সুরমার ঢেউ সংবাদ :: মৌলভীবাজারে নিজেই স্ত্রী-ভাতিজাকে আহত করে সাজানো মিথ্যা ঘটনার মামলা দিয়ে দিনমজুরকে হয়রানীতে ফেলেছে পদিনাপুর বাজারের দোকান পোড়ানো মামলার চার্জশটিভূক্ত আসামী (থানার নং- ৫, জিআর- ৩১১, তাং- ০৮/১০/২০২৩) শেখ নুরুজ্জামান ওরফে নুর আলী ও তার স্বজনরা। মৌলভীবাজার সদর উপজেলার আপার কাগাবলা ইউনিয়নস্থিত পশ্চিম পদিনাপুর গ্রামে ১১ মে শনিবার রাত অনুমান ৯টার দিকে নুর আলী ও তার স্বজনরা দিনমজুর মটুক মিয়ার বসতবাড়ীতে হামলা ও আহত করে উল্টো স্ত্রী-পুত্রসহ মটুক মিয়ার বিরুদ্ধে সাজানো মিথ্যা ঘটনার মামলা দিয়ে হয়রানীতে ফেলেছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়- ঘটনার দিন ১১ মে পশ্চিম পদিনাপুর গ্রামের প্রায় সব গৃহকর্তা পার্শ্ববর্তী নবীগঞ্জ উপজেলার কায়স্তগ্রাম বাজারে অবস্থান করছিলেন। ভূক্তভোগী মটুক মিয়ার স্ত্রী রাবিয়া বেগমও এদিন বিকালে তার বেয়াই বারিক মিয়াকে নিয়ে পদিনাপুর বাজারে গিয়ে বৃষ্টির জন্য আটকা পড়েছিলেন। তাদের পুত্র মাছুম মিয়াও গ্রামের মসজিদের পাশে ছিলো। এ সুযোগে পদিনাপুর বাজারে দোকান পোড়ানো মামলার চার্জশটিভূক্ত আসামী শেখ নুরুজ্জামান ওরফে নুর আলী, তার পিতা শেখ সামছুজ্জামান ওরফে আকামত মিয়া, মাতা ছিতারা বেগম, স্ত্রী রত্না আক্তার, ভাই কয়েছ আলী ও তার স্ত্রী শিবলি বেগম, ভাই জুনাব আলীর স্ত্রী সিপা বেগম ও ভাই দরবেশ আলীর পুত্র সোহাগ মিয়া পূর্বপরিকল্পিতভাবে রাত অনুমান ৯টার দিকে প্রতিবেশী মটুক মিয়ার বসতবাড়ীতে গিয়ে তার উপর সশস্ত্র হামলা চালায়। এসময় নুর আলী মটুক মিয়ার মাথা ফাটিয়ে ফেলে এবং অন্যান্যরা তাকে মারতে থাকে।
এমতাবস্থায় তার স্ত্রী ও বেয়াই বাড়ীতে ফিরলে তার স্ত্রীর চুলের মুঠি জাপটে ধরে রত্না এবং অন্যান্যরা মারতে থাকে। এসময় বেয়াই তাদেরকে থামানোর চেষ্টা করতে থাকেন। আক্রান্ত স্বামী-স্ত্রীর আর্তচিৎকার শোনে তাদের পুত্র মাছুম মিয়া বাড়ীতে ছুটে আসলে হামলাকারীরা তাকেও ধাওয়া করে। এ পর্যায়ে স্বামী-স্ত্রী-পুত্র মরণপণ রুখে দাড়ায় এবং তাদের বড় জামাতা ও তার ভাই (বারিক মিয়ার ২ পুত্র) এগিয়ে আসলে হামলাকারীরা দৌড়ে নিজেদের বাড়ীতে চলে যায়।
এরপর রাবিয়া বেগম দ্রুত মটুক মিয়াকে নিয়ে মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে রওয়ানা হন। তারা পদিনাপুর বাজারে পৌছলে মটুক মিয়ার অবস্থা দেখে তাদের সাহায্যার্থে জনৈক আজিজ মিয়া তাদের সাথে যান। খবর পেয়ে মটুক মিয়ার ছোট জামাতা ভাদগাঁও গ্রামের আবজল মিয়া ঘটনাস্থলে ছুটে যান। এদিকে, চিকিৎসা করিয়ে স্বামী-স্ত্রী রাত অনুমান ১টার দিকে বাড়ীতে ফিরে বেয়াই বারিক মিয়া, ছোটজামাতা আবজল মিয়া ও পুত্র মাছুম মিয়ার সাথে পরামর্শ করে পরদিন থানায় অভিযোগ দায়েরের সিদ্ধান্ত নেন।
এরপর রাত অনুমান আড়াইটা/৩টার দিকে মটুক মিয়াকে আটক করতে মৌলভীবাজার মডেল থানার এসআই মাহবুবুল আলম তার বাড়ীতে গেলে, পুলিশের সামনেই হামলাকারী কয়েছ আলী আবারও মটুক মিয়ার বসতবাড়ীতে ঢুকে তার পুত্র মাছুম মিয়ার উপর চড়াও হয়। এসময় এসআই মাহবুবুল আলম তাদেরকে নিবৃত করেন এবং মটুক মিয়া ও কয়েছ আলীকে আটক করে নিয়ে আসলেও, পদিনাপুর বাজারে পৌছে কয়েছ আলীকে ছেড়ে দিয়ে মটুক মিয়াকে থানায় নিয়ে আসেন। সকালে তাকে আদালতে প্রেরণ করা হলে আদালত তাকে জেলহাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেন।
সর্বশেষ- মটুক মিয়া জেলহাজতে থাকায় এবং বিদ্যুৎ না থাকার সুযোগে উপরোক্ত ঘটনার তৃতীয়দিন রাতে নুর আলী আবারও মটুক মিয়ার বসতঘরে ঢুকে তার স্ত্রী রাবিয়া বেগমের শ্লীলতাহানির চেষ্টা চালায়। রাবিয়া বেগমের প্রতিরোধের মুখে ব্যর্থ হয়ে সে মটুক মিয়ার বসতঘরের বিদ্যুৎসংযোগ লাইনের তার কেটে নিয়ে যায়। সেইথেকে এ সংবাদ পরিবেশন পর্যন্ত মটুক মিয়ার বসতঘর বিদ্যুৎহীন অবস্থায় রয়েছে।
থানায় দায়েরী নুর আলীর মামলার (থানার নং- ৯, জিআর- ১২০) এজাহারে দেখা যায়- মটুক মিয়ার পুত্র মাছুম মিয়া রাত ৮টা ৪০ মিনিটের সময় নুর আলীদের বসতবাড়ীর উঠানে বাঁধা মহিষের গলার রশি খুলে দেয়ার সময় সোহাগ মিয়া দেখতে পেয়ে বাঁধা দিলে উভয়ের মধ্যে তর্কাতর্কি হয়। এ বিষয়কে কেন্দ্র করে মটুক মিয়া, তার স্ত্রী রাবিয়া বেগম, পুত্র মাছুম মিয়া ও আরও অনেকে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে পূর্বপরিকল্পিতভাবে রাত অনুমান ৯টার সময় নুর আলীদের বসতবাড়ীর উঠানে গিয়ে নুর আলীর স্ত্রী রত্না আক্তার ও ভাতিজা সোহাগ মিয়াকে রক্তাক্ত কাটাজখম করে এবং রত্না আক্তারের গলায় থাকা ৩০ হাজার টাকা মূল্যের ১টি স্বর্নের চেইন ছিনিয়ে নেয়।
কিন্তু, প্রকৃতপক্ষে ঘটনাস্থল মটুক মিয়ার বসতবাড়ী। ঘটনা ঘটিয়েছে নুর আলীরা। মাথা ফেটে ও মার খেয়ে নির্যাতিত হয়েছে মটুক মিয়ারা। মামলায়র আসামীও করা হয়েছে মটুক মিয়াদেরকে। ঘটনার ২/৩ ঘন্টার মধ্যেই মামলা রেকর্ড করেছে পুলিশ। মামলার ৩ আসামীকে তাদের বসতবাড়ীতে একত্রে পেয়েও, আটক করা হলো শুধু মটুক মিয়াকে। পুলিশের সামনেই আসামী মাছুমের উপর চড়াও হবার কারণে পুলিশ কয়েছ আলীকে আটক করে নিয়ে গেলেও পথিমধ্যে তাকে ছেড়ে দেয়। অর্থাৎ নিরীহ দিনমজুর পরিবারটি একবার নির্যাতিত হলো নুর আলীদের হাতে, এরপর আবার নির্যাতিত হলো পুলিশের হাতে।
একাধিক বিশ্বস্থ সূত্রে জানা গেছে- বিরোধের কারণে অনুমান বছরপাচেক আগে থেকেই এ ২ পরিবারের মধ্যে কোনপ্রকার সম্পর্ক নেই। বিরোধের জেরে নুর আলীরাই সবসময় মটুক মিয়াদেরকে হয়রানী করে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় নুর আলীরা ঘটনার রাতে মটুক মিয়ার বসতবাড়ীতে গিয়ে হামলা চালিয়ে তার মাথা ফাটিয়েছে এবং মটুক মিয়াদেরকে ফাঁসানোর পরিকল্পনায় নুর আলীই তার স্ত্রী ও ভাতিজাকে রক্তাক্ত কাটাজখম করে সাজানো মিথ্যা ঘটনায় মামলা করেছে। পুলিশ তদন্ত করলে সহজেই এসব তথ্য-প্রমান পেতো। কিন্তু, পুলিশ কোনপ্রকার তদন্ত ছাড়াই মামলাটি রেকর্ড করায় উল্টো মটুক মিয়ারা হয়রানীতে পড়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শী বারিক মিয়া জানান- নুর আলীদের হাতে নিজ বসতবাড়ীতে আক্রান্ত ও আহত হয়েছেন মটুক মিয়া। মারধোরের শিকার হয়েছেন তার স্ত্রী রাবিয়া বেগম। ঘটনার শেষদিকে আমি ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলাম এবং নুর আলীদেরকে থামানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছি। একপর্যায়ে নুর আলীরা দৌড়ে নিজেদের বাড়ীতে চলে যায়। আসলে নুর আলীই তার স্ত্রী ও ভাতিজাকে রক্তাক্ত কাটাজখম করে সাজানো মিথ্যা ঘটনার মামলা করেছে। মটুক মিয়ার স্ত্রী রাবিয়া বেগমও তার বেয়াই বারিক মিয়ার অনুরুপ দাবী করেছেন।