বিশেষ প্রতিনিধি :: মৌলভীবাজারে ৩ বছরের কারাদন্ডপ্রাপ্ত আসামীকে সংশোধনের সুযোগ দিয়ে নামাজ পড়াসহ কয়েকটি শর্তে মুক্তি দিয়েছেন মৌলভীবাজার চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মুহম্মদ আলী আহসান। মৌলভীবাজার বিচার বিভাগের ইতিহাসে এ ব্যতিক্রমী মানবিক দৃষ্টান্তমূলক রায় এটিই প্রথম।
৬ আগষ্ট ২০১৬ সালে শ্রীমঙ্গল উপজেলার সিরাজনগরে মারামারির ঘটনায় মাহমুদ মিয়া বাদী হয়ে নুর মিয়াসহ ৪ জনকে আসামী করে জি.আর নং ১৮৮/২০১৬ (শ্রীমঙ্গল) মামলা দায়ের করেন। সাক্ষ্য প্রমাণে নুর মিয়ার বিরুদ্ধে দন্ডবিধি ৩২৫ ধারার অভিযোগ প্রমাণ হওয়ায় তাকে ৩ বছরের বিনাশ্রম কারাদন্ড প্রদান করেন আদালত। কিন্তু, দন্ডপ্রাপ্ত নুর মিয়ার ২টি নাবালক সন্তান থাকায় এবং পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি হওয়ায় তাকে সংশোধনের সুযোগ প্রদানকল্পে কারাগারে পাঠানোর পরিবর্তে “প্রবেশন অব অফেন্ডার্স অর্ডিন্যান্স ১৯৬০” এর অধীনে নামাজ পড়া, ১০০টি গাছ রোপন, নতুন করে কোনো অপরাধে জড়িত না হওয়া, মাদক সেবন থেকে বিরত থাকা, শান্তি রক্ষা ও সদাচরণ করা, আদালতের নির্দেশমত হাজির হওয়া ইত্যাদি শর্তে মুক্তি দেন আদালত। এ শর্তগুলো প্রতিপালন পর্যবেক্ষণের জন্য জেলা প্রবেশন কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তিনি এ বিষয়ে আদালতকে অবহিত করবেন।
উপস্থিত আইনজীবীগণ ও বিচারসংশ্লিষ্টরা উল্লেখ করেছেন, আদালতের এ ব্যতিক্রমী রায় ইতিবাচক। মৌলভীবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সাবেক পিপি এ.এস.এম. আজাদুর রহমান বলেন- তাঁর প্র্যাকটিস জীবনে এ ধরণের ব্যতিক্রমী রায় আর দেখেন নাই- যা অপরাধীকে সংশোধনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক বদরুল হোসেন ইকবাল বলেন- সমাজে অপরাধ হ্রাসকল্পে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে এ ধরণের রায় দেয়া উচিত। চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মুহম্মদ আলী আহসান উপস্থিত সকলের উদ্দেশ্যে বলেন- মানুষ অপরাধী হয়ে জন্মায়না। বিভিন্ন কারণে অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। ছোটখাটো অপরাধ হলে তাকে শাস্তির পরিবর্তে সংশোধনের সুযোগ দেয়া উচিত। কারাগারের বাইরে রেখে দন্ডপ্রাপ্তদেরকে সংশোধনের সুযোগ দিতে দীর্ঘদিনের পুরোনো আইনটি সচল করা প্রয়োজন। এমন আইন বিশে^র অনেক দেশে চালু রয়েছে।