সুরমার ঢেউ সংবাদ :: আবারও বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী ব্যক্তি মালিকানাধীন দলই চা বাগান। দীর্ঘ ২২ দিন পর বুধবার চালু হবার নোটিশ টাঙানোর একদিন পর বৃহস্পতিবার আবারও কর্তৃপক্ষ বাগানটি বন্ধ ঘোষনা করায় চা শ্রমিকদের মাঝে অসন্তোষ বিরাজ করছে। গত বুধবার বাগান চালুর কথা থাকলেও সকাল থেকেই উত্তেজনা বিরাজ করছিল। বাগানের ব্যবস্থাপক পরিবর্তন না হওয়া ও বাগান চালুর নোটিশে শ্রমিকদের দায়ী করায় ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন শ্রমিকরা। বুধবার সকাল ১০টায় কোম্পানীর এজিএম বাগানে প্রবেশ করতে চাইলে শ্রমিকরা আপত্তি জানান। এসময় দুই নারী শ্রমিককে টানা হেচড়া করে লাঞ্চিত করায় গাড়ির গ্লাস ভাঙচুর করে টানা ৪ ঘন্টা এজিএম খালেদ খানকে অবরুদ্ধ করে রাখেন শ্রমিকরা। পরে প্রশাসনের নির্দেশে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের হস্তক্ষেপে শ্রমিকদের রাস্তা থেকে সরিয়ে ব্যবস্থাপক ও এজিএমকে পুলিশি সহায়তায় চা বাগান থেকে সরিয়ে নেয়া হয়।
জানা যায়, দীর্ঘ ২২ দিন পর গত বুধবার চা বাগান চালু নোটিশ দেয়া হলেও চা বাগান ব্যবস্থাপক আমিনুল ইসলামকে প্রত্যাহার না করে ম্যানেজমেন্ট নোটিশের শুরুতেই শ্রমিকদের বেআইনী আন্দোলনের ফলে বন্ধ হওয়ার কথা তুলে ধরায় শ্রমিকরা ক্ষুব্ধ হন। বুধবার সকাল থেকেই শ্রমিকরা বাগানের অফিসের সম্মুখে জড়ো হন। তারা ব্যবস্থাপকের অপসারণ দাবি করেন। তবে বেলা বাড়ার সাথে সাথে সকাল ১০ টায় কোম্পানীর এজিএম খালেদ খান গাড়ি নিয়ে বাগানে প্রবেশ করতে চান। এসময়ে শ্রমিকরা তাকে আপত্তি জানালে নারী শ্রমিক খোদেজা বেগম (৫৫) ও ফাতেমা বেগম (৫০) কে টানা হেচড়া করে গাড়িতে তোলার চেষ্টা করেন। পরে ক্ষুব্ধ শ্রমিকরা চা বাগানের এজিএম এর গাড়ির গ্লাস ভাঙচুর করেন ও এজিএম খালেদ খান ও ব্যবস্থাপক আমিনুল ইসলামকে অবরুদ্ধ করে রাখে। কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশে বেলা ১২টায় স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান পুষ্প কুমার কানু সরেজমিনে গিয়ে শ্রমিকদের রাস্তা থেকে সরিয়ে নিতে চেষ্টা করেন। পরে বেলা ২টায় শ্রমিকরা রাস্তা থেকে সরে গেলে কমলগঞ্জ থানা পুলিশের সহায়তায় এজিএম ও ব্যবস্থাপককে বাগান থেকে সরিয়ে নেয়া হয়।
চা বাগানের নারী শ্রমিক সবিতা মাদ্রাজী, রীনা রিকমুন, আচামা মাদ্রাজী, দ্বীনি ভূমি, স্বপ্না রিকমন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, গত ২২ দিন পর এজিএম বাগানে এসেই নারীদের গায়ে হাত তুলেছে। তাদের টানা হেচড়া করে গায়ের কাপড় ছিড়ে ফেলছে। এটি কোন মতেই সভ্য আচরণ নয়। তারা আরও বলেন, আমরা এখনও ধৈর্য্য ধরে আছি। আমরা কোন খারাপ আচরণ করিনি। আমাদের মা বোনদের লাঞ্চিত করেছে।
এদিকে টানা ২১ দিন চা বাগান বন্ধ থাকার পর সোমবার (১৭ আগস্ট) বিকালে ৪টায় মৌলভীবাজার-৪ আসনের সংসদ সদস্য উপাধ্যক্ষ ড. মো. আব্দুস শহীদ, জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান ও পুলিশ সুপার ফারুক আহমদ এর উপস্থিতিতে বেঠকের সিদ্ধান্তে ২৭ জুলাই সন্ধ্যায় পূর্বের দেয়া নোটিশ প্রত্যাহার করে বুধবার থেকে দলই চা বাগান খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠকের পর এদিন রাতেই দলই চা বাগান কোম্পানী বিতর্কিত ব্যবস্থাপক আমিনুল ইসলাম দলই চা বাগানে অনুপ্রবেশ করেন
অভিযোগ করে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ও কমলগঞ্জ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান রামভজন কৈরী জানান, দীর্ঘ ২১ দিন চা বাগান বন্ধ থাকার পর সাবেক চিফ হুইপ উপাধ্যক্ষ ড. মো. আব্দুস শহীদ এমপি’র উদোগে প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে সোমবার দলই চা বাগানে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে চা বাগান কর্তৃপক্ষের বে-আইনী নোটিশ প্রত্যাহার করে অবিলম্বে চা বাগান খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। একই সাথে চা শ্রমিকদের মজুরি ও বিতর্কিত ব্যবস্থাপক আমিনুল ইসলামের বিষয়টি পরবর্তীতে আলোচনাক্রমে সমাধানের সিদ্ধান্ত হয়। ব্যবস্থাপক আপাতত দলই চা বাগানের বাহিরে থেকে কোম্পানীর প্রধান কার্যালয়ে সংযুক্ত থাকারও সিদ্ধান্ত হয়। এসব সিদ্ধান্তে দলই চা বাগান কর্তৃপক্ষ ও চা শ্রমিকরা একমত হন। তবে গত সোমবার রাতের আঁধারে ব্যবস্থাপক আমিনুল ইসলাম দলই চা বাগানে পুলিশ প্রহরায় অনুপ্রবেশ, বুধবার এজিএম কর্তৃক দুই নারী শ্রমিককে লাঞ্চিত করার ঘটনা ও বৃহস্পতিবার আবারও বাগান বন্ধ ঘোষনা করায় শ্রমিকদের মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে। বিতর্কিত এ ব্যবস্থাপককে রাতের আঁধারে চা বাগানে প্রবেশ করিয়ে শ্রমিকদের উত্তেজিত করে নতুন করে সমস্যা সৃষ্টি করে চা শ্রমিকদের দায়ী করার পায়তারা করছে কোম্পানী। এ ব্যাপারে দলই চা বাগান ব্যবস্থাপক আমিনুল ইসলাম জানান, চা শ্রমিকরা বহিরাগতদের নিয়ে উচ্ছৃংখল আচরণ ও অস্থিতিশীল করে তুললে বৃহষ্পতিবার ফের দলই চা বাগান বন্ধ ঘোষনা করেন কর্তৃপক্ষ। তিনি আরো বলেন, একটি চক্র চা বাগানে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করছে। এটি মোটেও কাম্য নয়। কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার আশেকুল হক দলই চা বাগান বৃহস্পতিবার আবারও বন্ধ ঘোষনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, বাগানের পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক রয়েছে।