি হতাশায় থাকেন। রোপন ও কর্তন যান্ত্রিক হওয়ায় কৃষকরা কম খরচে ভালো ফলন পাচ্ছেন।
মৌলভীবাজার সদর উপজেলার আজমেরু এলাকায় পাতাকুঁড়ি এগ্রোর সহযোগীতায় জেলা প্রশাসন ও জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের আয়োজনে খামার যান্ত্রিকীকরণের আওতায় রোপা আমন ধানের চারা রোপন ও কর্তনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। এ লক্ষ্যে মাঠে স্থানীয় কৃষকদের নিয়ে এক আলোচনা সভাও অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথির ছিলেন জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান। বক্তব্য রাখেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপ-পরিচালক সামসুদ্দিন আহমদ, সদর উপজেলা কৃষি অফিসার সুব্রত কুমার দত্ত, স্থানীয় কৃষি যান্ত্রিকীকরণ খামার মালিক সৈয়দ হুমায়েদ আলী শাহীনসহ অন্যন্যরা। উপস্থিত ছিলেন উপ-সহকারী কৃষি অফিসার নিরোজ কান্তি রায়, স্থানীয় কৃষক বাচ্চু মিয়া ও রাজু আহমদ।
পরে প্রধান অতিথি ফিতা কেটে আমন ধান কর্তনের উদ্বোধন করেন এবং যান্ত্রিকভাবে উৎপাদিত মাঠের ফসল কম্বাইন হারভেস্টার চালিয়ে কর্তন করেন। খামার যান্ত্রিকীকরণের উদ্যেক্তা সৈয়দ উমেদ আলী বলেন- এ বছর ১২৩ বিগা জমিতে হাইব্রিড ও ব্রি ৭৫ জাতের ধান চাষ করেছেন। এর মধ্যে ৮৩ বিঘা জমিতে রাইস ট্রান্সপ্লান্টার দিয়ে চারা রোপন করেন এবং ওই জমিতে ধান কর্তন করছেন কম্বাইন্ড হার্ভেস্টার দিয়ে। এ যন্ত্রে ধান কাটা, মাড়াই ও ঝাড়াই একসাথে হয়ে যায়। যে কারনে শ্রমিক কম লাগে এবং খরছ কমে যায়। প্রতিবছরই শ্রমিক সঙ্কট লেগে থাকে। তাই, আমরা যন্ত্রের উপর পরোপুরি নির্ভরশীল হয়ে পড়েছি।
স্থানীয় কৃষি যান্ত্রিকীকরণ খামার মালিক সৈয়দ হুমায়েদ আলী শাহীন জানান- যান্ত্রিকীকরণের কারণে খরচ কমে গেছে, জমিতে ফলন ভালো হচ্ছে। রাইস ট্রান্সপ্লান্টার মেশিনে কমবয়সী চারা রোপন করা যায়। এতে করে ফলনও ভালো হয়। আমরা যে জমিতে ধান কাটছি, সে জমিতেই মেশিন দিয়ে চারা রোপণ করেছি। কম্বাইন্ড হার্ভেস্টার দিয়ে ধান কর্তন করছি, সেটি ব্যবহারে উৎপাদন খরচ অনেকটা কমে গেছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপপরিচালক সামসুদ্দিন আহমদ জানান- এবছর বিভিন্ন জাতের ব্রি-ধান ও হাইব্রিড ধান কৃষকরা চাষাবাদ করেছেন। আমন ধান চাষে এ বছর অনুকুল পরিবেশ ও পোকার আক্রমন কম থাকায় বাম্পার ফলন হয়েছে। পাশাপাশি খামার যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে প্রতিবছর অনাবাদি জমিতে চাষাবাদ বৃদ্ধি ও ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এবছর জেলায় আমন ধান চাষাবাদে জমির পরিমানের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ১ হাজার ৪ শ হেক্টর। আবাদ হয়েছে ১ লাখ ১ হাজার ৬ শত হেক্টর পরিমাণ জমি- যার সম্ভাব্য উৎপাদন ধরা হয়েছে ২ লাখ ৮০ হাজার মেট্রিক টন। কৃষি বিভাগ আশা করছে এবছর ৩ লাখ মেট্রিক টনের উপরে উৎপাদন হবে।
জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান বলেন- মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় এক ইঞ্চি জমিও যাতে খালি পড়ে না থাকে সে জন্য কৃষিখাতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে যান্ত্রিকীকরণে ভর্তুকি ও প্রনোদণা দিচ্ছে সরকার। এতেকরে কৃষকদের মধ্যে উৎসাহ জাগছে। কৃষি যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে শ্রম কমেছে, ব্যয় কমেছে, উৎপাদন বেড়েছে, কৃষকরা লাভমান হচ্ছেন। কৃষি যান্ত্রিকীকরণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আমরা এখান থেকে মৌলভীবাজারের সকল কৃষককে উৎসাহিত করার চেষ্টা করছি।
কৃষি বিভাগ জানায়- আমন ধান চাষে এ বছর অনুকুল পরিবেশ ও পোকা মাকড়ের আক্রমন কম থাকায় বাম্পার ফলন হয়েছে। পাশাপাশি খামার যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে প্রতিবছর অনাবাদি জমিতে চাষাবাদ ও উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে।