সুরমার ঢেউ সংবাদ :: পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেছেন ১৯৭১ সালে পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ) সঙ্গে পশ্চিম পাকিস্তান (বর্তমান পাকিস্তান) অন্যায় অবিচার করেছে। আর, এজন্যই বৃহত্তর পাকিস্তান রাষ্ট্র ভেঙ্গে গিয়েছিল। ৩ নভেম্বর বৃহস্পতিবার লং মার্চে তেহরিক-ই ইনসাফ (পিটিআই) দলের প্রধান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের উপর বন্দুক হামলার পর ৪ নভেম্বর শুক্রবার হামলার বিষয়ে জানাতে গিয়ে বাংলাদেশের প্রসঙ্গ টানলেন তিনি। পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) ইউটিউব চ্যানেল থেকে ইমরান খানের ওই বক্তব্য সরাসরি প্রচার করা হয়।
তার ওপর সঙ্গে অন্যায়-অবিচার করা হচ্ছে বলতে গিয়ে বাংলাদেশের প্রসঙ্গও টানেন ইমরান খান। তার দলের সঙ্গে জুলুম হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে কী হয়েছিল ? সবচেয়ে বড় যে রাজনৈতিক দল নির্বাচনে জিতেছিল, তাদের ওপর দমন-পীড়ন চালিয়েছিল সামরিক বাহিনী। তাদের যে অধিকার ছিল, তা দেয়া হয়নি।
ইমরান বলেন, ‘১৮ বছর বয়সে অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে ১৯৭১ সালে খেলতে গিয়েছিলাম পূর্ব পাকিস্তানে। পাকিস্তানের গণমাধ্যমের ওপর তখন বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছিল। আমার জানা ছিল না, সেখানকার মানুষের ভেতরে কী পরিমাণ ঘৃণা জমেছিল। কেন ঘৃণা জমেছিল ? তারা নির্বাচনে জিতেছিল আর আমরা তাদের সেই অধিকার দিচ্ছিলাম না। প্রধানমন্ত্রী তাদের হবার কথা। কিন্তু, আমরা এখানে (পশ্চিম পাকিস্তানে) বসে সিদ্ধান্ত নিলাম, আমরা তাদের প্রধানমন্ত্রী হতে দেব না।’
ইমরান খান বলেন, পশ্চিম পাকিস্তান অন্যায় অবিচার না করলে বৃহত্তর পাকিস্তান রাষ্ট্র ভেঙ্গে যেতোনা। ইমরান খানের দাবি ৮০-র দশকে যখন তিনি বাংলাদেশে খেলতে এসেছিলেন তখন স্টেডিয়ামের ভিতরে এবং বাইরে অনেক বাংলাদেশিকে ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’ স্লোগান দিতে শুনেছিলেন। এ থেকে তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, পূর্ব পাকিস্তানিরা বৃহত্তর পাকিস্তান রাষ্ট্র ভাঙ্গার জন্য দায়ী নয় বরং পশ্চিম পাকিস্তানিদের অন্যায় অবিচারের কারণেই পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ স্বাধীন হতে চেয়েছে।
‘(বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের) ১৮ বছর পর পাকিস্তানের অধিনায়ক হিসেবে বাংলাদেশে ভারতের বিরুদ্ধে দুটি প্রদর্শনী ম্যাচ খেলতে গিয়েছিলাম। দুই ম্যাচের সিরিজ আমরা জিতে গিয়েছিলাম। আমরা পশ্চিম পাকিস্তানিরা তাদের অধিকার কেড়ে নেওয়ায় ও ন্যায়বিচার না করায় যে দেশে ১৯৭১ সালে আমাদের বিরুদ্ধে এত ঘৃণা ছিল, সেখানের স্টেডিয়ামে উপস্থিত ৫০,০০০ মানুষ একটাই স্লোগান দিচ্ছিলেন- পাকিস্তান জিন্দাবাদ, পাকিস্তান জিন্দাবাদ।’
পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘(সেই প্রদর্শনী ম্যাচ যেখানে খেলা হয়েছিল, সেই) স্টেডিয়াম থেকে হোটেল পর্যন্ত রাস্তার দুধারে প্রচুর মানুষ দাঁড়িয়েছিলেন। পাকিস্তান জিন্দাবাদ স্লোগান উঠছিল। তখন আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে আমরা ওদের উপর কতটা অবিচার করেছি। ওরা আমাদের ছেড়ে দিতে চাইতেন না। কিন্তু, আমরা ওদের সঙ্গে ন্যায় বিচার করিনি।’ বৃহস্পতিবার গুলিবিদ্ধ হবার পর শুক্রবার প্রথমবার জনসমক্ষে আসেন ইমরান। লাহোরের হাসপাতালে হুইলচেয়ারে বসেই প্রায় এক ঘণ্টা ভাষণ দেন ইমরান। তার বাঁ পায়ে মোটা করে ব্যান্ডেজ দেখা গিয়েছে।