সুরমার ঢেউ সংবাদ :: বার বার অভিযুক্ত তালুকদার এন্টারপ্রাইজের সাথেই কুশিয়ারা নদীর বালু উত্তোলন চুক্তি করেছে মৌলভীবাজার পাউবো। আর, এ চুক্তির সুযোগে কুশিয়ারা নদীর প্রায় ৩০ কিলোমিটার এলাকার বালু অবৈধভাবে বিক্রি করে প্রতি মাসে প্রায় ২ কোটি ৪০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে তালুকদার এন্টারপ্রাইজ। মৌলভীবাজার সদর ও রাজনগর উপজেলার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া কুশিয়ারা নদী পাড়ের ঘর-বাড়ি ভাঙ্গন ও জেলে সম্প্রদায়ের মৎস আহরণে বাঁধা সৃষ্টি করায় সম্প্রতি কয়েকদিন ধরে রাজনগর উপরজেলার ফতেপুর ইউপির জাহিদপুর গ্রামে একাধিক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। কদিন পূর্বে নদীতে পাতানো জাল ছিড়ে ফেলায় কয়েক দফা ট্রলার ভর্তি বালুসহ ট্রলার শ্রমকিদের আটকে রাখেন জেলেরা। উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় পুলিশ বিষয়টি মিটমাটের চেষ্টা করে। জনগনের রোসানলে পড়ে ওই ঠিকাদার জাহিদপুর থেকে সরিয়ে সম্প্রতি ভাটি এলাকার মনুমুখে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে সেই আগের মত ব্যক্তি মালিকানায় বালু বিক্রি করছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ১৭ জুন ২০১৭ সালে কালনী কুশিয়ারা ড্রেজিং প্রকল্পের আওতায় বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের ডিজাইন মোতাবেক কুশিয়ারা নদীর এলাইনমেন্টসহ নদীপাড়ের যাতে কোন রকম ক্ষয়ক্ষতি নাহয় তা অনুসরণ পূর্বক খনন কাজ করতে তালুকদার এন্টারপ্রাইজের স্বত্ত্বাধিকারী আশরাফ উদ্দিনের সাথে চুক্তি করে মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ড। চুক্তিতে বলা হয়, খননকৃত বালু শুধুমাত্র মৌলভীবাজার সদর উপজেলাধীন শ্রীহট্র অর্থনৈতিক জোনের ভূমি উন্নয়ন কাজে ব্যবহৃত হবে। ওই প্রতিষ্ঠানের মালিক চুক্তিটিকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে কুশিয়ারার জাহিদপুর থেকে দীর্ঘ ৩ বছর যাবৎ বালু তুলে উজানে ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানে বিক্রি করেন। প্রতিদিন ১৫/২০টি করে ট্রলার বোঝাই বালু উজানে বিক্রি করেন চড়া দামে। বালু ক্রেতারা জানিয়েছেন, এক ট্রলার বালুর দাম সর্বনিম্ন ৪০ হাজার টাকা হলে ২০ ট্রলারের দাম পড়ে ৮ লাখ টাকা। এভাবে অবৈধভাবে প্রতিমাসে প্রায় ২ কোটি ৪০ লাখ টাকার বালু বিক্রি করছেতালুকদার এন্টারপ্রাইজ।
চুক্তিতে দেয়া মৌলভীবাজার সদরের শেরপুর থেকে রাজনগর উপজেলার হলদিগুল পর্যন্ত প্রায় ৩০ কিলোমিটার এলাকা যেন এখন সোনার খনি। নামে-বেনামে স্থানীয় নেতাদের সাথে হাত মিলিয়ে ওই ঠিকাদার অবৈধভাবে দেদারছে বালু বিক্রি করার অভিযোগ তার বিরুদ্ধে। এদিকে অবৈধভাবে বালু বিক্রির জন্য ২২ জুলাই শনিবার মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন স্থানীয় হারুনুর রশীদসহ শতাধিক ব্যক্তি। সরেজমিনে গিয়ে ড্রেজার চালকের সাথে কথা হয় যায়যায়দিন প্রতিনিধির। তিনি প্রথমে অস্বীকার করলেও পরে অবৈধপথে বালু পাচারের বিষয়টি স্বীকার করেন।
তালুকদার এন্টারপ্রাইজের স্বত্তাধিকারী আশরাফ উদ্দিন বলেন, তিনি শ্রীহট্র অর্থনৈতিক জোন ছাড়া কোথাও বালু বিক্রি করছেননা। মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রনেন্দ্র শংকর চক্রবর্ত্তী জানান, কুশিয়ারায় অবৈধ পথে বালু বিক্রির অভিযোগ এখনো পাইনি। শ্রীহট্র অর্থনৈতিক জোন ছাড়া অন্য কোথাও বালু বিক্রি করা হলে ওই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সচেতন মহলে প্রশ্ন উঠেছে, বার বার অভিযুক্ত তালুকদার এন্টারপ্রাইজের সাথেই মৌলভীবাজার পাউবো’র বালু উত্তোলন চুক্তি কার স্বার্থে ?