ছাতক সিমেন্ট কারখানা নতুন করে তৈরি হচ্ছে জানুয়ারি ৩১, ২০২১

ছাতক সিমেন্ট কারখানা নতুন করে তৈরি হচ্ছে জানুয়ারি ৩১, ২০২১

সুরমার ঢেউ সংবাদ :: ছাতক সিমেন্ট কারখানা নতুন করে তৈরি হচ্ছে। ১৯৩৭ সালে সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক উপজেলায় আসাম বেঙ্গল সিমেন্ট ফ্যাক্টরি নাম নিয়ে স্থাপিত হয় কোম্পানিটি। ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধের পর কারখানাটি ব্যক্তি মালিকানায় পরিত্যক্ত হলে ১৯৬৬ সাল থেকে কারখানাটি ইপিআইডিসি’র নিয়ন্ত্রণে আসে। দেশ স্বাধীন হবার পর কারখানাটির নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ছাতক সিমেন্ট ফ্যাক্টরি। প্রথমে বিএমওজিসি, পরে বিএমইডিসি এবং সর্বশেষ ১৯৮২ সালের ১ জুলাই থেকে বিসিআইসি’র নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।
ভিজা পদ্ধতিতে সিমেন্ট উৎপাদনে এ ফ্যাক্টরি এখনও দেশসেরা। তবে, শুষ্ক পদ্ধতিতে উৎপাদনের চেয়ে এ কারখানায় উৎপাদনে খরচ বেশি। পাশাপাশি যন্ত্রাংশের ক্ষয়ের হার বেশি। তাই ছোটখাটো মেরামতে উৎপাদন অব্যাহত রাখা সম্ভব হচ্ছেনা। বিভিন্ন যন্ত্রপাতি বিকল হয়ে উৎপাদন বন্ধ হচ্ছে বারবার। বছর বছর বাড়ছে লোকসানের বোঝা।
ছাতক সিমেন্ট কারখানা সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে কারখানাটির দৈনিক উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৫০০ টন। কিন্তু এর বিপরীতে উৎপাদন হচ্ছে ২০০-২৫০ টন। জানা গেছে, মূল কারখানায় স্থাপিত ৪টি সিমেন্ট মিলের মাধ্যমে সিমেন্ট উৎপাদন করা হতো। ইতিমধ্যে দুটি সিমেন্ট মিল ৫০৪, ৫১৬ অকেজো হয়ে পড়ায় ২ বছর ধরে অন্য দুটি মিল মেরামতের মাধ্যমে কারখানার উৎপাদন সচল রাখা হয়েছিল। অবশেষে সরকারের উদ্যোগে পুরোপুরি বদলে যাচ্ছে দেশের একমাত্র রাষ্ট্রীয় এ সিমেন্ট কারখানাটি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, শিল্প মন্ত্রনালয় ও স্থানীয় সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিকের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ওয়েট প্রসেস থেকে কারখানাটিকে ড্রাই প্রসেস প্রকল্পে রূপান্তর করতে ৮ মার্চ ২০১৬ সালে একনেকে আধুনিকায়ন ড্রাই প্রসেস প্রকল্পের অনুমোদন হয়। এরই ধারাবাহিকতায় নতুন ড্রাই প্রসেস প্রকল্প বাস্তবায়নে ৮৯২ কোটি টাকা বরাদ্ধ দেয় সরকার। চীনের একটি বিখ্যাত কারিগরি প্রতিষ্ঠান ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর থেকে নতুন প্রকল্পের কাজ শুরু করেছে। তবে, বর্তমান করোনা পরিস্থিতির কারনে প্রকল্পটির কাজ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ করতে কিছুটা বিলম্বিত হবে জানা যায়।
নির্মাণাধীন সিমেন্ট প্রকল্পটির মাধ্যমে দৈনিক ১ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন ক্লিংকার ও ৫০০ মেট্রিক টন সিমেন্ট উৎপাদনে সক্ষম হবে। চলতি ২০২১ সালের ডিসেম্বরে নতুন প্রকল্পে উৎপাদন শুরু হবে বলে জানা গেছে। এছাড়া প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে প্রতিষ্ঠানটির বছরে অন্তত ৭৬ কোটি টাকা আয় করা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন ছাতক সিমেন্ট কোম্পানি সংশ্লিষ্টরা। ছাতক সিমেন্ট কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক এফ এম আব্দুল বারী বলেন, এখন কোনো কারখানাই আর ওয়েট প্রসেসে চলে না। এতে উৎপাদন ব্যয় অনেক বেশি। কারখানাকে লাভজনক করতে দ্রুত ড্রাই প্রসেস প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ চলছে।
ছাতক-দোয়ারাবাজার আসনের সংসদ সদস্য জানান নতুন পরিকল্পনার কথা। সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক বলেন, এটাকে আধুনিক সিমেন্ট কারখানা হিসাবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে সরকার। এ এলাকার ঐতিহ্য এ সিমেন্ট কারখানাকে একসময় পানির দামে বিক্রির পাঁয়তারা চলছিল। কিন্তু বঙ্গবন্ধু কন্যার শিল্পবান্ধব সরকার বারবার ভতুর্কি দিয়ে এটিকে সচল রাখছে। তার মন্তব্য, আধুনিকায়ন সম্পন্ন হলে এটি বিসিসিআইসির একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *