সুরমার ঢেউ সংবাদ :: বিভিন্ন প্রকল্পের প্রদর্শনীতে বরাদ্দকৃত টাকা, সার, বীজ ও অন্যান্য উপকরণ কৃষকদের মধ্যে বণ্টন না করে নিজেই আত্মসাৎ, প্রশিক্ষণ ও মাঠ প্রদর্শনীতে অনিয়ম, অধিকাংশ সময় ব্যক্তিগত কাজে সরকারি গাড়ি ব্যবহার, প্রায় দিনই সরকারি গাড়ি নিয়ে মৌলভীবাজার শহরে কেনাকাটা করেন স্ত্রী, তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করলেও চলমান প্রকল্পসমূহ, বরাদ্দ ও সুবিধাভোগী কৃষকদের তথ্য দেননি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে। এতোসব অনিয়ম ও দুর্নীতি করেও মৌলভীবাজার জেলার শ্রেষ্ঠ কৃষি অফিসার নির্বাচিত করা হয়েছে রাজনগর উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ রেজাউল করিমকে।
খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, কৃষি উন্নয়নের মাধ্যমে কৃষকের জীবনমান উন্নয়ন এবং গ্রামকে শহরে রূপান্তর করার জন্য নানা উদ্যোগ নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কৃষকদের কাছে সাশ্রয়ী মূল্যে কৃষিপণ্য পৌঁছে দিতে বড় অংকের ভর্তুকি দিচ্ছে সরকার। কৃষকদের চাষাবাদে আগ্রহ সৃষ্টির জন্য প্লট প্রদর্শনীতে বীজ, সার, ওষুধ ও নগদ অর্থও বরাদ্দ রয়েছে। কিন্তু, সরকারের এই মহতি উদ্যোগকে বাস্তবায়ন করছেন না রাজনগর উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ রেজাউল করিম। একটি দায়িত্বশীল সূত্র বলছে- জেলা অফিসে নানা সুবিধা প্রদানের বিনিময়েই তিনি শ্রেষ্ঠ কৃষি অফিসার নির্বাচিত হয়েছেন।
জানা যায়- চলমান প্রকল্পসমূহের মধ্যে আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে সিলেট অঞ্চলের কৃষি উন্নয়ন প্রকল্প ও কন্দাল ফসল উন্নয়ন প্রকল্পে পুকুর চুরি করেছেন ওই কর্মকর্তা। প্রকল্পে কী পরিমাণ বরাদ্দ সেটা তিনি অফিসের কাউকে অবগত করেননি। প্রদর্শনীর বরাদ্দ তিনি একাই দেখভাল করেন।
২০২২-২৩ অর্থবছরে আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে সিলেট অঞ্চলের কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের ক্রিপার প্রদর্শনীপ্রাপ্ত উত্তরভাগ ইউনিয়নের আব্দুল কালাম বলেন- ৫ জন কৃষককে একত্রে ১ বস্তা লাল সার, ৫ কেজি করে কালো সার, ২০ কেজি সাদা সার দেয়া হয়েছে। বীজ কেনার জন্য ২ হাজার ৫শ টাকা পেয়েছি। কিন্তু, জমি প্রস্তুত, আন্তঃপরিচর্যা কিংবা মাচা তৈরির জন্য কোনো টাকা পাইনি। টেংরা ইউনিয়নের লতি কচু প্রদর্শনীর কৃষক আছকান মিয়া বলেন- নগদ টাকা, সার ও ওষুধ কম দেয়ায় কৃষি অফিসারের সঙ্গে ঝগড়া করেছি। তারপরও বরাদ্দ অনুযায়ী পাইনি। কম দেয়ার কারণ জানতে চাইলে ওই কর্মকর্তা বলেন- বড় অফিসার না দিলে আমার কিছু করার নেই। পাঁচগাঁও ইউনিয়নের মরিচ প্রদর্শনীর কৃষক জয়নাল মিয়া বলেন- ২০ গ্রাম বীজ ও সবধরনের সার মিলিয়ে ১৫-২০ কেজির মতো পেয়েছি। নগদ টাকা পাইনি। কামারচাক ইউনিয়নের হলুদ প্রদর্শনীর কৃষক ওয়ারিশ মিয়া বলেন- ৫ মনের মতো বীজ ও বিভিন্ন ধরনের কিছু সার পেয়েছি। কিন্তু, নগদ টাকা পাইনি। রাজস্ব খাতে আমার স্ত্রীর নামে একটি প্রদর্শনী ছিল সেটা থেকে ১৫’শ টাকা পেয়েছি। টেংরা ইউনিয়নের চীনা বাদাম প্রদর্শনীর কৃষক কুতুব উদ্দিন বলেন- ১৫ কেজি বীজ ও ৩ ধরনের ৪০ কেজি সার পেয়েছি। কিন্তু, নগদ কোনো টাকা পাইনি। উত্তরভাগ ইউনিয়নের আদা প্রদর্শনীর সুয়েব আহমদ বলেন- কিছু সার দেয়া হয়েছিল। তবে এ মুহুর্তে পরিমাণ বলতে পারছিনা। নগদ টাকা পাইনি। কন্দাল ফসল প্রকল্পে মুখী কচু প্রদর্শনীর মনসুরনগর ইউনিয়নের তাহেরা বেগম বলেন- ১০ কেজি করে সার ও দেড় হাজার টাকা পেয়েছি। বীজ পাইনি। উত্তরভাগ ইউনিয়নের গাছ আলু প্রদর্শনীর কৃষক মাহমুদুল হক বলেন- ১ বস্তা বীজ, লাল, সাদা ও বড়ি সার ৩০ কেজি ও ২ হাজার টাকা পেয়েছি। একই অভিযোগ উপজেলার অন্যান্য প্রদর্শনীপ্রাপ্ত কৃষকদের।
পরিচয় গোপন রাখার শর্তে একজন উপ-সহকারী কৃষি অফিসার বলেন- ১টি মাঠ প্রদর্শনী করে ওই জায়গায় আরও ৩-৪টি ব্যানার লাগিয়ে ছবি তোলেন। সম্প্রতি একটি প্রশিক্ষণে কৃষি অফিসার তার বাসার কাজের বুয়ার নাম অন্তর্ভুক্ত করেছেন। জমি প্রস্তুত, আন্তঃপরিচর্যার টাকা কৃষকদেরকে না দেয়ার বিষয় স্বীকার করে অভিযুক্ত রাজনগর উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ রেজাউল করিম বলেন- কিছু দিনের মধ্যে দেয়া হবে। অর্থবছর তো শেষ হয়েছে তাহলে কেন কৃষকদেরকে টাকা দেয়া হয়নি- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন- টাকা উত্তোলন করে অফিসের একাউন্টে রেখেছি। কিছুদিনের মধ্যে দিয়ে দিব।
মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সামছুদ্দিন আহমেদ বলেন- তদন্ত করে অভিযোগ প্রমাণ হলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। সরকারি নির্দেশনা অমান্য, অনিয়ম ও দুর্নীতি করা সত্তেও তাকে কীভাবে শ্রেষ্ঠ নির্বাচিত করা হলো- এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজী হননি।