সুরমার ঢেউ বিনোদন :: মৌলভীবাজার জেলা যন্ত্রসঙ্গীত উৎসবে সুরের মুর্ছনায় বিমোহিত হলেন দর্শক-শ্রোতা। মৌলভীবাজার জেলা শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে একাডেমির মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত জেলা যন্ত্রসঙ্গীত উৎসবে এমনই ছিলো সুরের যাদুময়ী মুর্ছনা। ২৯ জুলাই শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় সরোদ পরিবেশনায় ছিলেন দুই সরোদ শিল্পী ইশরাত ফুলঝুরি খান ও ইলহাম ফুলঝুরি খান। সেতারের বৈচিত্রময় সুর পরিবেশনায় ছিলেন বিখ্যাত সেতারবাদক এবাদুল হক সৈকত। সেইসাথে খ্যাতিমান যন্ত্রশিল্পীদের গিটার, সেতার, সরোদ, বেহালা, ঢোল, মৃদঙ্গ, মাদল, দোতারাসহ বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্রের সুরের মুর্ছনায় মুখরিত হয়ে উঠেছিল জেলা শিল্পকলা একাডেমির মিলনায়তন। মৌলভীবাজার জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক এম এমদাদুল হক মিন্টুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ যন্ত্রসঙ্গীত উৎসবে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান।
‘নতুন প্রজন্মের অনীহার কারণে হারিয়ে যেতে বসেছে অনেক বাদ্যযন্ত্র। হারিয়ে যাচ্ছে দেশীয় বাদ্যযন্ত্র। এ অবস্থায় বাদ্যযন্ত্রের প্রতি তরুণদের আগ্রহী করে তুলতেই আয়োজন করা হয় ‘জেলা যন্ত্রসঙ্গীত উৎসব’। প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মাধ্যমে উৎসবের সূচনা শেষে উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মোহাম্মদ জাহিদ আখতার। এতে সাংস্কৃতিক সংগঠক ডা. এম এ আহাদ, জাতীয় রবীন্দ্র সঙ্গীত সম্মিলন পরিষদ মৌলভীবাজার’র সভাপতি ডা. দিলশাদ পারভিন, আলোকধারা সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মুনিম আহমদ রিমন, বিটিভির জেলা প্রতিনিধি ও আই নিউজের সম্পাদক হাসানাত কামাল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এরপর শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে দশদিনব্যাপী গিটার প্রশিক্ষণের সমাপনী অনুষ্ঠানে ১৫ জন শিক্ষার্থী তাদের পরিবেশনা উপস্থাপন করে। এ পরিবেশনা পরিচালনা করেন গিটার প্রশিক্ষক নিউটন বিশ্বজিৎ দেব। পরে প্রধান অতিথি জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান তাদের মাঝে সনদ বিতরণ করেন।
পরবর্তীতে পরিবেশিত হয় বিভিন্ন যন্ত্রের সুরের পরিবেশনা। গীটারে সুর তোলেন নিউটন দেব। কীবোর্ডে কাজল মল্লিক ও অর্পিতা সূত্রধর। মৃদঙ্গ পরিবেশন করেন বিধান চন্দ্র সিংহ ও তার দল। দোতারা ও বেহালা পরিবেশন করেন এসডি শান্ত ও তার দল। তবলা পরিবেশন করেন ওস্তাদ রামগোপাল দাশ ও তার দল। ঢাকা থেকে আগত আমন্ত্রিত শিল্পী এবাদুল হক সৈকত সেতার বাজিয়ে শ্রোতাদের মুগ্ধ করেন। সরোদ বাজিয়ে দর্শকের মন জয় করেন উপমহাদেশের কিংবদন্তী শিল্পী উস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁনের নাতনি- এ প্রজন্মের দুই তরুণ শিল্পী ইসরা ফুলঝুরি খান ও ইলহাম ফুলঝুরি খান। সবশেষে সমাপনী বক্তব্য দেন শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক এম এমদাদুল হক মিন্টু। অনুষ্ঠানে অনেক সঙ্গীতপিপাসু সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, দর্শক, সরকারী-বেসরকারী কর্মকর্তা, শিক্ষক এবং প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। আবৃত্তি প্রশিক্ষক সুশিপ্তা দাশের সঞ্চালনায় পুরো অনুষ্ঠানটির সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন জেলা কালচারাল অফিসার জ্যোতি সিনহা।
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি প্রতিবছর যন্ত্রসঙ্গীত উৎসব আয়োজন করে থাকে। এ বছরই প্রথম প্রত্যেকটি জেলায় এ যন্ত্রসঙ্গীত উৎসব আয়োজন করা হচ্ছে। এতে অর্থায়ন করছে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। আমরা চাই এটি অব্যাহত থাকুক এবং নতুন প্রজন্ম এর সাথে পরিচিত হোক। তারা এ যন্ত্রসঙ্গীতকে ভালোবাসুক। শুধু সময়কে ধরে রাখতে হবে এজন্য পুরোনোকে ফেলা যাবে না, নতুনকেও বর্জন করা যাবেনা। এখন আমাদেরকে সামনে এগিয়ে যেতে হবে সবকিছুর সমন্বয়ে, বলেছেন জ্যোতি সিনহা।