সুরমার ঢেউ সংবাদ :: সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রেম করে ৫ বছরে ৮০ লাখ টাকা খুইয়ে জানলেন প্রেমিকা পুরুষ। এভাবেই ফেসবুকে প্রেমের ফাঁদে পড়ে সর্বনাশ ডেকে আনছেন তরুণ ও যুবকরা। অনেকে রুপের মোহে পড়ে বিবাহিত নারীকে বিয়ে করে প্রতারিত হচ্ছেন। আবার অনেকে প্রেমের ফাঁদে পা দিয়ে ব্ল্যাক মেইল হচ্ছেন। সম্প্রতি এরকম একটি ঘটনায় ৮০ লাখ টাকা খুইয়েছেন এক যুবক। ওই যুবককে ফেসবুকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে প্রতারণার অভিযোগে দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (উত্তর) বিভাগ। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- সুজন তালুকদার ওরফে শাওন ওরফে তানভীর হাসান ওরফে জাহিদ হাসান ওরফে লুৎফর রহমান এবং তাঁর সহযোগী পুষ্পা আক্তার ওরফে আবিরা জাহান কলি। ২০ অক্টোবর টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর ও সদর থানায় অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করে ওয়েব বেইসড ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিম।
জানা গেছে- ফেসবুকে ফেক আইডি খুলে নামিদামি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার পরিচয়ে পাঠানো হয় বন্ধুত্বের রিকোয়েস্ট। চ্যাটিং ও অডিও কলে স্বাভাবিক কথাবার্তা থেকে একান্ত ব্যক্তিগত কথা। চাহিদামতো আপত্তিকর ভিডিও পাঠান প্রেমিকা। আপত্তিকরভাবে আসেন ভিডিও কলে। তাতেই আসক্ত হয়ে যান প্রেমিক। গভীর প্রেমে হাবুডুবু খেয়ে প্রেমিক নিজেই বিয়ের প্রস্তাব দেন। সময় নেন না প্রেমিকাও। আশ্বাস দেন দ্রুতই তাদের বিয়ে হবে। তারপর শুরু হয় বিভিন্ন অজুহাতে প্রেমিকার আবদার। কতো প্রকারের বাহানা-আবদার করেন তার শেষ নাই। ধনী পিতা-মাতা হাসপাতালে ভর্তি, কোটিপতি ছেলের সঙ্গে ছোট বোনের বিয়ে, মেধাবী ভাই আমেরিকা পড়তে যাবে, মফস্বল শহরে বহুতল বাড়ির কাজ আটকে আছে, বাজারে নতুন আইফোন এসেছে ইত্যাদি নানা অজুহাতে টাকা ধার। প্রেমিকা যখন একসময় বুঝতে পারেন টাকার খনি প্রেমিকের কাছ থেকে আর টাকা আদায় করা যাবেনা তখনই ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, ইমো সবকিছু থেকে তাকে ব্লক করে দিয়ে গাঢাকা দেন।
২৬ অক্টোবর বুধবার ওয়েব বেইসড ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিম ইনচার্জ অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার মো. আশরাফ উল্লাহ বলেন- ফেসবুকে এক ব্যক্তির সঙ্গে আবিরা জাহান কলি নামের এক মেয়ের পরিচয় হয়। এ সূত্রে প্রেম। পরে বিয়ের সিদ্ধান্ত। এমন পরিস্থিতিতে বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে প্রায় ৮০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন মেয়েটি। এ ঘটনায় ওই ব্যক্তি ১৭ অক্টোবর ডিজিটাল প্রতারণার অভিযোগে তেজগাঁও থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয় ডিবি সাইবারের ওয়েব বেইসড ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিমকে।
ওই টিম প্রযুক্তির সহায়তায় আবিরা জাহান কলি নামের ওই মেয়েকে গ্রেপ্তার করে। তাঁর দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে ভূঞাপুর থানায় অভিযান চালিয়ে সুজন তালুকদার ওরফে শাওন ওরফে তানভীর হাসান ওরফে জাহিদ হাসান ওরফে লুৎফর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়। এসময় তাঁদের কাছ থেকে দুটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়। প্রতারণার কৌশল সম্পর্কে ডিবির এ সাইবার পুলিশ কর্মকর্তা বলেন- গ্রেপ্তারকৃত সুজন তালুকদার নারীদের ছদ্মনামে একাধিক ফেসবুক আইডি ব্যবহার করে পুষ্পার মাধ্যমে অপরিচিত লোকজনের সঙ্গে বন্ধুত্ব ও প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন। সম্পর্ক গভীর হলে বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নিয়ে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। তেজগাঁও থানায় করা মামলায় গ্রেপ্তারকৃত দুই প্রতারককে আদালতে পাঠানো হয়েছে।