ব্রয়লার মুরগিতে সর্বোচ্চ সহনীয় মাত্রার অনেক গুণ বেশি ক্ষতিকর ধাতু

ব্রয়লার মুরগিতে সর্বোচ্চ সহনীয় মাত্রার অনেক গুণ বেশি ক্ষতিকর ধাতু

সুরমার ঢেউ সংবাদ :: ব্রয়লার মুরগিতে সর্বোচ্চ সহনীয় মাত্রার অনেক গুণ বেশি ক্ষতিকর ধাতু পাওয়া গেছে। দেশের আমিষের চাহিদা পূরণের সহজলভ্য উৎস হলেও ব্রয়লার মুরগিতে ক্ষতিকারক ভারী ধাতুর উপস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ বহুদিনের। সম্প্রতি এ উদ্বেগের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান ডিসিপ্লিনের প্রধান প্রফেসর ড. আব্দুল্লাহ হারুন চৌধুরীর তত্বাবধানে স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী তাশরিফ আহমেদ তন্ময়ের এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। কয়েকদিন আগে কৃষি মন্ত্রনালয়ের এক গবেষণা জানায়- ব্রয়লার মুরগিতে ১০ ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক ও ৩টি ভারী ধাতুর উপস্থিতি মিললেও তা মানুষের জন্য ঝুঁকির মাত্রার অনেক নিচে রয়েছে।
তবে, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এ গবেষণার ল্যাব টেস্টে দেখা গেছে- ব্রয়লার মুরগির মাংস ও হাড়ে যে পরিমাণ ক্ষতিকর ধাতুর অস্তিত্ব রয়েছে তা আন্তর্জাতিক সর্বোচ্চ সহনীয় মাত্রার চেয়ে অনেক গুণ বেশি। গবেষক জানান- নগরীর সান্ধ্য বাজার, নিরালা বাজার, রূপসা ঘাট বাজার, নিউমার্কেট ও বয়রা বাজার থেকে চিকেন ও ফিড সংগ্রহ করা হয়। পরবর্তীতে ল্যাব টেস্টে মাংসের প্রতি কেজিতে পাওয়া গেছে নিকেল ১২৮ মি. গ্রা, ক্রোমিয়াম ১২.৫১ মি. গ্রা, সীসা ১৮.৫২ মি. গ্রা, ও আর্সেনিক ০.৪৪ মি. গ্রা.। অন্যদিকে হাড়ের প্রতি কেজিতে পাওয়া গেছে নিকেল ৭৯.৩ মি. গ্রা, ক্রোমিয়াম ১০.৪৫ মি. গ্রা, সীসা ৩.৭৯ মি. গ্রা ও আর্সেনিক ০.৩৭ মি.গ্রাম।
যেখানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদিত মাত্রা, মাংসের প্রতি কেজিতে নিকেল ০.৫ মি. গ্রা, ক্রোমিয়াম ১ মি. গ্রা, সীসা ০.১ মি. গ্রা. ও আর্সেনিক ০.১ মি. গ্রা.।
গবেষকরা মনে করছেন- মূলত মুরগির ফিড থেকে ক্ষতিকারক ভারী ধাতুগুলো মাংস ও হাড়ে আসছে। ব্যবসায়ীরা ব্যবসার স্বার্থে কাঁচামাল হিসেবে ট্যানারির বর্জ্য ব্যবহার করে এসব ফিড তৈরি করছেন। গবেষক তাশরিফ আহমেদ তন্ময় বলেন- আমরা নগরীর ৫টি বাজার থেকে মুরগির মাংস সংগ্রহ করেছিলাম। পরবর্তীতে ল্যাব টেস্টে এগুলোর মধ্যে অত্যধিক পরিমাণ ভারী ধাতুর সন্ধান পেয়েছি- যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নির্ধারিত সর্বোচ্চ সহনীয় মাত্রার চেয়ে অনেক বেশি। শুধু তাই নয়, আমরা ১৫টি ফিড নিয়ে টেস্ট করে, তাতেও অনেক বেশি ভারী ধাতুর সন্ধান পেয়েছি।
গবেষণা তত্বাবধায়ক প্রফেসর ড. আব্দুল্লাহ হারুন চৌধুরী বলেন- দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির কারণে যারা ফিড তৈরি করে তারা খরচ কমানোর জন্য অধিকাংশ সময় ট্যানারি বর্জ্য বা অন্যান্য খাদ্যদ্রব্যের বর্জ্য ব্যবহার করছেন। এতে বেশ কিছু ভারী ধাতু থাকে। বিশেষ করে ছোট ছোট ফার্মগুলোতে এসব কমদামী ফিড ব্যবহৃত হয়। সেখান থেকেই মাংস এবং হাড়ে ভারী ধাতু চলে আসে। তাই, ফিড তৈরির কাঁচামালের ব্যাপারে তদারকি বাড়াতে হবে। অন্যথায় পোল্ট্রি শিল্প যেমন ক্ষতির মুখে পড়বে, তেমনি স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়বে দেশের মানুষ।
চিকিৎসকেরা বলছেন- এ ভারী ধাতুগুলোর কারণে ক্লোন ক্যানসার, পাকস্থলী ক্যানসার ও খাদ্যনালিতে ক্যানসারের মারাত্মক ঝুঁকি রয়েছে। এছাড়া কিডনি সমস্যা, ডায়াবেটিস, হাবা-গোবা, ঠোঁট কাটাসহ শরীরের যে কোনো অঙ্গে নানা জটিল রোগ হবার সম্ভাবনা প্রবল।
রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. মাহামুদুর রহমানের ভাষ্যমতে- ক্রোমিয়াম, ক্যাডমিয়াম, সিসা ও আর্সেনিক মানুষের শরীরে ঢুকলে তা বের হতে পারেনা। সবকটিই দীর্ঘমেয়াদে কিডনি, লিভার ও মস্তিষ্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করে। পরবর্তীতে খুলনার বিভিন্ন হোটেল ও রেস্তোরায় ব্রয়লার মুরগি দিয়ে তৈরি খাবারের উপর গবেষণার পরিকল্পনা রয়েছে বলেও জানান তাঁরা। (সূত্র ঃ যাযাদি)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *