সুমার ঢেউ নংবাদ :: এবছর প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পরও কমলার বাম্পার ফলন হয়েছে মৌলভীবাজারে। শীত মৌসুমের দারুণ চাহিদাসমৃদ্ধ ফল কমলা বাজারজাতকরণের উদ্দেশে গাছ থেকে নামানো, জড়ো করা ও ক্যারেটে করে পরিবহনে পৌঁছে দেয়ার কাজে চাষিরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। সংশ্লিষ্টদের আশা চলতি মৌসুমে অন্তত ১৬-১৭ কোটি টাকার কমলা বেচাকেনা হবে।
মৌলভীবাজার জেলার সবকটি উপজেলায় কমলা চাষ হলেও, জুড়ী ও বড়লেখা উপজেলায় সুমিষ্ট ও রসালো নাগাপুরী এবং খাসিয়া জাতের কমলার বাগান রয়েছে সবচেয়ে বেশি। এসব কমলার বাগান উঁচু-নিচু পাহাড়ের বুকে অবস্থিত। গাছে গাছে ঝুলে আছে কমলা। কোনোটা কাঁচা আবার কোনো পাকা। গাঢ় সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে দেখা যায় থোকায় থোকায় কাঁচা-পাকা কমলার সমাহার। শীতের আমেজে এখন মৌসুমি এ ফলটি প্রায় পুরোপুরি পরিপক্ব। চাষিরাও এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন কমলা বাজারজাতকরণে।
চাষিরা বলছেন- এবছর গাছে ফুল আসার শুরুতে খরা এবং পরবর্তীতে অতিবৃষ্টির কারণে কিছুটা বিপর্যয় দেখা দেয় ফলনে। গাছে ফল আসার শুরুতে পোকা-মাকড়ের আক্রমণ সত্তেও এবার প্রতি হেক্টরে ৭ মেট্রিক টন কমলা উৎপাদন হয়েছে। শুধু জুড়ী ও বড়লেখা এ দুই উপজেলার ১২৪ হেক্টর কমলা বাগানে ৮৪৩ মেট্রিক টন কমলা উৎপাদন হয়েছে। বেচাকেনা হবে টাকার হিসেবে প্রায় ১৬-১৭ কোটি টাকার কমলা। আরও ভালো ফলন পেতে পুরনো গাছ সরিয়ে গ্রাফটিং চারাগাছ রোপণের পরামর্শ দিয়েছে কৃষি বিভাগ।
জুড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মাহমুদুল আলম খান বলেন- জুড়ী উপজেলায় ৯৮ হেক্টর জমিতে কমলা চাষ হচ্ছে। ৭০০ টনের মতো কমলা পাবো বলে আশা করছি। অধিকাংশ বাগানে নাগপুরী ও খাসিয়া জাতের কমলা চাষ রয়েছে। নাগুরী জাতের কমলা অধিকতর রসালো ও সুমিষ্ট। তবে, আমরা কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরীক্ষিত ‘বারি কমলা-৩’ চাষ করার পরামর্শ দিয়ে থাকি। এটি নতুন একটি ভ্যারাইটি। এ প্রজাতির গাছগুলো ছোট হবার কারণে পরিচর্ষা করা সহজ এবং এটি অধিক ফলন দেয়। তিনি বলেন- এখানকার বাগানগুলো অনেক পুরোনো। রোগাক্রান্তও হয়েছে কিছু গাছ। একারণে ফলন কিছুটা কম আসে। এজন্য আধুনিক জাতের কলমের চারা দেয়া হচ্ছে। পাশাপাশি কৃষকদেরকে পর্যায়ক্রমে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। এছাড়াও কমলা চাষিদের মাঝে বিভিন্ন সার, কীটনাশক, বীজ প্রভৃতি বন্টন করা হচ্ছে। আধুনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক সামছুদ্দিন আহমদ বলেন- মৌলভীবাজার জেলা কমলার জন্য অত্যন্ত সম্ভাবনাময়। সত্যি বলতে এ এলাকার অন্যতম অর্থকরী ফসল। কমলা চাষে আগ্রহী চাষিদেরকে পোকামাকড় দমনের জন্য প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। পাশাপাশি বিনামূল্যে গ্রাফটিং চারাগাছ সরবরাহ করা হচ্ছে।
কৃষি বিভাগ প্রদত্ত তথ্য অনুযায়ী, মৌলভীবাজারে ১৭০ হেক্টর জমিতে ৩১৫টি কমলার বাগান রয়েছে। আর, বাগানগুলোতে কমলা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ১ হাজার ১৩৬ মেট্রিক টন।