সুরমার ঢেউ সংবাদ :: মৌলভীবাজার জেলার জুড়ী উপজেলার পূর্বজুড়ী ইউনিয়নস্থিত পূর্ব গোয়ালবাড়ি গ্রামে বিদ্যুৎলাইন ছিড়ে ঘরের চালে পড়ে সংঘটিত অগ্নিকান্ডে দিনমজুর পরিবারের স্বামী-স্ত্রী, ২ কন্যা ও ১ শিশুপুত্র নিহত এবং সর্বকণিষ্ট শিশুকন্যা গুরুতর আহত হয়েছেন। আহত শিশুকন্যা সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটেছে ২৬ মার্চ মঙ্গলবার মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের সেহরির পর ভোর ৪টা ৫০ মিনিটে। নিহতরা হলেন- গৃহকর্তা দিনমজুর ফয়জুর রহমান (৫২), তার স্ত্রী শিরিন বেগম (৪৫), বড় মেয়ে সামিয়া (১৬), মেঝ মেয়ে সাবিনা (১৩) ও একমাত্র পুত্র সায়েম (৮)। গুরুতর আহত সর্বকণিষ্ট কন্যা সোনিয়া (৬)। এদিনই বিকেল ৪টায় নিজ এলাকায় নিহতদের জানাযা শেষে পাশাপাশি পৃথক ৫টি কবরে দাফন করা হয়। তাদের এমন মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। জুড়ী উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৫০ হাজার টাকা প্রদান করা হয়েছে। নিহত ফয়জুর রহমান একজন বাক্ প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ছিলেন। তিনি ঠেলাগাড়ি চালিয়ে ও পার্শ¦বর্তী ইন্তাজ আলী উচ্চ বিদ্যালয়ে নৈশ প্রহরীর কাজ করে কোনরকমে সংসার চালাতেন।
জানা গেেছ- সেহরির পরে ঝড় শুরু হলে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু হলে ঘরের উপর দিয়ে যাওয়া পল্লী বিদ্যুতের ১১ হাজার কেভি সঞ্চালন লাইনের একটি তার ছিড়ে ঘরের টিনের চালে পড়ে বিকট শব্দে আগুন লেগে মুহুর্তের মধ্যে ঘরটি পুড়ে যায়। আগুনে পুড়ে ৬ সদস্যের পরিবারের ৫ সদস্য নিহত এবং ১ সদস্য গুরুতর আহত হন। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌছে আগুন নিয়ন্ত্রনে আনে এবং নিহত ৫ জনের লাশ উদ্ধার এবং গুরুত্বর আহত শিশুকন্যাকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করে।
ঘটনার পর পুলিশ সুপার মোঃ মনজুর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সারোআর আলম, জুড়ী উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা এমএ মোঈদ ফারুক, জুড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার লুসিকান্ত হাজং, জুড়ী থানার ওসি এস এম মাইন উদ্দিনসহ প্রশাসনের কর্মকর্তা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এসময় পুলিশ সুপার বলেন- এটি একটি মর্মান্তিক ঘটনা। আমার মনে হয় একসাথে একই পরিবারের ৫ জনের মৃত্যু মৌলভীবাজার জেলায় একটি বড় ঘটনা। এ ঘটনায় পল্লী বিদ্যুতের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। থানা পুলিশ ও বিট পুলিশিং এর মাধ্যমে এ ধরনের ঘটনা এড়াতে সচেতনতামূলক সভা করাসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ ঘটনায় অপমৃত্যু মামলা হবে। নিহতদের পরিবারের একটি শিশুকন্যা বেঁচে আছে। শিশুকন্যাটিকে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে আর্থিক সহযোগিতা করা হবে।
পূর্বজুড়ী ইউপি চেয়ারম্যান রুয়েল উদ্দিন জানান- নিহত ফয়জুর রহমান একজন বাক প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ছিলেন। তিনিসহ তার পরিবারের ৫ জন ঘটনাস্থলেই নিহতের ঘটনাটি খুবই মর্মান্তিক। পল্লী বিদ্যুতের অবহেলার কারণে ঘটনাটি ঘটেছে। মানুষের বসতবাড়ীর উপর দিয়ে যাওয়া পল্লী বিদ্যুতের সঞ্চালন লাইন সরানো না হলে এ ধরনের ঘটনা আরও ঘটতে পারে।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে পল্লী বিদ্যুৎ মৌলভীবাজার কার্যালয়ের মহাব্যবস্থাপক এ.বি.এম মিজানুর রহমান বলেন- একই পরিবারের জন নিহতের ঘটনায় আমরা শোকাহত। এ ঘটনায় আহত চিকিৎসাধীন শিশুকন্যার চিকিৎসায় আমরা পাশে থাকব।