সুরমার ঢেউ সংবাদ : মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার সিন্দুরখান ইউনিয়নের বেলেরতল এলাকার ইসয়ামিন-আজগর দম্পতির মধ্যে দীর্ঘদিনের কলহের জেরে দুটি শিশু সন্তান রেখে স্ত্রী চলে যান মায়ের কাছে। একাকীত্ব ও দুটি শিশুকে লালনপালন করতে গিয়ে মানসিকভাবে অস্থির হয়ে ওঠেন স্বামী আজগর আলী। একপর্যায়ে রাতের আঁধারে শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে ঘুমন্ত স্ত্রী ও শাশুড়িকে খুন করেন। পরে পুলিশের হাতে গ্রেফতারে হয়ে আজগর আলীর ঠাই হয় কারাগারে।
মা ও নানির মৃত্যু। বাবা কারাগারে। অসহায় দুটি শিশুকে দেখার কেউ নেই। ফলে, পুলিশের সহযোগিতায় তাদের ঠাঁই হয়েছে সরকারি এতিমখানায়। মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপারের নির্দেশে সিনি: সহকারী পুলিশ সুপার (শ্রীমঙ্গল সার্কেল) আশরাফুজ্জামান শিশু দুটিকে রেখে এসেছেন সিলেটের একটি এতিমখানায়। শিশু দুটির নাম ইব্রাহিম মিয়া (১০) ও ফাহিম মিয়া (৫)।
জানা গেছে- গত ৫ জুন দুপুর ১২টার দিকে একই উপজেলার আশিদ্রোন ইউনিয়নের পূর্ব-জামসী গ্রামে জায়েদা বেগম (৫৫) ও তার কন্যা ইয়াসমিন আক্তার (৩০) এর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ইয়াসমিনের স্বামী আজগর আলী তাদেরকে খুন করেন।
ইসয়ামিন-আজগর দম্পতির সংসারে দুটি ছেলে সন্তান। হত্যাকা-ের ঘটনার আনুমানিক প্রায় ১৫ মাস আগে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়ার জের ধরে দুই সন্তান রেখে ইয়াসমিন তার মায়ের বাড়িতে চলে যান। সেইথেকে মায়ের বাড়িতেই অবস্থান করে আসছিলেন। অনেক বিচার-সালিশ হলেও ইয়াসমিন আর স্বামীগৃহে ফিরে আসেননি। দুটি সন্তান নিয়ে আজগর আলী তার দাদির সঙ্গে বসবাস করতেন। ইয়াসমিন আসতে রাজি না হওয়ায় প্রতিহিংসা পরায়ণ হয়ে আজগর রাতের বেলা ঘুমন্ত স্ত্রী ও শাশুড়িকে হত্যা করেন। ঘটনার পর আজগরকে সিন্দুরখান এলাকা থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার দায় স্বীকার করেন আজগর।
এরপর থেকে তাদের দুই শিশু সন্তানের দায়িত্ব নেয় মৌলভীবাজার জেলা পুলিশ। কিন্তু দুই শিশুকে দেখার কেউ না থাকায় অবশেষে সিলেটের বাগবাড়ী সরকারি শিশুসদনে (এতিমখানা) পাঠিয়েছে পুলিশ।
মৌলভীবাজারের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (শ্রীমঙ্গল সার্কেল) আশরাফুজ্জামান বলেন, অনেকেই তাদের সুন্দর ভবিষ্যৎ এবং জীবনের নিরাপত্তার জন্য এতিমখানায় পাঠানোর পরামর্শ দিয়েছিলেন। মানবিক দৃষ্টিতে পুলিশও তাই মনে করে। ফলে, সচেতন মহলের পরামর্শ ও পুলিশ সুপারের সার্বিক তত্ত্বাবধানে শিশু দুটিকে সিলেটের একটি সরকারি এতিমখানায় দেয়া হয়েছে।
এদিকে মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার ফারুক আহমদ জেলা পুলিশের ফেসবুক পেজে ওই দুই শিশুর ছবি দিয়ে লিখেছেন, ‘ভালো থাকিস বাবারা, ভালো হয়ে ফিরে আসিস, সমাজের অন্ধকার থেকে দূরে থাকিস, আলো হয়ে জ্বলে উঠিস।’