সুরমার ঢেউ সংবাদ :: পুর্ব শত্রুতার জেরে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে একটি সংঘবদ্ধ গ্রুপ এ সস্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে।
এ ঘটনায় গুরুতর আহত পিতাপুত্রের পক্ষ থেকে থানায় মামলা দায়েরের ৯ দিন পেরিয়ে গেলেও পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করতে না পারায় জনমনে অসন্তোষ বিরাজ করছে। অপরদিকে, মামলাটি ধামাচাপা দিতে ঘটনায় জড়িতরা ওই পিতাপুত্র ও তাদের স্বজনদের বিরুদ্ধে থানায় কাউন্টার মামলা করে হয়রানীর চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
সরেজমিন ঘুরে এলাকাবাসী সুত্রে জানা যায়- মুনিয়ারপাড় গ্রামের আলঘাটায় গত ১৪ আগষ্ট আহমদ আলী (৪২) ও ছাদিক মিয়া (৩৪) নামে দুজন অটোরিক্সা চালকের মধ্যে যাত্রী তোলা নিয়ে কথাকাটাকাটি ও হাতাহাতি হলে, অন্যান্য আটোরিক্সা চালক বিষয়টি মিমাংসা করে দেন। তা সত্তেও অটোরিক্সা চালক ছাদিক মিয়া বিষয়টি একটি “হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে” জানালে, ১০/১৫ মিনিটের মধ্যেই ২০/২২ জনের একটি গ্রুপ দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রযোগে হামলা চালিয়ে আহমদ আলীকে গুরুতর
রক্তাক্ত জখম করে। এ খবর পেয়ে আহত আহমদ আলীর পুত্র ইমরান মিয়া (১৭) পিতাকে উদ্ধারে ঘটনাস্থলে গেলে, গ্রুপটি সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে তাকেও গুরুতর রক্তাক্ত জখম করে। পরিচয় গোপন রাখার শর্তে প্রত্যেক্ষদর্শী ৩ জন অটোরিক্সা চালক জানান- ছাদিক মিয়ার সাথে আসা সন্ত্রাসীদের হাতে রামদাসহ বিভিন্ন ধারালো অস্ত্র থাকায় তাদের চোখের সামনে পিতাপুত্রকে মেরে রাস্তায় ফেলে রাখা হলেও প্রানভয়ে তারা এগিয়ে যাবার সাহস করেননি। অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা তাদেরকে বিভিন্ন হুমকি-ধামকি দিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করার পর তারা গুরুতর আহত আহমদ আলী ও তার পুত্র ইমরানকে উদ্ধার করে প্রথমে মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। আহতদের অবস্থা আশংকাজনক থাকায় কর্তব্যরত ডাক্তার তাদেরকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন।
স্থানীয় সাংবাদিক ও শালিস ব্যক্তিত্ব আনন্দ টিভি’র জেলা প্রতিনিধি আব্দুল হাকিম রাজ জানান- তিনিসহ এলাকার কয়েকজন সালিশ ব্যক্তিত্ব চেয়েছিলেন যেহেতু জখমী ব্যক্তিরা অত্যন্ত গরীব, তাই বিষয়টিকে স্থানীয়ভাবে একটি বিচারের পরিবেশ তৈরি করে আহত ব্যক্তিদের সু-চিকিৎসার ব্যবস্থা করার। কিন্তু, হামলাকারীরা তা মানেনি। পরে ওইদিন সন্ধ্যায় আহতদের পক্ষে লুলু মিয়া বাদী হয়ে রাজনগর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
স্থানীয় সালিশ ব্যক্তিত্ব জয়নাল আবেদীন, ওয়ার্ড মেম্বার আব্দুস শহীদ চৌধুরী আমিনসহ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন জানান- হামলাকারীরা সবাই একই গোষ্ঠির লোক। তারা এলাকায় প্রভাব বিস্তারসহ জনমনে আতংক সৃষ্টি করতে একটি “হোয়াটসঅ্যাপ” গ্রুপ করে তাদের গোষ্ঠির প্রবাসীদের কাছ থেকে প্রায় কোটি টাকার একটি ফান্ড তৈরি করেছেন বলে এলাকার মানুসের মুখে মুখে শোনা যাচ্ছে। এমনকি ওই গ্রুপের কয়েকজনও এলাকায় প্রচার করছে তাদের ফান্ডের কথা। এ ফান্ড থেকেই তারা মামলা-মোকদ্দমার খরছ মিটায়।
এদিকে, আহতদের পক্ষে থানায় দায়েরকৃত মামলার বাদী লুলু মিয়া জানান- তার দায়েরকৃত মামলার তদন্ত করতে রাজনগর থানার এসআই রবিউল গত ১৫ আগষ্ট সরেজমিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ঘটনার সত্যতা পান এবং আহতদের ছবি নেন। এরপর ২/৩ দিন থানায় ধর্না দিলেও তিনি মামলা রেকর্ডে গড়িমসি করেন এবং একজন আসামীর নাম বাদ দিয়ে নতুন এজাহার দিতে চাপ সৃষ্টি করেন। পরে ১৭ আগষ্ট রাতে ওসি বিনয় ভুষন রায়কে বিষয়টি🎋 জানালে সাথে সাথে মামলাটি এফআইআর করা হয়। খবর পেয়ে ওইদিন রাতেই দুজন আসামী পালিয়ে বিদেশে চলে যায়।
বাদী লুলু মিয়া আরো জানান- তার মামলা ১৭ আগষ্ট রেকর্ড করার পর পুলিশ কয়েকদফা বিভিন্নস্থানে অভিযান চালিয়েও কোন আসামী গ্রেফতার করতে পারেনি। অপরদিকে, ১৯ আগষ্ট মামলাটি ধামাচাপা দিতে এবং তার চলাফেরা বন্ধ করতে আসামীপক্ষের গোষ্ঠির লোক, মামলাবাজ খ্যাত আব্দুল কাদির পাখি, মামলার বাদী লুলু মিয়াকে প্রধান আসামী করে ৭ জনের বিরুদ্ধে থানায় একটি মামলা দায়ের করে তাদেরকে হয়রানীর চেষ্টা করছে। এলাকাবাসী জানান- পাখি মিয়া একজন মামলাবাজ। আশপাশের কয়েকটি গ্রামের মানুষ কয়েক বছর ধরে তার মিথ্যা মামলায় হয়রানীর শিকার হচ্ছেন। কয়েকদিন আগে তার বাড়ির প্রাক্তন মেম্বার মৃতঃ আরব আলীর পুত্রদের বিরুদ্ধে থানায় পর পর ৩টি মিথ্যামামলা দিয়ে তাদের আর্থিক ক্ষতিসাধন করে। এর প্রতিবাদে ৩ গ্রামের মানুষ গত ২০ আগষ্ট রাতে মুনিয়ারপাড় গ্রামের জয়নাল মিয়ার বাড়িতে উঠান বৈঠক করে প্রতিবাদ জানান এবং বিভিন্ন দপ্তরে স্মারকলিপি প্রদানের সিদ্ধান্ত নেন। পাখি মিয়ার এসব মিথ্যামামলার প্রতিবাদে এলাকার লোকজন মানববন্ধন করারও প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে একটি সুত্র জানায়।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই হাসান জানান- ইতিমধ্যে পুলিশ আসামীদেরকে গ্রেফতারে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে কোন আসামী গ্রেফতার করা সম্ভব না হলেও পুলিশী অভিযান অব্যাহত আছে। ওসি বিনয় ভুষন জানান- বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে তদন্ত ও আসামী গ্রেফতারে পুলিশ সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে।