সুরমার ঢেউ সংবাদ :: কুলাউড়া উপজেলায় এক মাদ্রাসায় অফিস সহকারী থাকাবস্থায় আরেক মাদ্রাসায় সহ-সুপার পদে চাকুরী নেয়ার অভিযোগ উঠেছে, কাজী মোঃ রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে গত ৯ আগস্ট উপজেলা নির্বাহী অফিসার, জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন টিলাগাঁও ইউনিয়নের বিজলী গ্রামের বাসিন্দা মোঃ মশাহিদ আলী।
অপরদিকে, একই বিষয়ে অভিযোগ এনে গত ৪ আগস্ট ওই তিন কর্মকর্তা বরাবরে আরেকটি লিখিত অভিযোগ করেন পৃথিমপাশা ইউনিয়নের বাসিন্দা মোঃ ফরিদ উদ্দিন আহমদ- যার অনুলিপি মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও দুদক বরাবরে পাঠানো হয়েছে।
লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়- উপজেলার পৃথিমপাশা ইউনিয়নের রাজনগর গ্রামের বাসিন্দা মৃতঃ মোঃ ওয়াজীদ আলীর পুত্র কাজী মোঃ রফিকুল ইসলাম রবিরবাজার দারুচ্ছুন্নাহ ইসলামিয়া আলিম মাদ্রাসায় প্রায় ১৮-২০ বছর ধরে অফিস সহকারী হিসেবে চাকুরীরত- যার ইন্ডেক্স নম্বর এস-২০০২৩২১। এছাড়া ২০১২ সাল থেকে তিনি পৃথিমপাশা ইউনিয়নের নিকাহ ও তালাক রেজিস্টার (কাজী) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে একটি প্রভাবশালী মহলের মাধ্যমে সদ্য এমপিওভুক্ত গণকিয়া দাখিল মাদ্রাসায় অনৈতিকভাবে সহ-সুপার পদে নিয়োগ লাভ করেন- যা জানাজানি হলে বিভিন্ন মহলে নানা সমালোচনা শুরু হয়। অভিযোগকারী আরও উল্লেখ করেন- একটি মাদ্রাসায় ইন্ডেক্সধারী অফিস সহকারী থাকা সত্ত্বেও পুরনো নিয়োগ দেখিয়ে কিভাবে গনকিয়া দাখিল মাদ্রাসায় চাকুরী নেয়ায় এলাকায় বিভিন্ন মহলের লোকজন নানা প্রশ্ন তুলেছেন। নির্ভরযোগ্য আরেকটি সূত্র জানায়, ২০০২ সালে গনকিয়া দাখিল মাদ্রাসা প্রতিষ্টার সময় মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ সুপার, সহ-সুপারসহ বিভিন্ন পদে নিয়োগ দেয়। ওই সময় রফিকুল ইসলামকে সহ-সুপার পদে নিয়োগ দেয়া হয় বলে জানা গেছে। কিন্তু, তিনি সেখানে যোগদান না করে দারুচ্ছুন্নাহ ইসলামিয়া আলিম মাদ্রাসায় অফিস সহকারী হিসেবে যোগ দেন এবং সেখান থেকে বেতন-ভাতাসহ সকল প্রকার সুযোগ সুবিধা ভোগ করেন। গত জুন মাসে গনকিয়া দাখিল মাদ্রাসা এমপিওভুক্ত হলে, তিনি ওই প্রতিষ্ঠানে সহ-সুপার হিসেবে যোগদান করেন বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
অভিযুক্ত কাজী রফিকুল ইসলাম বলেন, সদ্য এমপিওভুক্ত হওয়ায় গনকিয়া মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ আমাকে সহ-সুপার পদে আবেদন করতে বলেন। সেই প্রেক্ষিতে আমার কাগজপত্র তাদের কাছে জমা দিয়েছি। তবে এখনো যোগদান করিনি। একই সাথে অফিস সহকারী ও সহ-সুপার পদে নিয়োগ লাভ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দারুচ্ছুন্নাহ মাদ্রাসার অফিস সহকারী পদ থেকে অব্যাহতিপত্র জমা দিয়েছি। ২০১২ সালে কাজী হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর থেকে অভিযোগকারী ওই দুই ব্যক্তি আমার বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র করে আসছেন।
দারুচ্ছুন্নাহ ইসলামিয়া আলিম মাদ্রাসা রবিরবাজার এর অধ্যক্ষ মোঃ আব্দুল জব্বার বলেন, ২০০৩ সাল থেকে রফিকুল ইসলাম আমাদের মাদ্রাসায় অফিস সহকারী হিসেবে কর্মরত আছেন। শুনেছি তিনি গনকিয়া মাদ্রাসায় সহ-সুপার হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন, তবে এখনো তিনি আমাদের মাদ্রাসা থেকে অব্যাহতি নেননি।
গনকিয়া দাখিল মাদ্রাসার সুপার মাওলানা আবু আইয়ুব আনসারী বলেন, আমি ২০১৯ সালে গনকিয়া দাখিল মাদ্রাসায় সুপার হিসেবে দায়িত্ব নেই। পূর্বের নিয়োগের বিষয়ে আমার জানা নেই। কাজী রফিকুল ইসলাম যেহেতু একটি মাদ্রাসায় অফিস সহকারী হিসেবে আছেন সেহেতু তাকে আমাদের মাদ্রাসায় সহ-সুপার পদে যাতে নিয়োগ না দেয়া হয় সেজন্য মাদ্রাসা ম্যানেজিং কমিটি আলোচনা করে একটি সিদ্ধান্ত নিবে।
মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ আনোয়ার বলেন, অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষে প্রতিবেদন ইউএনও’র কাছে জমা দেয়া হবে। পরবর্তীতে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মাহমুদুর রহমান খোন্দকার বলেন, এ বিষয়ে দুটি পৃথক লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগের তাই মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।