সুরমার ঢেউ সংবাদ :: একজনমাত্র শিক্ষকেই চলছে স্কুল। ছাত্রছাত্রীদের পাঠদান, অফিসের কাজ ও উপজেলার মিটিং সব কিছু করতে হয় তাকেই। গত ৩ বছর থেকে এভাবেই চলছে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। বিদ্যালয়টির নাম মনুরপাড় আজির উদ্দিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এটি সিলেট জেলার কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার উত্তর রণিখাই ইউনিয়নের মনুরপাড় গ্রামে অবস্থিত। এই স্কুলে ৩ বছর ধরে শিক্ষক খসরুজ্জামান একাই ১ম থেকে ৫ম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের পাঠদান করে আসছেন। এতে শিক্ষার গুণগতমান অর্জন করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে শিক্ষা সংকটে পড়ছে এই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বিদ্যালয়টির ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব থাকায় পাঠদান, দাপ্তরিক কাজের সঙ্গে মাসিক সভায়ও যোগ দিতে হচ্ছে সেই শিক্ষককে। এভাবেই এই স্কুলে পাঠদান চলছে দিনের পর দিন।
সরেজমিন বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের ভবনটি খুব সুন্দর। শ্রেণি কক্ষগুলো নানা রকম ছবি দিয়ে সুন্দর করে সাজানো। দেশের বরেণ্য ব্যক্তিদের নামে প্রতিটি কক্ষের নামকরণ করা হয়েছে। এই বিদ্যালয়ে সবই আছে, শুধু নেই একের অধিক শিক্ষক।
জানা যায়, ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরে তৃতীয় প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি প্রকল্পের আওতায় বিদ্যালয়হীন গ্রামে ১৫’শ বিদ্যালয় স্থাপনের আওতায় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর এই স্কুলটি নির্মাণ করে।
লেখাপড়া কেমন হচ্ছে জানতে চাইলে স্কুলের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী সানজিদা বলে, ‘স্যার এক ক্লাস থেকে অন্য ক্লাসে গেলেই হৈচৈ শুরু হয়। এক ক্লাস হলে অন্য ক্লাস হয় না।’ পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী শিমুল আক্তার বলে, ‘একজন স্যারের দ্বারা সকল ক্লাস নেওয়া সম্ভব হয় না। এক দিনে ১/২টি ক্লাস হলেও অন্য ক্লাস হয় না। তাই অন্যান্য স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের চেয়ে লেখাপড়ায়ও আমরা পিছিয়ে পড়ছি।’ বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির রাহুল, মুস্তাকিন ও মহাইমেনুলসহ কয়েকজন শিক্ষার্থী বলে, শিক্ষক না থাকায় তাদের ক্লাস ঠিকমতো হয় না। নতুন শিক্ষক নেওয়া হলে তাঁদের লেখাপড়া আরও ভালো হতো। বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থীর অভিভাবক আম্বিয়া বেগম বলেন, ‘আমার মেয়ে সানজিদা তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ছে। স্কুলে শিক্ষক ঘাটতি থাকায় মেয়ের পড়াশোনার ক্ষতি হচ্ছে। এই এলাকায় আর স্কুল না থাকায় ছেলেমেয়েদের নিয়ে বিপাকে পড়েছি। এক বছর ধরে শুনছি নতুন শিক্ষক আসবেন। কিন্তু আসছেন না।’
বিদ্যালয়টির পরিচালনা কমিটির সাবেক সভাপতি আজির উদ্দিন বলেন, বিদ্যালয়টিতে শিক্ষক সংকট দীর্ঘদিনের। একজন মাত্র শিক্ষক দিয়েই চলছে বিদ্যালয়টির পাঠদান। এর মধ্যে উপজেলা সদরে সভা হলেই বিদ্যালয় বন্ধ করে তাকেই ছুটে যেতে হয় উপজেলা সদরে। ফলে দিন দিন কমছে শিক্ষার্থী সংখ্যা। দ্রুত সময়ের মধ্যে বিদ্যালয়টিতে শিক্ষক দিয়ে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা সংকট রক্ষার দাবি জানাচ্ছি।’
এ বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক খসরুজ্জামান জানান, ২০২০ সালের শুরুর দিক থেকে তিনি একাই স্কুলে শিক্ষকতা করে যাচ্ছেন। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে থাকায় প্রায়ই তাঁকে দাপ্তরিক বিভিন্ন কাজে উপজেলা সদরে যেতে হয়। তখন স্কুল বন্ধ রাখতে হয়। শিক্ষক না থাকায় অভিভাবকেরা সন্তানদের এ বিদ্যালয়ে ভর্তি করতে চান না। ফলে কমতে শুরু করেছে এই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সংখ্যা।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. জহিরুল হক বলেন, ২০২০ সালে বিদ্যালয়টি পাঠদান শুরু হয়। কিন্তু তখন থেকেই করোনা চলে আসে। এ বছর শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হবে শিক্ষক নিয়োগ হলে।