সুরমার ঢেউ সংবাদ :: নান্দনিক স্থাপত্যের অপূর্ব মিশেল সিলেট বাস টার্মিনাল উদ্বোধন হতে যাচ্ছে আগামী মাসে। নগরীর দক্ষিণ সুরমার কদমতলী কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল একসময় ছিলো ময়লার ভাগাড় ও দুর্গন্ধময়। বর্ষায় পা ফেলাই ছিলো দায়। সেই টার্মিনালটি ৬৩ কোটি টাকা ব্যয়ে আধুনিক স্থাপত্য নিদর্শন হতে চলেছে। এ যেন বিশ্বের উন্নত কোনো দেশের টার্মিনাল।
কারুকার্যময় লাল ইটের দেয়াল, ইট রঙের স্টিলের ছাউনি, গাছপালা আবৃত গ্রিন জোন, বিমানবন্দরের আদলে আলাদা প্রবেশ ও বহির্গমন পথ। যাত্রীদের জন্য প্রায় ১ হাজার ৫০০ সিটের বিশাল ওয়েটিং লাউঞ্জ। ইতোমধ্যে টার্মিনালটির কাজ শেষ হলেও উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছে। তবে আগামী মাসে মাঝামাঝি সময়ে উদ্বোধন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে সিসিকের একটি সূত্র জানিয়েছে।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দেশের এ আধুনিক বাস টার্মিনালে অর্থায়ন করছে বিশ্বব্যাংক। এমজিএসপি (মিউনিসিপ্যাল গভর্নমেন্ট সার্ভিস প্রজেক্ট) প্রকল্পের আওতায় সিলেট সিটি করপোরেশন ৬৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ৮ একর জায়গাজুড়ে নির্মাণ করেছে নতুন বাস টার্মিনাল কমপ্লেক্স। ৬ তলা ভিত্তির তিনতলা কমপ্লেক্স প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে ডালি কনস্ট্রাকশন। পুরো টার্মিনালের নির্মাণকাজ ৩টি অংশে ভাগ করা হয়েছে।
যার মধ্যে পার্ট-১ : বহির্গমন ভবনের দৈর্ঘ্য ৩৫০ ফুট। রয়েছে ৯৭০ সিটের যাত্রী বসার সুবিধাসম্পন্ন বিশাল হল। রয়েছে ৩০ সিটের ভিআইপি কক্ষ, ৩০টি টিকিট কাউন্টার ও ৫০ জন মুসল্লির ধারণ ক্ষমতার নামাজ কক্ষ। নারী-পুরুষ ও প্রতিবন্ধীদের ব্যবহার উপযোগী পৃথক ৬টি টয়লেট জোন। সেখানে হুইল চেয়ার নিয়েও টয়লেট ব্যবহার করা যাবে। ওপরে ওঠার জন্য থাকবে লিফট, রেস্টুরেন্ট ও ফুড কোর্ট। থাকবে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে যাওয়া যাত্রীর জন্য সিক বেড, শিশুদের জন্য ব্রেস্ট ফিডিং জোন।
পার্ট-২ : অ্যারাইভাল বিল্ডিং প্রায় ৩০০ ফুট দৈর্ঘ্যের। ডিপারচার বিল্ডিংয়ের মতো এখানে আছে বাস বে, যাত্রীর বসার জন্য ৫১০ সিটের ওয়েটিং স্পেস ও ৩০ সিটের ভিআইপি কক্ষ, আধুনিক টয়লেট সুবিধা, সিক বেড, ব্রেস্ট ফিডিং জোন, লিফট, রেস্টুরেন্টসহ যাত্রীদের সব সুযোগ-সুবিধা। পার্ট-১ ও পার্ট-২-এর মাধ্যমে ডিপারচার ও এ্যারাইভাল আলাদা করা হলেও করিডরের মাধ্যমে পুরো স্ট্রাকচার একটি চক্রাকার ভবনে পরিণত হয়েছে। এ ভবনের দক্ষিণ-পশ্চিম কর্ণার সড়কের সঙ্গে সঙ্গে গোলাকার পাঁচতলা টাওয়ার ভবনে রয়েছে টার্মিনাল পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনা অফিস। যেখানে থাকবে পুরো টার্মিনালের সিকিউরিটি কন্ট্রোল ও সিসিটিভি মনিটরিং কক্ষ, পুলিশ কক্ষ এবং পর্যটন অফিস।
পার্ট-৩ : টার্মিনালের পেছনের দিকে নির্মিত হয়েছে একটি মাল্টিপারপাস ওয়েলফেয়ার সেন্টার। যেখানে মালিক ও চালক সমিতির জন্য থাকবে ২৪ বেডের বিশ্রাম কক্ষ, গোসলের ব্যবস্থা, অফিস, লকার ব্যবস্থা, ক্যান্টিন এবং মিটিং ও অনুষ্ঠানের জন্য বিশাল মাল্টিপারপাস মিলনায়তন।
বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে সিলেট সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে নির্মিত এ টার্মিনালের নকশা করেছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগের তিন শিক্ষক। তারা হলেন, সহকারী অধ্যাপক সুব্রত দাশ, রবিন দে ও মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন। নকশাটিতে সিলেটের ঐতিহ্য আসাম টাইপ বাড়ি, চাঁদনীঘাটের ঘড়ি বিবেচনা করে আধুনিক স্থাপত্যশৈলীর সমন্বয় ঘটানো হয়েছে।
সিলেট জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ময়নুল হক বলেন, দেশের মধ্যে সুন্দরতম ও আধুনিক বাসটার্মিনাল নির্মাণের পর আমরা যদি সঠিকভাবে পরিচালনা করতে না পারি তবে তা হবে দুঃখজনক। যাত্রীদের নিরাপত্তা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, বিদ্যমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার বিষয়ে তদারকি থাকতে হবে। সিটি করপোরেশন তাদের লোক দিলে ভালো। পরিবহন মালিক-শ্রমিক সমিতির পক্ষ থেকেও বিষয়টি তদারক করা হবে। টার্মিনাল চালুর আগে সিটি করপোরেশন মালিক-শ্রমিক ইউনিয়নের সঙ্গে বসে এ ব্যাপারে পরিকল্পনা গ্রহণ করা উচিত।
প্রকল্প বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান ডালি কনস্ট্রাকশনের সিনিয়র প্রজেক্ট ইঞ্জিনিয়ার মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, প্রকল্পের প্রতিটি কাজ অত্যন্ত যত্ন সহকারে করা হচ্ছে। উপরের স্টিলের টিন তাইওয়ান থেকে এবং স্টিল স্ট্রাকচারের জন্য লোহার বার চায়না থেকে আনা হয়েছে। এছাড়া প্রতিটি জিনিস বুয়েটে টেস্ট করা হয়েছে। বিমানবন্দরের মতো বিশাল ওয়েটিং স্পেস রাখা হয়েছে।
এ ব্যাপারে সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, দৃষ্টিনন্দন আধুনিক বাস টার্মিনাল দেশে প্রথম সিলেটেই নির্মিত হচ্ছে। এটি পরিচালনার জন্য নীতিমালা তৈরির কাজ চলছে। এখানে পার্কিং এলাকা ছাড়া গাড়ি দাঁড় করানো যাবে না, ইচ্ছামতো কাউন্টার বসানো যাবে না। এ টার্মিনাল আধ্যাত্মিক নগরী সিলেটের সৌন্দর্য আরও কয়েক গুণ বাড়িয়ে দেবে।
মেয়র আরিফ বলেন, প্রায় ৬৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে টার্মিনালটি। দ্বিতল এই টার্মিনালের আগমন ও বহির্গমন অংশ আলাদা করা হলেও করিডোরের মাধ্যমে পুরো স্থাপনাকে সংযুক্ত করা হয়েছে। থাকছে সিসিটিভি মনিটরিং কক্ষ, পুলিশ কক্ষ এবং পর্যটন অফিস।