শ. ই. সরকার জবলু :: মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার ১৩নং কর্মধা ইউনিয়নস্থিত পূর্ব টাট্টিউলি গ্রামের জুগিটিলা নামক টিলায় জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে পুলিশের ঘিরে রাখা বাড়িতে পরিচালিত শ্বাসরুদ্ধকর অভিযানে শিশু ও নারীসহ ১৩ জনকে আটক করা হয়েছে বলে মৌলভীবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহমুদুল হাসান সূত্রে জানা গেছে। আটককৃতদের মধ্যে রয়েছে ৩ জন শিশু, ৪ জন নারী ও ৬ জন পুরুষ। উদ্ধার করা হয়েছে বিপুল পরিমান বিস্ফোরক, ডেটোনেটর, নগদ অর্থ, প্রশিক্ষণ সামগ্রী, কমব্যাট বুট, বক্সিন ব্যাগ ও জিহাদি বই।
আটককৃতরা হলেন- ১. শরীফুল ইসলাম (৪০), পিতা- ওমর আলী, মাতা- ছমিরুন, গ্রাম- দক্ষিন নলতা, থানা ও জেলা- সাতক্ষীরা ২. হাফিজ উল্লাহ (২৫), পিতা- আবুল কাশেম, মাতা- জহুরা খাতুন, সাং- কানলা, থানা- ইটনা, জেলা- কিশোরগঞ্জ ৩. খায়রুল ইসলাম (২২), পিতা- নজরুল ইসলাম, মাতা- সানোয়ারা বেগম, গ্রাম- রসুলপুর, থানা- ফতুল্লা, জেলা- নারায়নগঞ্জ ৪. মেঘনা (১৭), স্বামী- খায়রুল ইসলাম, পিতা- মানিক মিয়া, মাতা- আলেয়া বেগম, গ্রাম- রসুলপুর, থানা- ফতুল্লা, জেলা- নারায়নগঞ্জ ৫. রাফিউল ইসলাম (২২), পিতা- সাইফুল ইসলাম, মাতা- রেবা সুলতানা, গ্রাম- মাইজবাড়ী, থানা- কাজীপুর, জেলা- সিরাজগঞ্জ ৬. আবিদা (১২ মাস), পিতা- খায়রুল ইসলাম, মাতা- মেঘনা, গ্রাম- রসুলপুর, থানা- ফতুল্লা, জেলা- নারায়নগঞ্জ ৭. শাপলা বেগম (২২), পিতা- মজনু মল্লিক, স্বামী- আঃ ছত্তার, মাতা- আলেয়া বেগম, গ্রাম- শ্রীপুর, থানা- আটঘরিয়া, জেলা- পাবনা ৮. জুবেদা (১৮ মাস), পিতা- আঃ ছত্তার, মাতা- শাপলা বেগম, গ্রাম- শ্রীপুর, থানা- আটঘরিয়া, জেলা- পাবনা ৯. হুজাইফা (০৬), পিতা- আঃ ছত্তার, মাতা- শাপলা বেগম, গ্রাম- শ্রীপুর, থানা- আটঘরিয়া, জেলা- পাবনা ১০. মাইশা ইসলাম (২০), পিতা- সাইদুল ইসলাম, স্বামী- সোহেল তানজীম রানা, গ্রাম- চাদপুর (পিত্রালয়), থানা ও জেলা- নাটোর ১১. মোছাঃ সানজিদা খাতুন (১৮), পিতা- আব্দুল জলিল, স্বামী- সুমন মিয়া, গ্রাম- নিজবলাই, থানা- শরিয়াকান্দি, জেলা- বগুড়া ১২. আমিনা বেগম (৪০), পিতা- জলমত খা, স্বামী- শফিকুল ইসলাম, গ্রাম- দক্ষিন নলতা, থানা- তালা, জেলা- সাতক্ষীরা এবং ১৩. মোছাঃ হাবিবা বিনতে শফিকুল (২০), পিতা- শফিকুল ইসলাম, মাতা- আমিনা বেগম, গ্রাম- দক্ষিণ নলতা, থানা- তালা, জেলা- সাতক্ষীরা।
এর আগে জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে ১১ আগষ্ট শুক্রবার রাত ৮টা থেকে ওই বাড়িটি ঘিরে রাখে পুলিশ। পরে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি) প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান ১২ আগষ্ট ভোররাতে ঘটনাস্থলে পৌঁছান। এরপর শুরু হয় অভিযান। এসময় ‘সোয়াট’ এর ২০/২২ জনের একটি দলও অভিযানে যোগ দেয়। সিটিটিসি প্রধান আসাদুজ্জামানের নেতৃত্বে ‘অপারেশন হিল সাইড’ নামে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এ অভিযান চলে সকাল ১০টা পর্যন্ত ১২ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে।
অভিযান শেষে টাট্টিউলি গ্রামে সিটিটিসি প্রধান মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান সাংবাদিকদের জানান- কুলাউড়ার জঙ্গি আস্তানায় পরিচালিত অভিযানে আটক ১০ জনের বাড়ি দেশের বিভিন্ন এলাকায়। এরা ‘ইমাম মাহদির কাফেলা’ নামক সংগঠনের সদস্য। ‘ইমাম মাহদির কাফেলা’ নামক এ সংগঠনটি দেশে নতুন কার্যক্রম শুরু করেছে।
আমাদের কাছে তথ্য ছিল নতুন একটি উগ্রবাদী সংগঠন ব্যাপক সংখ্যক লোককে উগ্রবাদের দীক্ষা দিচ্ছে। সেসব লোকজন হিজরতের জন্য ঘর থেকে বের হয়েছেন। শুরুতে আমাদের কাছে তথ্য ছিল মৌলভীবাজারের যে কোনো একটি পাহাড়ে তারা তাদের আস্তানাটি তৈরি করেছে। গতকাল আমরা কুলাউড়ায় জঙ্গি আস্তানা সম্পর্কে চূড়ান্ত তথ্য পাই।’
তিনি বলেন- ঢাকায় আমরা ১ জনকে গ্রেপ্তার করেছি- যিনি এ জঙ্গি আস্তানা থেকে তার পরিবারকে আনতে গিয়েছিলেন। জঙ্গি আস্তানা থেকে নারী-পুরুষ মিলিয়ে ১০ জনকে আটক করা হয়েছে। এদের মধ্যে ৪ জন পুরুষ ও ৬ জন নারী। এছাড়া ৩ জন শিশুও রয়েছে।
সিটিটিসি প্রধান বলেন- বিনা বলপ্রয়োগে আমরা কুলাউড়ায় জঙ্গি আস্তানা থেকে তাদেরকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হই। তাদেরকে হেফাজতে নেয়ার পরে আমরা জঙ্গি আস্তানায় ব্যাপক তল্লাশি চালিয়ে প্রায় ৩ কেজি বিস্ফোরক ও ৫০টির মতো ডেটোনেটর উদ্ধার করি- যা দিয়ে গ্রেনেডসহ হাই এক্সপ্লোসিভ তৈরি করা হয়।’ এছাড়া নগদ ৩ লাখ ৬১ হাজার টাকা, প্রশিক্ষণ সামগ্রী, কমব্যাট বুট, বক্সিন ব্যাগ এবং কয়েক বস্তা জিহাদি বই উদ্ধার ও জব্দ করা হয়েছে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন- এটি নতুন একটি সংগঠন, এর নাম ‘ইমাম মাহদির কাফেলা’। বাংলাদেশে যেসব নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আছে, সেগুলোর বাইরে এটি একটি নতুন সংগঠন। এ সংগঠনের যে মূল ব্যক্তি তার নামও আমরা পেয়ে গেছি। আশাকরি, তার পর্যন্ত পৌঁছাতে আমরা সক্ষম হবো।