সুরমার ঢেউ সংবাদ :: মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে দূর্নীতিবাজ ও ক্ষমতার অপব্যবহারকারী বিভাগীয় শ্রম দপ্তরের সহকারী পরিচালক নাহিদুল ইসলামের অপসারণসহ ৪ দফা দাবীতে মানববন্ধন, প্রতিবাদ সভা ও বিক্ষোভ মিছিল শেষে ইউএনও, জেলা প্রশাসক ও শ্রম মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেছে মৌলভীবাজার জেলা অটোটেম্পু, অটোরিকশা, বেবি, মিশুক, সিএনজি শ্রমিক ইউনিয়ন (রেজিঃ নং চট্ট- ২৩৫৯) এর শ্রীমঙ্গল উপজেলার সকল ইউনিট পরিচালনা কমিটিসহ সাধারণ শ্রমিকরা।
শ্রীমঙ্গল শহরের ভানুগাছ রোডস্থ শ্রম কল্যাণ অফিসের সম্মুখে সংগঠনের জেলা সভাপতি পাবেল মিয়া, সাধারণ সম্পাদক আজিজুল হক সেলিম, দপ্তর সম্পাদক সুয়েব আহমেদ, একাটুনা ইউনিট কমিটির সাধারণ সম্পাদক হারুন আহমেদ, কুলাউড়া উপজেলা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক আলমাস আহমেদ, চাঁদনীঘাট ইউনিট কমিটির প্রচার সম্পাদক মোঃ রুহুল আলম রনি, শ্রীমঙ্গল উপজেলা কমিটির সাবেক সভাপতি আব্দুস সালাম, সহ-সভাপতি মোঃ মনির মিয়া, সাধারণ সম্পাদক শাহীন আহমেদ, দপ্তর সম্পাদক মোঃ মখলিছুর রহমান খালিছ, আহবায়ক এম এম শামীম আহমেদ, সদস্য সচিব মোঃ রয়েজ আহমেদ, শফিকুর রহমান, হবিগঞ্জ ইউনিট কমিটির মদু মিয়া প্রমুখের নেতৃত্বে ১৪ আগষ্ট রবিবার সকাল ১১টায় এ মানববন্ধন, প্রতিবাদ সভা ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। পরে শ্রীমঙ্গলের ইউএনও বরাবর এবং এরপর জেলা প্রশাসক ও শ্রম মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।
মানববন্ধন, প্রতিবাদ সভা ও স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে- সহকারী পরিচালক নাহিদুল ইসলাম শ্রম অধিদপ্তর শ্রীমঙ্গলে যোগদানের পর থেকেই দূর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে জেলা প্রায় প্রতিটি শ্রমজীবি সংগঠনকে ধ্বংসের ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছেন। চট্ট- ২৩৫৯নং পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন থাকা সত্তেও, তিনি দূর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে বেআইনীভাবে জেলা সিএনজি শ্রমিক ইউনিয়ন (রেজিঃ নং চট্ট- ০০৪) নামে আরেকটি সংগঠনকে নিবন্ধন দিয়ে সাধারন শ্রমিকদের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি করেছেন। এরপর থেকেই মৌলভীবাজারে প্রতিনিয়ত ঝগড়া ও দাঙ্গা-হাঙ্গামার সৃষ্টি হচ্ছে। চট্ট- ০০৪নং অবৈধ সংগঠনটি বিভিন্ন স্থানে চট্ট- ২৩৫৯নং সংগঠনের স্ট্যান্ড দখলের চেষ্টাসহ নানা অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। এ নিয়ে জেলার বিভিন্ন থানায় পক্ষে বিপক্ষে একাধিক মামলাও রয়েছে। গতবছর সদর উপজেলার ইমামবাজারে জোরপূর্বক স্ট্যান্ড স্থাপন চেষ্টার প্রতিবাদ করায় এ সংগঠনটি ভাড়াটে সন্ত্রাসী দিয়ে এক শ্রমিককে হত্যা করে। শুধু তাই নয়, মহামান্য হাইকোর্ট ও সরকার বেটারি চালিত যানবাহন নিষিদ্ধ করা সত্তেও এ সংগঠনটি জেলার বড়লেখা উপজেলায় বেটারি চালিত অটোরিকশা শ্রমিকদের কমিটি অনুমোদন দিয়েছে।
এছাড়া, জেলা নির্মান শ্রমিক ইউনিয়ন থাকা সত্তেও সহকারী পরিচালক নাহিদুল ইসলাম দূর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে বেআইনীভাবে আরেকটি নির্মান শ্রমিক সংগঠনকে নিবন্ধন দিয়েছেন। পরে অপরপক্ষ থেকে সুযোগ সুবিধা নিয়ে বেআইনীভাবে নিবন্ধন দেয়া ওই সংগঠনের নিবন্ধন বাতিলের জন্য শ্রম আদালতে মামলা করেছেন।
অন্যদিকে, মহামান্য হাইকোর্ট এবং সরকার সড়ক দূর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণ ও বিশেষকরে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের লক্ষ্যে বেটারীচালিত যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা ও এসব যানবাহন বন্ধের নির্দেশনা দিলেও, অদ্যাবধি তা কার্যকর হয়নি। বিগত ২০২০ সালে জেলা আইন শৃংখলা কমিটির একটি সভায় মৌলভীবাজারে বেটারীচালিত যানবাহন চলাচল বন্ধের সিদ্ধান্ত হলেও, অদ্যাবধি তাও কার্যকর হয়নি। অধিকন্তু, জেলার বিভিন্ন স্থানে শোরুম ও বিক্রয় কেন্দ্র স্থাপন করে অবাধে বেটারীচালিত যানবাহন বিক্রয় করা হচ্ছে।
স্মারকলিপিতে, শ্রম অধিদপ্তর শ্রীমঙ্গলের দূর্নীতিবাজ ও ক্ষমতার অপব্যবহারকারী সহকারী পরিচালক নাহিদুল ইসলামকে অপসারণ, চট্ট- ০০৪নং অবৈধ সংগঠনের নিবন্ধন বাতিল, বেটারীচালিত অটোরিকশা চলাচল বন্ধে মহামান্য হাইকোর্ট ও সরকারের নির্দেশনা দ্রুত কার্যকর এবং বেটারীচালিত যানবাহনের শোরুম ও বিক্রয় কেন্দ্র বন্ধের দাবী জানানো হয়েছে।
স্মারকলিপির শেষাংশে উল্লেখ করা হয়েছে- চট্ট- ০০৪নং অবৈধ সংগঠনের নিবন্ধন বাতিল এবং বেটারীচালিত অটোরিকশা চলাচল বন্ধে মহামান্য হাইকোর্ট ও সরকারের নির্দেশনা দ্রুত কার্যকরের দাবীতে ইতিপূর্বেও বিগত ০৩/১১/২০২০ইং জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হলেও অদ্যাবধি অবস্থার কোন পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয়নি।
শ্রীমঙ্গলের ইউএনও বরাবর স্মারকলিপি প্রদানকালে, শ্রীমঙ্গল উপজেলা চেয়ারম্যান ভানুলাল রায় উপস্থিত হয়ে আন্দোলনকারীদেরকে শান্তনা দিয়ে বলেন- ইউএনও আলী রাজিব মাহমুদ মিঠুন ও শ্রীমঙ্গল থানার ওসি শামীম অর রসিদ তালুকদারকে নিয়ে বসে বিভাগীয় শ্রম অধিদপ্তর শ্রীমঙ্গলের সহকারী পরিচালক নাহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ বিষয়ে আলোচনাক্রমে সমাধানের পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। ইউএনও আলী রাজিব মাহমুদ মিঠুন স্মারকলিপি গ্রহণ করে শ্রমিক নেতাদেরকে শান্ত্বনা দিয়ে বলেন- আলোচনার মাধ্যমে অতি দ্রুত বিষয়টি সমাধান করা হবে।