সুরমার ঢেউ :: মৃতব্যক্তির বিরুদ্ধে টিলা কাটার অভিযোগে নোটিশ দিয়েছে সিলেট বিভাগীয় পরিবেশ অধিদফতর। পরিবেশ অধিদফতরের বিভাগীয় পরিচালক এমরান আহমদ স্বাক্ষরিত নোটিশে পরিবেশ ধ্বংসের দায়ে ক্ষতিপূরণ আরোপ অথবা মামলা দায়েরসহ আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলা হয়েছে।
জানা গেছে- প্রায় সাড়ে ৭ বছর পূর্বে মারা গেছেন সিলেটের গোলাপগঞ্জের ধারাবহর গ্রামের রফিকুল ইসলাম। ওই গ্রামে দীর্ঘদিন ধরে টিলা কাটা হয়েছে। অভিযোগ পাওয়া গেছে, এতে জড়িতদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা না নিয়ে প্রভাবশালীদের ইন্ধনে উল্টো পরিবেশ অধিদফতর মৃত রফিকুল ইসলামসহ সাত জনকে নোটিশ দেয়। নির্ধারিত তারিখে মৃত রফিকুল ইসলাম ছাড়া অন্য অভিযুক্তরা আইনি জটিলতার ভয়ে পরিবেশ অধিদফতরে হাজির না হওয়ার পরেও শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। তবে এতে কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। রহস্যের নোটিশে মৃত রফিকুল ইসলামের ভাতিজা সাইফুল ইসলামকেও ৫ নম্বর অভিযুক্ত করা হয়েছে।
এবিষয়ে পরিবেশ অধিদফতরের বিভাগীয় পরিচালক এমরান আহমদ জানিয়েছেন- গোলাপগঞ্জের ইউএনও অফিস থেকে টিলা কাটার বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসনের কাছে পত্র পাঠানো হয়। এরপর জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে ব্যবস্থা নিতে পরিবেশ অধিদফতরে পাঠানো হয় পত্র। পরবর্তী সময়ে পরিবেশ অধিদফতর থেকে মৃত রফিকুল ইসলামসহ ৭ জনকে হাজির হবার জন্য নোটিশ দেয়া হয়। তিনি আরও বলেন- ‘জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পত্র আসলে আমরা নোটিশ দিয়েছি। এতে যাচাই-বাছাই করার সুযোগও হয়নি। তবে পরবর্তী সময়ে মৃত রফিকুল ইসলামের ছেলে একটি অভিযোগ অফিসে দাখিল করলে আমরা তদন্তের কাজ শুরু করেছি। তবে নোটিশে উল্লিখিত ব্যক্তিদের নির্ধারিত তারিখে পরিবেশ অধিদফতরে হাজির হওয়ার কথা থাকলেও কেউ না আসায় শুনানি হলেও কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি।’
এদিকে, মৃতব্যক্তির বিরুদ্ধে টিলা কাটার দায়ে পরিবেশ অধিদফতরে হাজির হওয়ার নোটিশ পেয়ে হতবাক হয়েছে রফিকুল ইসলামের পরিবার। প্রতিকার চেয়ে ১৫ জানুয়ারি সিলেট বিভাগীয় পরিবেশ অধিদফতরের পরিচালকের কাছে একটি অভিযোগ দাখিল করেছেন মৃতের ছেলে ফখরুল ইসলাম শাকিল। সূত্র জানায়, ২০১৫ সালের ২৫ আগস্ট রাত সাড়ে ৮টার দিকে গোলাপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন রফিকুল ইসলামকে। সে সময় চিকিৎসক ডা. জহির আহমদ মৃত রফিকুল ইসলামের পরিবারের কাছে একটি হাতেলেখা মৃত্যু সনদ দেন। সেই আলোকেই রফিকুল ইসলামের পরিবার গোলাপগঞ্জের ৯নং পশ্চিম আমুড়া ইউনিয়ন থেকে ২০১৫ সালের ২০ ডিসেম্বর মৃত্যু সনদ গ্রহণ করে(সনদ নং-০০০৩২, বহি নং-০০৫)। নোটিশ হস্তান্তরকারী সিলেট বিভাগীয় পরিবেশ অধিদফতরের পরিদর্শক মামুনুর রশিদ বলেন, ‘যার নামে নোটিশ পাঠানো হয়েছে তিনি মৃত না জীবিত তা আমার জানা নেই। আমাকে শুধু অফিস থেকে নোটিশ দেওয়ার কথা জানালে আমি নোটিশ দিয়ে এসেছি।’
মৃত রফিকুল ইসলামের ছেলে ফখরুল ইসলাম শাকিল বলেন, ‘আমার বাবা মারা গেছেন ২০১৫ সালের ২৫ আগস্ট। কিন্তু পরিবেশ অধিদফতর থেকে তার নামে টিলা কাটার অভিযোগে নোটিশ দিয়ে নির্ধারিত তারিখে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। নোটিশ পেয়ে আমরা হতবাক হই। এরপর প্রতিকার চেয়ে একটি অভিযোগ পরিবেশ অধিদফতরে দাখিল করলেও এখনও কোনও সুরাহা হয়নি।’ মৃত রফিকুল ইসলামের ভাতিজা সাইফুল ইসলাম বলেন- ‘আমরা কখনও টিলা কাটিনি। তবুও একটি প্রভাবশালী মহলের ইন্ধনে আমাদের হয়রানি করা হচ্ছে। যারা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানাই এবং আমরা যথাযথ তদন্তের মাধ্যমে এ হয়রানি থেকে মুক্তি চাই।