সুরমার ঢেউ সংবাদ :: রাজশাহী অঞ্চলে শিশুশ্রম ও বাল্যবিবাহ বেশী সিলেট অঞ্চলে কম।
করোনা মহামারির মধ্যে ২০২১ সালে দেশের ১১ হাজার ৬৭৯টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বার্ষিক পরীক্ষায় অংশ নেয়নি প্রায় ৪ লাখ ৮১ হাজার ৫৫ জন শিক্ষার্থী। বাল্যবিয়ে হয়েছে ৪৭ হাজার ৪১৪ শিক্ষার্থীর। এ সময় শিশুশ্রমে যুক্ত হয়েছে ৭৭ হাজার ৭০৬ জন। বাকিদের অনুপস্থিতির সুনির্দিষ্ট কারণ জানা যায়নি।
১৫ আগষ্ট সোমবার গণমাধ্যমে পাঠানো মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের মনিটরিং অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশন উইংয়ের প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদনটি তৈরি করতে মাউশির পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন শাখা দেশের ১১ হাজার ৬৭৯টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ২০২১ সালের তথ্য সংগ্রহ করেছে। বর্তমানে দেশে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে মোট মাধ্যমিক বিদ্যালয় আছে ২০ হাজার ২৯৪টি। মাউশি দেশের সব বিদ্যালয়ের কাছেই তথ্য চেয়েছিল। সেই হিসাবে তথ্য পাঠায়নি ৮ হাজার ৬১৫টি প্রতিষ্ঠান।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ১১ হাজার ৬৭৯টি প্রতিষ্ঠানের প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালে মাধ্যমিক পর্যায়ে ভর্তি শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৬৫ লাখ ৫৬ হাজার ৫৩৬ জন। এর মধ্যে বালক ২৯ লাখ ৬২ হাজার ৪৬ জন এবং বালিকা ৩৫ লাখ ৯৪ হাজার ৪৯১ জন। ২০২১ সালে মাধ্যমিক পর্যায়ে ভর্তি শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৬৬ লাখ ৪৯ হাজার ৫৩৮ জন। এর মধ্যে বালক ৩০ লাখ ২১ হাজার ২৩৩ জন এবং বালিকা ৩৬ লাখ ২৮ হাজার ৩০৫ জন। প্রাপ্ত তথ্যে কোভিড-১৯ অতিমারির মধ্যে ২০২০ সালের তুলানায় মোট শিক্ষার্থী বেড়েছে ৯৩ হাজার ২ জন।
এতে বলা হয়, ২০২১ সালের বার্ষিক পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে ৬১ লাখ ৬৮ হাজার ৪৮৩ জন শিক্ষার্থী। এদের মধ্যে বালক ২৮ লাখ ৫ হাজার ৭৯১ জন এবং বালিকা ৩৩ লাখ ৬২ হাজার ৬৯২ জন। পরীক্ষায় অনুপস্থিত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৪ লাখ ৮১ হাজার ৫৫ জন, যা মোট শিক্ষার্থীর ৭ দশমিক ২৩ শতাংশ। তাদের মধ্যে প্রায় ১০ শতাংশ শিক্ষার্থী বাল্যবিবাহ ও ১৬ দশমিক ১৫ শতাংশ শিশুশ্রমে যুক্ত হওয়ায় বার্ষিক পরীক্ষায় অনুপস্থিত ছিল। তথ্য অনুযায়ী, বাল্যবিয়ের কারণে ৪৭ হাজার ৪১৪ জন পরীক্ষায় অনুপস্থিত, শিশুশ্রমে যুক্ত হওয়ার কারণে পরীক্ষায় অংশ নেয়নি ৭৭ হাজার ৭০৬ জন এবং অন্যান্য কারণে অংশ নেয়নি ৩ লাখ ৫৫ হাজার ৯৩৫ জন শিক্ষার্থী।
দেশে মাউশির নয়টি আঞ্চলিক কার্যালয় রয়েছে। মাউশির প্রতিবেদন বলছে, বার্ষিক পরীক্ষায় ময়মনসিংহ অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের অনুপস্থিতির হার (৮ দশমিক ৯৩ শতাংশ) বেশি, বরিশাল অঞ্চলে অনুপস্থিতির হার সবচেয়ে কম (৬ দশমিক ৬২ শতাংশ)।
বাল্যবিবাহের কারণে অনুপস্থিতির হার সবচেয়ে বেশি রাজশাহী অঞ্চলে (১৫ দশমিক ৮২ শতাংশ), সবচেয়ে কম সিলেট অঞ্চলে (৪ দশমিক ৩০ শতাংশ)। শিশুশ্রমে যুক্ত শিক্ষার্থীও রাজশাহী অঞ্চলে বেশি। এ কারণে এই অঞ্চলে প্রায় ১৯ শতাংশ শিক্ষার্থী বার্ষিক পরীক্ষায় অনুপস্থিত ছিল। কম চট্টগ্রাম অঞ্চলে (প্রায় ১৩ শতাংশ)।
২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে করোনার রোগী শনাক্ত হলে ওই বছর ১৭ মার্চ থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সশরীরে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ করে দেওয়া হয়। একটানা প্রায় ১৮ মাস শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের পর ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে স্বশরীর ক্লাস শুরু করা হয়। করোনায় বার্ষিক পরীক্ষায় অনুপস্থিতির এই চিত্রের বিপরীতে কোনও সুপারিশ তুলে ধরা হয়নি মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের পাঠানো প্রতিবেদনে।