জুড়ী (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি :: এশিয়ার অন্যতম ও দেশের সবচেয়ে বড় হাওর হাকালুকিতে আবারও ধরা পড়ছে রূপালি ইলিশ। গেলো কয়েকদিন থেকে স্থানীয় কয়েকটি বাজারে অন্যান্য মাছের সাথে পাওয়া যাচ্ছে হাকালুকির মাঝারি ও ছোট ইলিশ।
জানা গেছে, ২০১৭ সালের ভয়াবহ বন্যা ও দীর্ঘ স্থায়ী জলাবদ্ধতার পর হাকালুকি তার আপন গতিবা স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরা নিয়ে সংশ্লিষ্টদের উদ্বেগ উৎকন্ঠার শেষ ছিলো না। কারণ, ওই বছরের ভয়াবহ আকস্মিক বন্যা ও দীর্ঘ স্থায়ী জলাবদ্ধতায় বোরো ধান পঁচে পানি দূষিত হয়ে হাওরের মাছ, হাঁস, জলপ্রাণি ও উদ্ভিদ মারা যায়। এমন দূর্দিন যাওয়ার পর হাকালুকি তার গতি প্রকৃতিতে ফেরা নিয়ে দেখা দেয় দুশ্চিন্তা। কিন্তু সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে হাকালুকি ফেরে তার চিরচেনা স্বরূপে। ওই বছরের শেষের দিকে হাকালুকি হাওরে আশানুরূপ উৎপাদন হয় মাছ, উদ্ভিদ ও জলজ প্রাণির। কিন্তু হাওরের বিলগুলোর নাব্য হ্রাসসহ নানা সমস্যার কারণে ধীরে ধীরে হারাতে বসে তার ঐতিহ্য। বিশেষ করে অবাধে পোনা ও মা মাছ নিধন। নানা কৌঁশলে সেঁচ দিয়ে মাছ ধরা। মৎস্য বিভাগের তরফে সময়ে হাওরে পোনা ছাড়া। আর হাওরের প্রকৃতি ও জীব বৈচিত্র্য উজাড় এ যেন স্থানীয়দের নিত্য দিনের কর্মযোগ্য। নানা কারণে এখন ধ্বংসের দোড় গোড়ায় হাকালুকি। নাব্য হ্রাসের কারণে এখন বোরো হাওরে বর্ষায় ধারণ ক্ষমতার উপর থৈ থৈ পানি আর শুষ্ক মৌসুমে পানি হীনধূধূ মরুভূমি। এ কারণে চরম ঝুঁকিতে হাওরের মিঠা পানির মাছসহ নানা প্রজাতির জীব বৈচিত্র।
ইতোমধ্যেই হারিয়ে গেছে নানা জাতের দেশীয় মাছ, জলপ্রাণি ও উদ্ভিদ। বিশেষ করে রাণী, আইড়, শউল, গজার, বাঘাগুতুম ও ইলিশ মাছ ছিল হাকালুকি হাওরের ঐতিহ্য। একসময় সুস্বাদু এ মাছগুলো সবসময় হাওরে জেলেদের জালে ধরা পড়তো। কালের পরিক্রমায় এখন যেনো তা অনেকটাই বিলুপ্ত। গেলো কয়েক বছর থেকে অল্প করে হলে ও হাকালুকি হাওরে জেলেদের জালে ধরা পড়ছে ইলিশ। এ বছর গেলো কয়েকদিন থেকে অন্যান্য বছরের চাইতে বেশি ধরা পড়ছে ইলিশ। র্দীঘদিন পর ইলিশ উৎপাদনে হাকালুকি হাওর ঐতিহ্য পথে ফেরায় বেজায় খুশি সংশ্লিষ্টরা। অন্যান্য বছর মাঝে মধ্যে ইলিশের দেখা মিললেও এই বছরতা বেড়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় মৎস্য বিভাগ ও হাওরপাড়ের জেলেরা। হাকালুকি হাওরের আশ-পাশের বাজারগুলোতে মাঝারি এবং ছোট সাইজের ইলিশ অন্যান্য মাছের সাথে বিক্রি করছেন স্থানীয় মাছ বিক্রে তারা। জেলেরা জানান, এ ইলিশ সাগরের ইলিশের মতো ঘ্রাণ কিংবা স্বাদ না হলেও ক্রেতাদের চাহিদা প্রচুর। দামও পাওয়া যায় ভালো। জুড়ী উপজেলার তেঘরিঘাট, কন্টিনালা, নয়াগ্রাম, খালের মুখ, খাগটেকা এলাকায় হাকালুকি হাওরের মাছ বিক্রেতাদের কাছে গেলো কদিন থেকে মিলছে ইলিশ। বিক্রেতারা জানান, হাওরের ভাসমান পানিতে এখন জেলেদের জালে ধরা পড়ছে ইলিশ। ওই স্থানের মাছ বিক্রেতারা জানান, জেলেরা হাকালুকি হাওরের অন্যান্য মাছের সাথে তাদের কাছে ইলিশও বিক্রি করছেন।
‘হাওর বাচাঁও, কৃষকবাঁচাও’ সংগ্রাম কমিটির কেন্দ্রীয় সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজ উদ্দিন আহমদ বাদশা জানান, আগে সবসময়ই হাকালুকি হাওর ও কুশিয়ারা নদীতে বড় বড় ইলিশ ধরা পড়তো। বুড়িকেয়ারী বাঁধ হবার পর ইলিশের উৎপাদন হচ্ছেনা। বুড়িকেয়ারী বাঁধ অপসারন ও নদী হাওরের বিলগুলো খনন হলে রক্ষা পেতো মহাহুমকিতে থাকা নানা প্রজাতির জীব বৈচিত্র। বৃদ্ধি পেতো ইলিশসহ অন্যান্য মাছের উৎপাদন।