সুরমার ঢেউ সংবাদ :: ধর্ম অবমাননা মামলায় রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন (রাসআ) এর কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার প্রীতম দাশকে গ্রেফতার করেছে শ্রীমঙ্গল পুলিশ। শ্রীমঙ্গল পৌর ছাত্রলীগ কর্মী মাহবুবুল আলম ভূঁইয়ার দায়েরী ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় ৯ সেপ্টেম্বর শুক্রবার সন্ধ্যায় শ্রীমঙ্গল শহরের একটি বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পাকিস্তানি লেখক সাদত হোসেন মান্টোর একটি উক্তি নিয়ে ফেসবুকে গত ৮ জুলাই প্রীতম দাশের দেয়া একটি পোস্টের স্ক্রিনশট শ্রীমঙ্গল পৌর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবেদ হোসেন গত ২৯ আগস্ট ফেসবুকে শেয়ার করে তাকে আইনের আওতায় আনার দাবি জানালে শ্রীমঙ্গলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। প্রীতমের বিচার ও গ্রেপ্তার চেয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেন বেশিরভাগ স্থানীয় ছাত্রলীগ কর্মী। তারা মান্টোর ওই উক্তিতে ধর্মীয় অবমাননার দাবি করে। এতে নিরাপত্তা শঙ্কায় আত্মগোপনে চলে যান প্রীতম দাশ। এরপর গত সপ্তাহে তার বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করা হয়।
এদিকে, ধর্ম অবমাননার মামলায় প্রীতম দাশকে গ্রেপ্তারের ঘটনায় বিভিন্ন মহলে হচ্ছে সমালোচনা। বলা হচ্ছে- পাকিস্তানি লেখক সাদত হোসেন মান্টোর একটি উক্তি নিয়ে আরও অনেকে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন। নিবন্ধও লিখেছেন। গত ৭ জুলাই একটি অনলাইন সংবাদ মাধ্যমে ‘নও পাকিস্তানি নও বাংলাদেশ’ শিরোনামের একটি লেখায় পাকিস্তানের দুর্দশার বর্ণনা করতে গিয়ে মান্টোর ওই উদ্ধৃতি ব্যবহার করেন ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন। তখন ধর্ম অবমাননার অভিযোগ উঠেনি। মান্টোর একই উদ্ধৃতি নিয়ে গত ২৮ জুলাই সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের পুত্র ও মৌলভীবাজার-২ আসনের বিএনপি দলীয় সাবেক সাংসদ এম নাসের রহমান নামের ফেসবুক পেজ থেকেও একই স্ট্যাটাস দেয়া হয়। তখনও ধর্ম অবমাননার কোন অভিযোগ উঠেনি। অথচ, প্রীতম দাশ সেই লেখা থেকে উদ্ধৃতি নিয়ে পোস্ট দেয়ার প্রায় দুইমাস পর তার বিরুদ্ধে ‘ধর্ম অবমাননার’ অভিযোগ তোলা হয়েছে।
সম্প্রতি মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে চা শ্রমিকদের আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে ২৭ আগস্ট শ্রীমঙ্গল চৌমোহনা চত্বরে আয়োজিত ‘রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন’ এর সমাবেশে হামলার ঘটনায় আয়োজকরা শুরু থেকেই স্থানীয় ছাত্রলীগের একটি অংশকে অভিযুক্ত করছেন। ২৯ ও ৩০ আগস্ট শ্রীমঙ্গলে অনুষ্ঠিত রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন’র দুটি সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন প্রীতম দাশ। এতে তিনি অভিযোগ করেন- শ্রীমঙ্গল উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবেদ হোসেনের নেতৃত্বে তার অনুসারীরা সমাবেশে হামলা চালায়। এতে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন’র প্রায় ১০ জন কর্মী আহত হন। ২৯ আগস্টের সংবাদ সম্মেলনের পরপরই প্রীতমের ৮ জুলাইয়ের পোস্টে ধর্ম অবমানননার অভিযোগ এনে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন শ্রীমঙ্গল উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবেদসহ অন্যরা।
আবেদ হোসেন ২৯ আগস্ট নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে ৮ জুলাইয়ে দেয়া প্রীতমের পোস্টের স্ক্রিনশট যুক্ত করে একটি পোস্টে (বাক্য, বানান অপরিবর্তীত), ‘আমি তার ফেসবুকে ৭ জুলাইয়ের একটি পোস্টের স্ক্রিনশট দিলাম যেখানে সে দেশের অবস্থা নাজেহাল বুঝাতে গিয়ে আমাদের ইসলাম ধর্মকে ব্যাঙ্গ করে উদাহরণ দিয়েছে, জুমার নামাজ, মুসজিদের ইমাম এবং মুসল্লীদের নামাজ পরাকে ব্যাঙ্গ করেছে। আমি শ্রীমঙ্গল উপজেলা প্রশাসন ও শ্রীমঙ্গল থানার দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই এ ধরণের রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কথা বলতে যারা পবিত্র ধর্ম নিয়ে উসকানিমূলক কথা বলে তাদেরকে অনতিবিলম্বে আইনের আওতায় এনে তারা কার এজেন্ডা বাস্তবায়নে করতে চায় তা বের করা দরকার।‘ আবেদের এ স্ট্যাটাসের পর তার অনুসারী ছাত্রলীগ কর্মীসহ আরও অনেকে বিষয়টি নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন। এরপর শ্রীমঙ্গলে বিক্ষোভ মিছিল হয় । এ মিছিল থেকে প্রীতমকে গ্রেপ্তারে শুক্রবার পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয়া হয়।
এর প্রেক্ষিতে প্রীতম দাশ বলেছিলেন- ‘চা শ্রমিকদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে অনুষ্ঠিত আমাদের সমাবেশে আবেদের নেতৃত্বে হামলার বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে আমি তাদের নাম পরিচয় প্রকাশ করেছিলাম। এ কারণেই সে ক্ষুব্ধ হয়ে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচার চালিয়ে উস্কানি ছড়াচ্ছে।’ প্রীতম দাশ অঅরও বলেছিলেন- ‘উদ্ভুত পরিস্থিতিতে আমি বাসায় যেতে পারছিনা। আমার পরিবারও আতংকে আছে। পুরো উপজেলার ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।’