সুরমার ঢেউ সংবাদ :: ২০২২ সালে ৬ হাজার ৭শ ৪৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৯ হাজার ৯শ ৫১ জন নিহত হয়েছেন। এছাড়া আহত হয়েছেন ১২ হাজার ৩শ ৫৬ জন। একই সময় রেলপথে ৬শ ৬টি দুর্ঘটনায় ৫শ ৫০ জন নিহত, ২শ ১ জন আহত হন। নৌ-পথে ২শ ৬২টি দুর্ঘটনায় ৩শ ৫৭ জন নিহত, ৩শ ৫৭ জন আহত এবং ৭শ ৪৩ জন নিখোঁজ হয়েছেন। সড়ক, রেল ও নৌপথে সর্বমোট ৭ হাজার ৬শ ১৭টি দুর্ঘটনায় ১০ হাজার ৮শ ৫৮ জন নিহত এবং ১২ হাজার ৮শ ৭৫ জন আহত হয়েছেন। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির দুর্ঘটনা মনিটরিং সেলের বার্ষিক দুর্ঘটনা পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। ২ জানুয়ারি সোমবার রাজধানীর সেগুনবাগিচাস্থ ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ প্রতিবেদন তুলে ধরেন সংগঠনটির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী।
দেশের জাতীয়, আঞ্চলিক ও অনলাইন সংবাদপত্রে প্রকাশিত সড়ক, রেল ও নৌপথ দুর্ঘটনার সংবাদ মনিটরিং করে প্রতিবছরের ধারাবাহিকতায় এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। এতে দেখা গেছে, বিদায়ী ২০২২ সালে ৬ হাজার ৭শ ৪৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৯ হাজার ৯শ ৫১ জন নিহত এবং ১২ হাজার ৩শ ৫৬ জন আহত হয়েছেন। ২০২১ সালের চেয়ে ২০২২ সালে সড়ক দুর্ঘটনা ১৯.৮৯ শতাংশ ও প্রাণহানী ২৭.৪৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। বিগত ৮ বছরে নিবন্ধিত যানবাহনের পাশাপাশি ছোট যানবাহন বিশেষ করে মোটরসাইকেল ও ইজিবাইকের সংখ্যা ৪ গুণ বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি ইজিবাইক, মোটরসাইকেল ও ত্রি-হুইলার সরকারী আদেশ অমান্য করে জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে অবাধে চলাচলের কারনে বিগত ৮ বছরের মধ্যে বিদায়ী ২০২২ সালে সর্বোচ্চ সড়ক দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটেছে বলে পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে।
সড়ক দুর্ঘটনায় আক্রান্ত ৩ হাজার ৯০ জন চালক, ১ হাজার ৫শ ৩ জন পথচারী, ৭শ ৪২ জন পরিবহন শ্রমিক, ৮শ ৮৫ জন শিক্ষার্থী, ১শ ৩২ জন শিক্ষক, ২শ ৮৩ জন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, ১ হাজার ১শ ৫০ জন নারী, ৭শ ৯৪ জন শিশু, ৪৪ জন সাংবাদিক, ৩১ জন চিকিৎসক, ১৮ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা, ৫ জন শিল্পী, ৯ জন আইনজীবী, ২৯ জন প্রকৌশলী এবং ১শ ৬৮ জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীর পরিচয় মিলেছে। এর মধ্যে নিহত হয়েছেন ২৭ জন সেনা সদস্য, ৬২ জন পুলিশ সদস্য, ২ জন র্যাব সদস্য, ৯ জন বিজিবি সদস্য, ৫ জন নৌ-বাহিনীর সদস্য, ৮ জন আনসার সদস্য, ২ জন ডিজিএফআই সদস্য, ১ জন বিমানবাহিনীর সদস্য, ১ জন সিআইডি, ১ জন এনএসআই সদস্য, ১৬ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা, ২৪ জন সাংবাদিক, ৭শ ৩ জন নারী, ৫শ ৮৮ জন শিশু, ৬শ ৬৬ জন শিক্ষার্থী, ১শ ১৭ জন শিক্ষক, ২ হাজার ৩শ ৮৩ জন চালক, ৪শ ২১ জন পরিবহন শ্রমিক, ২৭ জন প্রকৌশলী, ৯ জন আইনজীবী, ১শ ৩৩ জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, ৩১ জন চিকিৎসক।
এ সময়ে সংঘটিত দুর্ঘটনায় সর্বমোট ৯ হাজার ৬শ ১৬টি যানবাহনের পরিচয় মিলেছে- যার ১৩.৯৫ শতাংশ বাস, ২৪.৫০ শতাংশ ট্রাক-পিকাপ-কাভার্ডভ্যান ও লরি, ৬.৯৫ শতাংশ কার-জিপ-মাইক্রোবাস, ৬.২২ শতাংশ সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ২৮.৫৯ শতাংশ মোটরসাইকেল, ১১.৪২ শতাংশ ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক, ৮.৩২ শতাংশ নছিমন-করিমন-মাহিন্দ্র ট্রাক্টর ও লেগুনা। সংঘটিত মোট দুর্ঘটনার ৫২.৫৫ শতাংশ পথচারীকে গাড়ি চাপা দেয়ার ঘটনা, ২১.৬১ শতাংশ মুখোমুখি সংঘর্ষ, ১৫.৭৯ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে, ৮.৬৩ শতাংশ বিবিধ কারণে, ০.৪০ শতাংশ যানবাহনের চাকায় ওড়না পেচিয়ে এবং ০.৯৯ শতাংশ ট্রেন-যানবাহন সংঘর্ষ।
পরিসংখ্যানের তুলনামূলক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বিগত ২০২১ সালের তুলনায় বিদায়ী ২০২২ সালে ১.৫২ শতাংশ গাড়ি চাপা, ০.৫৬ শতাংশ মুখোমুখি সংঘর্ষ, ০.১৩ শতাংশ যানবাহনের চাকায় ওড়না পেচিয়ে, ০.৩৪ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ার ঘটনা কমেছে। ট্রেন-যানবাহন সংঘর্ষের ঘটনা ০.১২ শতাংশ বেড়েছে। ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় পতিত যানবাহনের ৩.১৯ শতাংশ বাস, ৩ শতাংশ মোটরসাইকেল, ২.৭৪ শতাংশ ব্যাটারিচালিত রিকশা-ভ্যান-ইজিবাইক, ২.৫১ শতাংশ সিএনজিচালিত অটোরিক্সা, ০.৭৮ শতাংশ কার-জীপ-মাইক্রোবাস দুর্ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া ৫.৯২ শতাংশ ট্রাক-কাভার্ডভ্যান-লরি, ১.৩২ শতাংশ নসিমন-মাহিন্দ্র-লেগুনা দুর্ঘটনা বিগত বছরের চেয়ে কমেছে।
দুর্ঘটনার ধরন বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এ বছর মোট সংঘটিত দুর্ঘটনার ২৭.৭০ শতাংশ জাতীয় মহাসড়কে, ৫২.০২ শতাংশ আঞ্চলিক মহাসড়কে, ১১.৮৮ শতাংশ ফিডার রোডে সংঘটিত হয়েছে। এছাড়াও সারা দেশে সংঘটিত মোট দুর্ঘটনার ৫.৬৭ শতাংশ ঢাকা মহানগরীতে, ১.৭১ শতাংশ চট্টগ্রাম মহানগরীতে ০.৯৯ শতাংশ রেলক্রসিংয়ে সংঘটিত হয়েছে। বিগত বছরের চেয়ে বিদায়ী বছরে ছোট যানবাহনের সংখ্যা হঠাৎ কয়েকগুণ বৃদ্ধি পাওয়া ও এসব যানবাহন জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে অবাধে চলাচলের কারনে আঞ্চলিক মহাসড়কে ১২.৭৩ শতাংশ, জাতীয় মহাসড়কে ৩.৮১ শতাংশ, রেলক্রসিং-এ ০.১৬ শতাংশ সড়ক দুর্ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে, ফিডার রোডে ৮.৪৬ শতাংশ দুর্ঘটনা কমেছে।
২০২২ সালে,সড়ক দুর্ঘটনা সবচেয়ে বেশি সংঘটিত হয়েছে ১৫ জুলাই, এদিন ৩৭টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪৩ জন নিহত ও ৯৭ জন আহত হয়েছে। সবচেয়ে কম সড়ক দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়েছে ০৬ সেপ্টেম্বর, এদিন ০৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১২ জন নিহত ও ১৩ জন আহত হয়েছে। সড়ক দুর্ঘটনায় একদিনে সবচেয়ে বেশি নিহত হয়েছে ২৯ জুলাই, এদিন ২৭টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪৪ জন নিহত ও ৮৩ জন আহত হয়েছে। সড়ক দুর্ঘটনায় সবচেয়ে বেশি আহত হয়েছে ১১ জুলাই, এদিন ২৩টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২৭ জন নিহত ও ১২৪ জন আহত হয়েছে।