সুরমার ঢেউ সংবাদ :: ব্রিটিশ-বাংলাদেশি ৭ ব্যবসায়ী বাংলাদেশে বিনিয়োগ করে বিপাকে। তাদেরকে একটি মামলায় গ্রেফতার করে ৮ দিন কারাগারে রাখার পর ২৯ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার তারা জামিন পেয়েছেন। বাংলাদেশে তাদের প্রতিষ্ঠিত একটি ইনস্যুরেন্স কোম্পানির বার্ষিক সাধারণ সভায় যোগ দিতে ঢাকায় এলে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের ইনস্যুরেন্স কোম্পানি থেকে বীমার টাকা না পেয়ে ৪ জন গ্রাহক মামলা করলে আদালত গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন।
কিন্তু বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ ব্যবসায়ীরা বলছেন- ওই ৭ জনকে হয়রানি করার জন্যই এ মামলা দায়ের করা হয়েছে। তারা মনে করছেন- এর ফলে ভবিষ্যতে ব্রিটেন প্রবাসীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার ক্ষেত্রে নিরুৎসাহিত হতে পারেন।
মাগুরার ৩ জন এবং ঝিনাইদহের ১ জন মাগুরায় মামলাটি দায়ের করেছিলেন। তাদের অভিযোগ হচ্ছে- বীমার মেয়াদ শেষ হলেও হোমল্যান্ড লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানি থেকে তারা টাকা পাচ্ছেননা। হোমল্যান্ড লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানির ৭ জন পরিচালকের বিরুদ্ধে মামলাটি করা হয়। তারা বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ ব্যবসায়ী। ৭ জন পরিচালকের আইনজীবী একেএম শফিকুজ্জামান মাগুরা থেকে বিবিসি বাংলাকে বলেন- বৃহস্পতিবার তাদেরকে ঢাকা থেকে মাগুরার আদালতে আনা হয়। শুনানি শেষে বিচারক তাদের জামিন মঞ্জুর করেন। এ কোম্পানির ১ জন চেয়ারম্যান, ১ জন ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ৩ জন পরিচালক আছে। এদের কারও বিরুদ্ধে মামলা করা হয় নাই। শুধুমাত্র ৭ জন লন্ডন প্রবাসী পরিচালকের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। প্রতিপক্ষরা তাদেরকে মামলায় গ্রেফতার করিয়েছে এবং এ মামলাটা করিয়েছে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে। তবে, প্রতিপক্ষ কারা সেটি ব্যাখ্যা করেননি আইনজীবী শফিকুজ্জামান।
হোমল্যান্ড লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানি গঠিত হয় ১৯৯৬ সালে এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে তাদের শাখা রয়েছে। এ কোম্পানির চেয়ারম্যান ছাড়াও আরো ১০ জন পরিচালক আছেন। তাদের মধ্যে ৭ জন ব্রিটেনে ও ১ জন আমেরিকায় থাকেন।এছাড়া চেয়ারম্যান এবং আরও ২ জন পরিচালক বাংলাদেশে থাকেন। কিন্তু, বীমার টাকা না পাওয়ায় বেছে বেছে ৭ জনের নামে মামলা করার বিষয়টিতে বিস্ময় প্রকাশ করছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ ব্যবসায়ীরা। তাদের মধ্যে অন্যতম ব্যবসায়ী বজলুর রশিদ (এমবিই)। বাংলাদেশে একটি বীমা খাতে তিনিও বিনিয়োগ করেছেন।
বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ ৭ জন পরিচালককে গ্রেফতারের বিষয়টি বজলুর রশিদের কাছে সাদামাটা মনে হচ্ছেনা। তিনি বলেন- গ্রাহকরা যদি তাদের টাকা না পায় তাহলে কোম্পানি ব্যবস্থাপনার সাথে যারা জড়িত তাদেরকে গ্রেফতার করতে হবে। কিন্তু, তাদের কাউকে গ্রেফতার না করে শুধুমাত্র বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ ৭ জন পরিচালককে গ্রেফতার করা হয়েছে। আমাদের কাছে মনে হচ্ছে এটা সেট-আপ (আয়োজন করা), বলেন বজলুর রশিদ। ব্রিটেন প্রবাসী বাংলাদেশী ব্যবসায়ী এবং অভিযুক্তদের আইনজীবী মনে করছেন, এ মামলার পেছনে ষড়যন্ত্র আছে। ৭ জন প্রবাসী পরিচালকের বিরুদ্ধে মামলার মাধ্যমে হয়রানি করে তাদেরকে কোম্পানি থেকে সরাতে চাইছে কেউ।
হোমল্যান্ড ইনস্যুরেন্সের সিইও বিশ্বজিত কুমার মণ্ডল বলেন- কোম্পানির পরিচালকদের মধ্যে ভালো সম্পর্ক রয়েছে এবং মামলার বিষয়টি তারা আগে থেকে জানতেনও না। তিনি বলেন- আমি যখন এখানে ইন্টারভিউ দিয়েছি তখন সাবেক চেয়ারম্যান এবং বর্তমান চেয়ারম্যান – দুজনের সাথেই আমার ইন্টারভিউ হয়েছে। এরপর অন্যান্য ডিরেক্টরদের সাথেও আমার ইন্টারভিউ হয়েছে। আমেরিকায় যিনি থাকেন ওনার সাথেও আমার জুম-এ ইন্টারভিউ হয়েছে। তাছাড়া বর্তমান চেয়ারম্যানকে অন্যান্য পরিচালকরা মিলেই নির্বাচিত করেছেন বলে তিনি উল্লেখ করেন।
কিন্তু, যেভাবে প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের গ্রেফতার করা হয়েছে তাতে ভবিষ্যতে বাংলাদেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে অনেকে চিন্তা করবে বলে মনে করেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ ব্যবসায়ী বজলুর রশিদ। ব্রিটেন প্রবাসী ব্যবসায়ীরা বলছেন- বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার ক্ষেত্রে এমনিতেই নানা সমস্যা আছে। তারপরেও সেসব অতিক্রম করে তারা দেশে বিনিয়োগ করতে চান। কিন্তু, এ ধরণের মামলা হয়রানির নজীর তৈরি হলে সেটি বাংলাদেশে বিনিয়োগ পরিস্থিতির জন্যই খারাপ হবে বলে তারা মনে করেন।