সুরমার ঢেউ সংবাদ :: ৭ অক্টোবর ২০২০ সাল বুধবার বিকেল সাড়ে ৫টা। দিল্লি থেকে ইন্ডিগো এয়ারলাইনসের একটি বিমান বেঙ্গালুরুর পথে যাত্রা করে। উড্ডয়নের কিছুক্ষণ পরেই বিমানটির একজন ক্রু জরুরি ঘোষণা দেন- ‘একজন নারী যাত্রী প্রসব বেদনায় কষ্ট পাচ্ছেন। বিমানে কোনো চিকিৎসক উপস্থিত থাকলে তাঁর সাহায্য একান্ত প্রয়োজন’। বিমানযাত্রী ডা. সাইলজা এগিয়ে আসেন। ক্রু এবং অন্যদের সাহায্যে বিমানের ওয়াশরুমে নারী যাত্রীটিকে সন্তান প্রসবে সাহায্য করেন। পুরো সময় বিমানের অন্য যাত্রীরা নীরব, উদ্বিগ্ন এবং অনেকটা দম বন্ধ করে অপেক্ষা করছিলেন। এরপর আবারও ক্রু মাইক্রোফোনে ঘোষণা দিলেন- ‘নবজাতক ও তার মা ভালো আছেন’। যাত্রীদের আনন্দের উষ্ণ করতালিতে আকাশে দ্রুতগতিতে ছুটে চলা বিমানটি মুখর হয়েছিল সেদিন।
রোগ বা প্রসবসংক্রান্ত জটিলতা না থাকলে অন্তঃসত্ত্বা নারীদের গর্ভাবস্থার ৩৬তম সপ্তাহ বা পাঁচ মাস পর্যন্ত বিমান ভ্রমণে সাধারণত কোনো বাধার সম্মুখীন হতে হয়না। তবে কিছু এয়ারলাইনস গর্ভাবস্থার শেষের দিকে নারী যাত্রীদের বহন করতে গড়িমসি করে এবং চিকিৎসকের লিখিত নিশ্চয়তাপত্র দাবি করে; অর্থাৎ চিকিৎসক নিশ্চিত করবেন যে যাত্রাপথে সন্তান প্রসবের কোনো সম্ভাবনা নেই। গর্ভাবস্থার শেষের দিকে নারী যাত্রীদের জন্য বিমান ভ্রমণে কোনো আইনি নিষেধাজ্ঞা নেই। তবে, এ সময়ে চিকিৎসকেরা দীর্ঘ পথে ভ্রমণ থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এরপরও দিল্লি থেকে বেঙ্গালুরুর ফ্লাইটের মতো ঘটনা ঘটে এবং ‘বিমানে সন্তান প্রসব’ শীর্ষক শিরোনামে সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়। অনেক এয়ারলাইনস নিজেদের প্রচারের এ সুযোগ মোটেই হাতছাড়া করতে চায়না। প্রায়ই তারা ঘটা করে ঘোষণা দেয় যে, নবজাতক আজীবন তাদের বিমানে বিনা অর্থ ব্যয়ে ভ্রমণ করতে পারবে।
ভূমি ছেড়ে আকাশের কোলে জন্ম নেয়া বিরল হলেও নজিরবিহীন নয়। ‘জার্নাল অব ট্রাভেল’ পত্রিকায় ২০১৯ সালে প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় উল্লেখ করা হয়েছে, ১৯২৯ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত এ ৮৯ বছরে আকাশে উড়ন্ত বিমানে জন্ম নিয়েছে মোট ৭৪টি মানবসন্তান।
অনেকেই প্রশ্ন তোলেন- উড়ন্ত বিমানে জন্ম নেয়া নবজাতকের জন্মস্থান কোথায় এবং তার জাতীয়তা কী হবে ? জন্মস্থান নির্ধারণ সংক্রান্ত ১৯৬১ কনভেনশন বা চুক্তি অনুসারে আন্তর্জাতিক জল বা আকাশসীমায় কোন জাহাজ বা বিমানে মানবসন্তান জন্ম নিলে সেই জাহাজ বা বিমানের নিবন্ধনের দেশকে তার জন্মস্থান হিসেবে গণ্য করতে হবে। তবে, শিশুর জাতীয়তা নির্ধারণ নির্ভর করে একেক দেশের জাতীয়তা সংক্রান্ত আইনের ওপর। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই নবজাতকের জাতীয়তা পিতা-মাতার জাতীয়তা দিয়ে নির্ধারণ করা হয়। বিমান ভ্রমণ নিরাপদ ও আরামদায়ক। তারপরও গর্ভবতী নারীরা বিমান ভ্রমণের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ বা নির্দেশ মেনে খানিকটা পূর্বপ্রস্তুতি নিয়ে রাখলে অপ্রত্যাশিত অভিজ্ঞতা এড়ানো সম্ভব।