সুরমার ঢেউ সংবাদ :: রাজধানীর ল্যাব এইড হাসপাতালে ‘ভুল চিকিৎসায়’ তাহসিন হোসেইন (১৭) নামে এক কিশোরের মৃত্যুর অভিযোগ করেছেন স্বজনরা। ল্যাব এইড হাসপাতালে ৩ মাস ধরে চিকিৎসাধীন থাকা তাহসিন হোসাইনকে মৃত ঘোষণা করার পরপরই স্বজনরা এ অভিযোগ জানায়।
মৃতের মা তাজমিন ভূইয়া বলেন, আমার ছেলের পেট ব্যথা ছিল। সে হাটা চলা সব কিছুই করত। এই অবস্থায় আমরা ল্যাব এইডের ডা সাইফুল্লাহকে দেখাই। তিনি বলেন, তার অবস্ট্রাক্টিভ স্মল গাট বা নাড়ির প্যাঁচ রয়েছে। যার কারণে তার পেটে ব্যাথা এবং সে মল ত্যাগ করতে পারছে না। অপারেশনের করতে হবে।
স্বজনদের অভিযোগ, গত ২৮ মার্চ অপারেশন করে তার মলাশয়ের একটুকরো নালী কেটে ফেলে দেওয়া হয়। ডা. সাইফুল্লাহ একে সফল অপারেশন বললেও ক্রমাগত রক্তক্ষরণ হতে থাকে তাহসিনের। এর সাত দিন পর কাউকে না জানিয়ে গত ৬ এপ্রিল দ্বিতীয়বার অপারেশন করেন ডা সাইফুল্লাহ। কিন্তু কোনো সুখবর দিতে পারেননি তিনি। বরং রোগীর অবস্থা আরও খারাপ হতে থাকে। রোগীর ৩ স্থান থেকে ক্রমাগত রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। অপারশনের স্থান থেকে, শরীরে লাগানো টিউবের পাশ দিয়ে এবং স্টুল ব্যাগ দিয়ে যেখানে মল জমা হবার কথা থাকলেও শুধুই রক্ত বের হচ্ছিল।
জান যায়- তাহাসিনকে ৩ মাসে ১৪৪ ব্যাগ রক্ত দেয়া হয়। কিন্তু, তার অবস্থার অবনতি ছাড়া উন্নতি হয়নি। তাজমিন ভূইয়া আরও বলেন- আমার ছেলের পেটের সেলাই করা স্থান ফাঁকা হয়ে ময়লা বের হতো। ফলে, প্রচন্ড ব্যাথা হতো। তারাও খেতে দেয়নি। আমার ছেলেও খেতে পারেনি এই ৩ মাস। সে শুয়ে শুয়ে বিভিন্ন রান্নার ছবি দেখত। আর চিন্তা করত, সুস্থ্য হয়ে সে ইচ্ছামত খাবে। কিন্তু ওরা আমার ছেলেকে মেরে ফেলেছে। আমি এর বিচার চাই। এটা অপমৃত্যু।
তাহাসিনের বাবা মনির হোসেন বলেন- আমি ডা সাইফুল্লাহকে অনেকবার জিজ্ঞেস করছি আমার ছেলের সমস্যা কী। কিন্তু উনি কোনবারই সঠিক করে কিছুই বলতে পারেননি। সে যে আমার ছেলের ভুল চিকিতসা করেছে এটা ১০০ ভাগ নিশ্চিত। কারণ, আমি পিজির সাবেক চিকিৎসক ডা ফজলুল রহমানসহ বেশকয়েকজন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হই। এমনকি ভারত ও ব্যাংককের চিকিৎসকদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে কথা বলছি। ডা সাইফুল্লাহকে অনুরোধ করছিলাম ওনাদের সঙ্গে কথা বলেন। কিন্তু উনি বলেননি। একদিন সময় দিয়েও উনি আসেননি। তিনি আরও বলেন- আমার ছেলে মারা গেছে শুনেই ডা. সাইফুল্লাহ পালিয়ে গেছে।
স্বজনদের অভিযোগ- ‘তাহসিন মারা যাবার পর আমরা সবাই যখন শোকে বিভোর, তখন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ উল্টো পুলিশ ডেকে আমাদের ভয় দেখানোর চেষ্টা করে। এইচএসসি পরীক্ষার্থী তাহাসিন হোসাইন দুই ভাইবোনের মধ্যে বড় ছিলেন। এ বিষয়ে তাদের পক্ষ থেকে কোনো মামলা করা হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে বলা হয়- ‘আমরা মিডিয়ার মাধ্যমে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। মামলা করার পরিকল্পনা আছে।
মিটফোর্ড হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. সাইফুল্লাহ জেনারেল, ল্যাপারোস্কোপিক, কোলোরেক্টাল এবং ক্যান্সার সার্জন। এ বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও চিকিৎসকের সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাদের পাওয়া যায়নি। (সূত্র : আমাদের সময়)