শ. ই. সরকার জবলু :: মৌলভীবাজারের সর্বজনশ্রদ্ধেয় সঙ্গীতশিল্পী ছায়া রায় আর নেই। ১৯ ফেব্রুয়ারি রোববার রাত ৮টা ১৪ মিনিটে শহরের লাইফ লাইন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিলো ৭৬ বছর। মৃত্যুকালে তিনি স্বামী, ১ পুত্র ও ১ কন্যাসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে- ছায়া রায় দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ্যতায় ভুগছিলেন এবং শহরের লাইফ লাইন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
নজরুল সঙ্গীত, উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত ও ক্ল্যাসিকাল গানের একজন গুণী শিল্পী ছায়া রায় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী ছিলেন। তিনি মৌলভীবাজারে ওস্তাদ গজেন্দ্রলাল সঙ্গীত সদন প্রতিষ্ঠা করেন। এ প্রতিষ্ঠানে তাঁর কাছ থেকে সঙ্গীতে তালিম নেন অসংখ্য সঙ্গীত শিক্ষার্থী। ১৯৬৭ সালে পুর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক সঙ্গীত প্রতিযোগীতায় তিনি উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতে প্রথম ও নজরুল সঙ্গীতে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেন। কণ্ঠের দ্যুতি, তাল, লয়ের শিল্পের জাদুতে জেতেন স্বর্ণপদক।
মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে স্বাধীন বাংলা বেতারের একজন শিল্পী হিসেবে দেশমাতৃকার জন্য অসামান্য ভূমিকা রাখেন তিনি। বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেতারের নিয়মিত শিল্পী ছিলেন। স্বর্গীয় গজেন্দ্র লাল রায় ও আশালতা রায়ের কন্যা ছায়া রায় ব্যক্তিগত জীবনে অ্যাডভোকেট মলয় ভূষণ রায়ের সহধর্মীনি। তার কন্যা অপরাজিতা রায় কেয়া মৌলভীবাজারের দি ফ্লাওয়ার্স কেজি এন্ড হাই স্কুলের শিক্ষক। ছেলে মানবেন্দ্র রায় মাদল হাইকোর্টের আইনজীবী। বরেণ্য এই শিল্পীর জন্ম ১৯৪৭ সালের ৩০ মার্চ। গত অর্ধ শতাব্দীর বেশি সময় এ নারী তার জীবন ব্যাপৃত রাখেন সুর ও সঙ্গীতের সাধনায়। সঙ্গীতের ভেতরে নিজের জীবনযাপন করা এই নারী নিজের নাম, পরিচয়, খ্যাতি, বিত্ত কোনটাই চাননি। বরং এসব জলাঞ্জলি দিয়ে তিনি শুরু থেকে শুদ্ধ সুর আর সংগীতকে প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার ব্রত নিয়েছিলেন। গত ৪৩ বছরে মৌলভীবাজার, সিলেটসহ দেশ-বিদেশে অসংখ্য শিল্পী গড়ে তুলেছেন তিনি।
সর্বজন শ্রদ্ধেয় প্রথিতযশা সঙ্গীতশিল্পী, স্বাধীন বাঙলা বেতার কেন্দ্রের কণ্ঠযোদ্ধা, বীর মুক্তিযোদ্ধা ছায়া রায়ের শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে ২০ ফেব্রুয়ারি। জেলার এ গুণী শিল্পীকে শেষ বিদায় জানান সংস্কৃতি কর্মী, শিল্পী, কুশলী সহ নানা স্তরের মানুষ। এর আগে সকালে স্থানীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে তাঁকে রাষ্ট্রীয় সম্মান দেয়া হয়। জাতীয় পতাকায় মোড়ানো হয় তাঁর কফিন। গার্ড অব অনার শেষে সৈয়ারপুর শশ্মানঘাটে শেষকৃত্য সম্পন্ন করা হয়। এর আগে তাঁকে ফুলেল শ্রদ্ধা জানান, বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন ও সর্বস্তরের জনতা। তাঁর মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমেছে মৌলভীবাজারের সাংস্কৃতিক অঙ্গণে।