সাবেক ছাত্রলীগ সভাপতি কর্তৃক শ্বাশুড়ির ভূমিদখলের ভিডিওবার্তার প্রতিবাদে স্ত্রীর সংবাদ সম্মেলন

সাবেক ছাত্রলীগ সভাপতি কর্তৃক শ্বাশুড়ির ভূমিদখলের ভিডিওবার্তার প্রতিবাদে স্ত্রীর সংবাদ সম্মেলন

সুরমার ঢেউ সংবাদ :: মৌলভীবাজার জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মোঃ জাকারিয়া কর্তৃক নিজ শ্বাশুরী রাজিয়া খানমের ভূমিদখল বিষয়ে সম্মন্ধী মোঃ রেজা হকের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম আইডিতে আপলোডকৃত শ্বাশুরী রাজিয়া খানমের ভিডিওবার্তার প্রতিবাদ জানিয়েছেন ছাত্রলীগের ওই সাবেক সভাপতি জাকারিয়ার স্ত্রী উম্মে সালমা হক সুমি। তিনি ২ অক্টোবর সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টায় মৌলভীবাজার প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ প্রতিবাদ জানান।
লিখিত বক্তব্যে সুমি জানান- গত ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমার মাতার একটি ভিডিওবার্তা ‘রেজা হক’ নামীয় আইডিতে প্রকাশিত হয়। ভিডিওবার্তাটি আমার ও আমার স্বামীকে রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার উদ্দেশ্যে প্রকাশ করা হয়েছে। আমি এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। তিনি বলেন- আমার স্বামী মৌলভীবাজার জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি, বর্তমানে জেলা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি পদপ্রার্থী। আমার স্বামী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার ডিজিটাল ও স্মার্ট বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রতিনিয়ত লড়াই করে যাচ্ছেন। আমার স্বামীর কার্যক্রমে ঈর্শ্বান্বিত হয়ে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ও শত্রু লোক আমার বয়োবৃদ্ধ মা’কে ভুল বুঝিয়ে ও প্রভাবিত করে দুরভিসন্ধিমূলক অসৎ ও বানোয়াট তথ্য দিয়ে আমার স্বামীর রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের ক্ষতি সাধিত হয় এমন বক্তব্য রেজা হক নামক ফেইসবুক আইডিতে প্রকাশ করা হয়।
ভিডিওতে বলা হয়েছে আমার স্বামী জায়গা দখল করে বসে আছে এবং জোর করে আমার কাছ থেকে জমি নিয়েছেন- যা সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমরা দুই ভাইবোন উত্তরাধিকার সূত্রে এই জায়গার মালিক হই। আমার ভাইয়ের জায়গা অন্যত্র বিক্রি করে দিলে আমার স্বামী ওই জায়গা ক্রয় করেন। পরবর্তীতে আমার নামীয় জায়গা আমার স্বামীর নামে দিয়ে দেই এবং এই জায়গা ব্যাংকে বন্ধক রেখে আমরা স্থাপনা তৈরি করেছি। আমি আমার স্বামী সন্তান এবং আমার মা’কে নিয়ে সুখে শান্তিতে বসবাস করছি এবং আমার বয়োবৃদ্ধ মায়ের অসুস্থ্যতার সুযোগ নিয়ে আমার স্বামীর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা তার ক্ষতিসাধন করার জন্য আমার মা’কে ব্যবহার করছে। রাজনৈতিকভাবে যারা আমার মা’কে ব্যবহার করছেন, সাংবাদিক ভাইদের মাধ্যমে আপনাদের কাছে বিনীত অনুরোধ আপনারা রাজনীতি করছেন করেন, দয়াকরে আমার পরিবারকে জড়িয়ে আমার জীবন ক্ষতিগ্রস্ত করবেননা।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত সুমির স্বামী ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মোঃ জাকারিয়া বলেন, আমি স্বেচ্ছাসেবকলীগ সভাপতি প্রার্থী হওয়ায় আমার শ্বাশুড়িকে ভুল বুঝিয়ে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ এ ভিডিওবার্তা প্রচার করেছে। কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দকে বিভ্রান্ত করতে আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার করা হয়েছে। এ ভিডিওবার্তা দিয়ে প্রতিপক্ষ আমার দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক ও সামাজিক অবস্থান ক্ষুন্ন করার চেষ্টা করছে। যেন আমি সভাপতি নির্বাচিত হতে না পারি। ভিডিওবার্তায় আমাকে যেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি করা না হয় সেটাই বারবার বলা হয়েছে। আমি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে- অভিযুক্ত ফেসবুক আইডির এডমিন রেজা হক হচ্ছেন উম্মে সালমা হক সুমির আপন বড়ভাই এবং রাজিয়া খানম হচ্ছেন তাদের মা- যিনি বয়োবৃদ্ধ হলেও সম্পূর্ণ সুস্থ্য ও শক্তসামর্থ। এর মানে, রেজা হক হচ্ছেন জাকারিয়ার সম্মন্ধী এবং রাজিয়া খানম হচ্ছেন শ্বাশুরী। কিন্তু, সংবাদ সম্মেলনে সুমি ও জাকারিয়া দুজনেই রেজা হকের পরিচয় ও তার সাথে তাদের সম্পর্কের বিষয়টি গোপন রেখেছেন।
সুমির বড়ভাই ও জাকারিয়ার সম্মন্ধী রেজা হক জানান- সংবাদ সম্মেলনে সুমি ও জাকারিয়া যা যা বলেছে তা মিথ্যা। ভিডিওবার্তায় আমার মা রাজিয়া খানম যা যা বলেছেন তা সত্যি। এ ভূমি আমাদের পিতা মৃতঃ আব্দুল হকের ত্যাজ্যবিত্ত নয়। এ ভূমির আমার মায়ের সম্পদ। মায়ের জীবদ্দশায় আমরা এ ভূমির উত্তরাধিকারী নই। যেখানে এ ভূমিতে আমার বা আমাদের মালিকানাই নেই, সেখানে আমি বিক্রি করবো কিভাবে ? জাকারিয়া সরকার দলীয় লোক হওয়ায় দলীয় প্রভাব খাটিয়ে বিভিন্ন পন্থায় তার নামে দলিল সৃষ্টি করে আমাদের মায়ের ভূমি দখল করে বসে আছে।
সুমির মা ও জাকারিয়ার শ্বাশুরী রাজিয়া খানম তার পুত্র রেজা হকের বক্তব্যের সত্যতা নিশ্চিত করে জানান- এ ভূমির মূল মালিক আমার মা মৃতঃ সামছুন্নাহার খানম ওরফে সামছুন্নাহার খাতুন। সামছুন্নাহার খানমের গর্ভজাত আমরা দুই বোনের মধ্যে আমি ছোট। আমাদের কোন ভাই নেই। মায়ের ত্যাজ্যবিত্তের উত্তরাধিকারী সূত্রে ও দানপত্র সূত্রে আমরা দুই বোন এ ভূমির মালিক। আমার অংশের ভূমিতে স্বামী আব্দুল হক, পুত্র রেজা ও কন্যা সুমিকে আমি বসবাসরত ছিলাম। সুমিকে বিয়ে দেয়ায় জাকারিয়ার জামাতা হবার সুবাদে আমার বাসায় অবস্থান নেয়। এরপর তলে তলে দলীয় প্রভাব খাটিয়ে বিভিন্ন পন্থায় তার নামে দলিল সৃষ্টি করে আমার ভূমি দখল করে বসে আছে। জাকারিয়াকে জায়গা দিয়ে দেয়াসহ সংবাদ সম্মেলনে দেয়া বক্তব্য পর্যন্ত সবকিছু করতে সুমিকে বাধ্য করা হয়েছে- যদিও তা প্রমান করা সময়সাপেক্ষ ও কষ্টসাধ্য। সুমি এমনিতেই জাকারিয়াকে জায়গা দিয়ে দেবে কেন ? নিশ্চয়ই কোন কারণ আছে। নিরাপত্তা ও সন্তানদের ভবিষ্যৎ বিবেচনায় সংসার রক্ষার স্বার্থে সুমি সরাসরি জাকারিয়ার বিরুদ্ধে কিছু বলবেনা, এটাই স্বাভাবিক। এ বিষয়টি সবাই কমবেশী বুঝতে পারবেন। দখল করে বসে আছে সন্দেহে জিজ্ঞাসাবাদ করলে জাকারিয়া নিজেকে ভূমির মালিক দাবী করে বসে। এরপর থেকে সে আমার সাথে বেয়াদবি ও অসদাচরণ করে আসছে। জামাতা হয়েও মেয়ের সামনেই জাকারিয়া আমাকে মারধোর করতে চেয়েছে কয়েকবারই। এমতাবস্থায়, সুমির ও আমার প্রকৃত অবস্থা কি সেটা বুঝতে কারও অসুবিধা হবার কথা নয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *