নিত্য প্রয়াজনীয় পণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা নিন

নিত্য প্রয়াজনীয় পণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা নিন

দেশে নিত্যপণ্যের বাজার লাগামহীন। সরকারের কোন পদক্ষেপেই বাজার নিয়ন্ত্রণে আসছে না। এতে সাধারণ মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। তাদের দিন কাটছে কষ্টের মধ্যে। আসলে বলা ভালো- তাদের জীবন আর চলছে না। প্রকৃত বাস্তবতা হলো- মুষ্টিমেয় কিছু মানুষ ছাড়া দেশের বাকি সবার প্রাণ ওষ্ঠাগত। এমন অবস্থায়ও আবার বেড়েছে ডিম, ব্রয়লার মুরগি ও সব ধরনের সবজির দাম। গত কয়েক দিন ধরে দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টির প্রভাব পড়েছে নিত্যপণ্যের বাজারে। প্রতিটি শাকসবজির দাম কেজিতে পাঁচ থেকে ১০ টাকা বেড়ে গেছে। ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, বৃষ্টির কারণে কৃষক ক্ষেত থেকে ঠিকমতো সবজি তুলতে পারছেন না। ফলে বাজারে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম হওয়ায় দাম কিছুটা বেড়েছে। তবে ক্রেতাসাধারণের দাবি, বৃষ্টির অজুহাতে সব ধরনের সবজির দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা।
পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত একাধিক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, গত সপ্তাহে খুচরা বাজারে প্রতি ডজন ডিম ছিল ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকা। ডজনে ১৫-২০ টাকা দাম বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ১৪৫-১৫০ টাকায়। ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা কেজি দরে। দু’দিন আগেও যা বিক্রি হয় ১৬০ টাকা কেজি। ২০ টাকা দাম বেড়ে সোনালি মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০০-৩২০ টাকা। লেয়ার মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৭০ থেকে ২৮০ টাকা। বাজারে শসা প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকা। লম্বা বেগুনের কেজির দর ৭০ টাকা। গোল বেগুন ৯০-১০০ টাকা, টমেটো ১৩০ টাকা, শিমের কেজি ১৬০ টাকা। এ ছাড়া করলা ৮০ টাকা কেজি, চালকুমড়া প্রতিটি ৬০ টাকা, প্রতিটি লাউ আকারভেদে ৬০-৭০ টাকা, মিষ্টি কুমড়ার কেজি ৫০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০ টাকা, পটোল ৬০ টাকা, ঢেঁড়স ৭০ টাকা, কচুরলতি ৮০, পেঁপের কেজি ৪০, ধুন্দলের দর ৬০ টাকা কেজি। বাজারে কাঁচামরিচ প্রতি কেজি ১০০-১২০ টাকা, কাঁচকলার হালি ৫০ টাকা, লেবুর হালি ১৫ থেকে ২০ টাকা বিক্রি হতে দেখা যাচ্ছে। শুকনা মরিচের কেজি ৪০০-৪৫০ টাকা। আলু ৩০ টাকা কেজি, দেশী পেঁয়াজ ৫০ টাকা আর ভারতীয় পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা। রসুনের কেজি ৪০-৪৫ টাকা। চীনা রসুনের দর কেজি প্রতি ১৪৫-১৫০ টাকা। আদা বিক্রি হচ্ছে ৯০-১১০ টাকা কেজি দরে। খোলা চিনি প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকায়। প্যাকেট চিনির দর কেজি প্রতি ৯৫ টাকা। আর লাল চিনির কেজি ১০০ টাকা। দেশী মসুরের ডাল ১৩০ টাকা কেজি। ভারতীয় মসুরের ডালের কেজি ১০০ টাকা। লবণের কেজি ৩৮-৪০ টাকা। ভোজ্যতেল বিক্রি হচ্ছে ১৯৫ টাকায়। গরুর গোশত ৬৬০-৬৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। খাসির গোশতের কেজি ৯০০ টাকা।
আমরা জানি,করোনাকাল থেকে দেশের বেশির ভাগ মানুষের আয় কমে গেছে। তা আর বাড়েনি। বরং দিন দিন পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটছে। কিন্তু জীবনযাত্রার ব্যয় আগের তুলনায় বেড়েছে অনেক যার কারণে স্বল্প আয়ের মানুষ ব্যয় সঙ্কোচন নীতি নিয়েও কুলিয়ে উঠতে পারছেন না। আসলে নিত্যমূল্যের জাঁতাকলে চিঁড়েচ্যাপটা তারা। এ অবস্থায় গরিবের খাদ্যতালিকায় শীর্ষে থাকা ডিম ও ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়ে যাওয়া মানে, সাধারণ মানুষের আমিষের ঘাটতিতে পতিত হওয়া। আর সবজির বাজার চড়া হওয়ার অর্থ- তাদের খাবার গ্রহণ কমিয়ে দেয়া। এতে দেশের সার্বিক জনস্বাস্থ্য ভঙ্গুর হয়ে পড়বে।
আমরা মনে করি, নিত্যপণ্যের বাজারে অস্থিরতা মূলত সরকারি কর্তৃপক্ষের বাজার-ব্যবস্থাপনায় নজরদারিতে দুর্বলতা। এ দুর্বলতার সুযোগে অসাধু ব্যবসায়ীরা ক্রেতাসাধারণের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। তাই জনসাধারণের স্বার্থ রক্ষায় কঠোরভাবে বাজারে নজরদারি বাড়াতে হবে। তা না হলে সাধারণ মানুষ খাদ্য ঘাটতিপুরণে ব্যর্থ হবে আমরা পরিণত হবে মেধাহীন খর্ব দুর্বল জাতিতে। তাই সংশ্লিষ্ট সবার উচিত বিষয়টিকে গুরুত্বে সাথে নিয়ে সমাধান দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *