সুরমার ঢেউ সংবাদ :: প্রভাবশালীরা ভাগ করে নিলেন শিকারীর কবল থেকে উদ্ধার হাকালুকি হাওরের অতিথি পাখি। ঘটনাটি ঘটেছে বড়লেখা উপজেলার মুর্শীবাদকুরা গ্রামে।
হাকালুকি হাওরে বিষটোপ দিয়ে অর্ধশতাধিক হাঁস জাতীয় পাখি শিকারের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় হুসেন আহমদ (২৬) নামে এক পাখি শিকারিকে আটক করা হলেও তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। রহস্যজনক কারণে তাকে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বনবিভাগের হাকালুকি বিটের দায়িত্বে থাকা বনপ্রহরী মোতাহার হোসেনের বিরুদ্ধে। এমনকি শিকারিকে বাঁচাতে তিনি পাখি শিকারের প্রকৃত তথ্যও লুকিয়েছেন। অসাধু পাখি শিকারি হুসেন আহমদ উপজেলার মুর্শীবাদকুরা গ্রামের আলা উদ্দিনের ছেলে।
এদিকে, শিকার করা পাখিগুলো জনপ্রতিনিধিসহ স্থানীয় প্রভাবশালীরা ভাগবাটোয়ারা করে নিয়েছেন বলে নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় পরিবেশ কর্মীরা।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, হুসেন আহমদ হাকালুকি হাওরের একটি বিলে বিষটোপ দিয়ে অর্ধশতাধিক হাঁস জাতীয় দেশিয় ও অতিথি পাখি শিকার করেন। শনিবার সকালে তিনি পাখিগুলো বস্তায় ভরে স্থানীয় কানুন গোবাজারে বিক্রির জন্য নিয়ে যান। খবর পেয়ে বন্যপ্রাণি ব্যবস্থাপনা ও সংরক্ষণ বিভাগের হাকালুকি বিটের দায়িত্বে থাকা বনপ্রহরী মোতাহার হোসেন পাখিসহ হুসেনকে আটক করেন। পরে তাকে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বারের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। এসময় স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সামনে ‘ভবিষ্যতে এধরনের গর্হিত কাজ করবেন না’ মর্মে হুসেন মুচলেকা প্রদান করায় তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানিয়েছে, শিকারিকে ছেড়ে দেয়ার পর উদ্ধার পাখিগুলো স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রভাবশালীরা ‘ভাগবাটোয়ারা’ করে নিয়েছেন।
তবে পাখি শিকারি হুসেনের কাছ থেকে আদায়কৃত লিখিত মুচলেকায় উল্লেখ করা হয়, শনিবার সকালে হুসেন আহমদ নিজের জমিতে ধান রোপণ করতে গেলে তিনি তিনটি মরা হাঁস পাখি পড়ে থাকতে দেখেন এবং তা বস্তায় ভরে স্থানীয় বাজারে নিয়ে যান। খবর পেয়ে বনপ্রহরী মোতাহার হোসেন তাকে আটক করেন। স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, অর্ধশতাধিক হাঁস পাখি শিকার করা হলেও শিকারিকে বাঁচাতে প্রকৃত তথ্য গোপন করেন বনপ্রহরী মোতাহার হোসেন। এর পেছনেও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জড়িত। অভিযোগ রয়েছে, বনপ্রহরী মোতাহার হোসেন প্রায়ই পাখি শিকারে জড়িত কাউকে আটক করলে উৎকোচে ছেড়ে দেন।
বনপ্রহরী মোতাহার হোসেন বলেন, ‘হুসেন নিজের জমিতে ধান রোপণের সময় তিনটি মরা হাঁস পাখি পান। এগুলো তিনি বাজারে নিয়ে এলে আমি তাকে আটক করি। পরে তাকে চেয়ারম্যান ও মেম্বারের কাছে নিয়ে যাওয়া হলে তিনি ‘ভবিষ্যতে এধরনের গর্হিত কাজ করবেন না’ বলে মুচলেকা দেওয়ায় ছেড়ে দেওয়া হয়। পরে তিনটা পাখি পানিতে ফেলা হয়।’ পাখি শিকারিদের টাকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেছেন।
স্থানীয় পরিবেশ কর্মী সাঈব আহমদ ইয়াছের বলেন, পাখিগুলো জমিতে মরা থাকলে হুসেন আহমদ পাখিগুলো বাজারে নিয়ে আসবেন কেন। আর তিনটি পাখি বস্তায় ভরে আনতে হবে কেন? মরা হলে হুসেনকে মুচলেকা দিতে হবে কেন? তাতে প্রমাণ হয় হুসেন বিষটোপে পাখি শিকার করে বিক্রির জন্য বস্তায় ভরে বাজারে নিয়ে আসেন। তিনি ক্ষোভের সাথে আরো বলেন, প্রায়ই হাওরে পাখি শিকার করা হচ্ছে। কখনও পাখি শিকারিরা ধরা পড়লে তার কাছ থেকে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। এই কাজটা জনপ্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্টরাই করছেন। যেখানে প্রাণপ্রকৃতি রক্ষায় তারা কাজ করবেন, সেখানে তারা শিকারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে তাকে ছেড়ে দিচ্ছেন। এতে করে শিকারিরা বেপরোয়া হয়ে উঠছে। এভাবে চলতে থাকলে কখনও পাখি শিকার বন্ধ হবে না।
বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের ডিওএফ রেজাউল করিম চৌধুরী জানান- অভিযোগ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে দেখবেন।