শ্রীমঙ্গলে মেয়ে ধর্ষণের বিচার দাবিতে প্রধানমন্ত্রী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা

শ্রীমঙ্গলে মেয়ে ধর্ষণের বিচার দাবিতে প্রধানমন্ত্রী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা

সুরমার ঢেউ সংবাদ :: মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলায় মেয়ে ধর্ষণের বিচার দাবিতে শ্রীমঙ্গল প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ধর্ষিতা মেয়ের মা ফাহিমা আক্তার।
লিখিত বক্তব্যে ফাহিমা আক্তার জানান- তিনি একজন স্বামী পরিত্যক্তা কর্মজীবী দরিদ্র মহিলা। ২০১৪ সালে স্বামী আলতাফ হোসেন নিজামের সাথে তার তালাক হয়। এরপর একমাত্র কন্যা আলিফা আক্তারকে নিয়ে তার বড়ভাই আব্দুল করিমের বাড়িতে আশ্রয় নেন। মেয়ের ভরণপোষন ও সংসার চালানোর তাগিদে ৫ম শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়ে আলিফাকে বড়ভাইয়ের জিম্মায় রেখে তিনি ঢাকার একটি গার্মেন্টসে চাকুরী নেন এবং প্রতিমাসে মেয়ের ভরণপোষন ও লেখাপড়ার জন্য ভাইয়ের কাছে টাকা পাঠাতে থাকেন। তিনি ঢাকা যাবার পর থেকেই তার মেয়েকে উত্যক্ত করত তার ভাইপো চাঁন মিয়া। তার বড়ভাই আব্দুল করিমকে তার মেয়ে বিষয়টি জানালে তিনি গুরুত্ব দেননি। একপর্যায়ে অতিষ্ট হয়ে তার মেয়ে বিষয়টি মোবাইল ফোনে তাকে জানালে তিনি শ্রীমঙ্গল এসে মেয়েকে ঢাকায় নিয়ে যান এবং তার বোনের বাসায় রেখে তাকে স্কুলে ভর্তি করেন।
এরপর ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে তিনি ওমান চলে যান এবং বোনের বাসায় থেকে তার মেয়ে লেখাপড়া চালিয়ে যেতে থাকে। ২০২১ সালের নভেম্বরের মাঝামাঝি তার মেয়ে বেড়ানোর উদ্দেশ্যে ঢাকা থেকে শ্রীমঙ্গলের সিক্কা গ্রামে তার বড় ভাই আব্দুল করিমের বাড়িতে আসে।
এসময় তার ভাইপো চাঁন মিয়া বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে আবারো তার মেয়েকে উত্ত্যক্ত করতে থাকে। এ অবস্থায় ২৪ নভেম্বর বিকেলে তার মেয়েকে বাসায় রেখে বড়ভাই আব্দুল করিমের পরিবারের সবাই পাশের গ্রামে বেড়াতে যায়। পরে রাত আনুমানিক ১০টার সময় চাঁন মিয়া বাড়ি ফিরে এসে তার মেয়েকে ধর্ষণ করে এবং মোবাইল ফোনে ধর্ষণের ভিডিও ধারণ করে হুমকি দেয় এ ঘটনা কাউকে জানালে ধারণকৃত ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেবে। ঘটনার পরপরই লোকলজ্জার ভয়ে আমার মেয়ে কাউকে কিছু না বলে দ্রুত ঢাকায় ফিরে মোবাইল ফোনে তাকে ঘটনাটি জানায়। তিনি ওমান থেকে তার বড়ভাই আব্দুল করিমকে ঘটনাটি জানিয়ে বিচারপ্রার্থী হলে তার বড়ভাই তাকে এ নিয়ে দুশ্চিন্তা না করতে বলেন এবং প্রতিশ্রুতি দেন তার ছেলের সাথে সামাজিকভাবে বিয়ে দেবেন। চলতি বছরের ২ জানুয়ারি চাকুরী ছেড়ে ওমান থেকে দেশে এসে তিনি তার বড়ভাইয়ের সাথে দেখা করে বিয়ের প্রতিশ্রুতির কথা বললে তিনি বলেন- তোমার মেয়ের চরিত্র খারাপ, তার সাথে আমার ছেলের বিয়ে দিবনা। বিষয়গুলো এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের জানালে তার ভাই ও ভাইয়ের ছেলেরা তার উপর চরমভাবে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। পরে তিনি তার বড়ভাই গংদের বিরুদ্ধে আদালতে একাধিক পিটিশন মামলা দায়ের করেন। এ কারনে বড়ভাই ও তার পুত্ররা তার উপর, তার মেয়ে ও তার মামলার স্বাক্ষীদের উপর চরমভাবে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। তারা মামলার স্বাক্ষীদের প্রকাশ্যে হুমকি দিতে থাকেন। বিষয়গুলো তিনি ও তার মামলার স্বাক্ষীরা স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের অবহিত করেন। এরই মাঝে গত ১৫ জুন সকাল অনুমান সাড়ে ১১টার দিকে বড়ভাই আব্দুল করিম, তার পুত্ররা এবং তার ভাড়াটিয়া লোকজন দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে তার দায়েরী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের মামলার স্বাক্ষী শাকিল মিয়ার বাড়িতে অনাধিকার প্রবেশ করে মারাত্মক হাড়ভাঙা জখম করেন। এসময় শাকিল মিয়ার স্ত্রী রুবিনা আক্তার স্বামীকে বাঁচাতে এগিয়ে আসলে তাকেও পিটিয়ে আহত ও তার কোলে থাকা ৪৫ দিনের শিশুকে ছিনিয়ে নিয়ে ছুঁড়ে ফেলে। এতে ৩ জনই গুরুতর আহত হন। আহতদের প্রথমে শ্রীমঙ্গল হাসপাতালে এবং সেখান থেকে মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। এ ঘটনায় শাকিল মিয়ার শ্বাশুড়ি রুজিনা বেগম শ্রীমঙ্গল থানায় মামলা দায়ের করেছেন। বড়ভাই আব্দুল করিম এলাকায় প্রভাবশালী ব্যক্তি।
তিনি ধনে-জনে বলিয়ান। ফলে, মেয়েসহ তিনি ও তার মামলার স্বাক্ষীদের জীবন বিপর্যস্থ অবস্থায়। তিনি আইন মান্যকারী, অসহায়, দরিদ্র ও স্বামী পরিত্যক্তা সংগ্রামী এক নারী। তার মেয়েকে ধর্ষণ, তার টাকা ও স্বর্ণালংকার আত্মসাৎ ও তার স্বাক্ষীর উপর সন্ত্রাসী হামলা করেই তিনি ক্ষান্ত হননি। এখন মামলাগুলো প্রত্যাহার করতে তাকে অব্যাহতভাবে হুমকি দিয়ে চলেছেন। আসামী চক্রের এ ধরণের হুমকিতে তিনি তটস্থ অবস্থায় রয়েছেন। মেয়েসহ তিনি ও তার মামলার স্বাক্ষীরা নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে দিনানিপাত করছেন। এমতাবস্থায় ফাহিমা আক্তার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *