সুরমার ঢেউ সংবাদ :: মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলা প্রকৌশলী মোঃ আমিনুল ইসলাম মৃধাকে অপসারণের লিখিত দাবি জানিয়েছেন উপজেলার সব ইউপি চেয়ারম্যান। উপজেলার ১৩ ইউপি চেয়ারম্যান এ অভিযোগ দিয়েছেন কুলাউড়া উপজেলা চেয়ারম্যান বরাবরে- যার অনুলিপি স্থানীয় সংসদ সদস্য, উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ এলজিইডি’র বিভিন্ন দপ্তরে প্রেরণ করা হয়েছে। এছাড়া, ওই প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মেরামত কাজে প্রধান শিক্ষকদের কাছে ঘুষ দাবিসহ বিভিন্ন হয়রানীর প্রতিকার চেয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকবৃন্দও অভিযোগ দিয়েছেন উপজেলা চেয়ারম্যান বরাবরে। ওই উপজেলা প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা ও দূর্নীতির বিস্তর অভিযোগ।
এদিকে ২৪ জুলাই রোববার উপজেলা পরিষদের মাসিক সাধারণ সভায় সংসদ সদস্য সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদ, উপজেলা চেয়ারম্যান একেএম সফি আহমদ সলমান ও ইউএনও মাহমুদুর রহমান খোন্দকারের উপস্থিতিতে ওই প্রকৌশলীকে বক্তব্য দেয়ার সুযোগ দিলে সভায় হট্টগোল বাঁধে। এসময় উপজেলার কাদিপুর ইউপি চেয়ারম্যান জাফর আহমদ গিলমান ও ভাটেরা ইউপি চেয়ারম্যান সৈয়দ একেএম নজরুল ইসলাম ক্ষোভ প্রকাশ করে তাদের বক্তব্যে বলেন- উপজেলা প্রকৌশলী আমিনুল ইসলাম একজন ঘুষখোর ও দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তা। তাকে সভায় বক্তব্য দেয়ার সুযোগ দিলে আমরা চেয়ারম্যানবৃন্দ সাধারণ সভা বয়কট করবো। ইতিপূর্বে আমরা প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন বিষয়ে অভিযোগ এনে অভিযোগ দিয়েছি। তাকে অপসারণ না করা পর্যন্ত আমরা আগামীতে পরিষদের কোন সভায় অংশগ্রহণ করবো না। এসময় এমপি সুলতান মনসুর ও উপজেলা চেয়ারম্যান সফি আহমদ সলমান পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ইউপি চেয়ারম্যানদের আশ^স্ত করে বলেন- উপজেলা প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে সকল চেয়ারম্যানবৃন্দ ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দ যে অভিযোগ এনেছেন, তা আমরা প্রশাসনিকভাবে এলজিইডি’র উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে অবহিত করবো। তারা তদন্তক্রমে তাঁর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
জানা গেছে- আমিনুল ইসলাম মৃধা ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে কুলাউড়ায় যোগদানের পর থেকে ইউনিয়নের উন্নয়ন কাজের প্রাক্কলন প্রণয়নে, প্রকল্প বাস্তবায়নে, এডিপির প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নে বিভিন্ন অজুহাতে সময়ক্ষেপণ, স্বেচ্ছাচারিতা, নথি স্বাক্ষরের দীর্ঘসূত্রতা, হয়রানী ও অসদাচরণ করে আসছেন। ঘুষের টাকা না দেয়া পর্যন্ত তিনি কোন বিলপত্রে/কাগজে স্বাক্ষর করেননা। কোন কাজে বার বার ফোন দিলে চেয়ারম্যান-মেম্বারদের ফোন রিসিভ করেননা। তাঁর এমন অসদাচরণ, দূর্নীতি, ঘুষ ছাড়া নথি ছাড় না দেয়া, ঘুষের বিনিময়ে স্ক্রীম পরিবর্তন, পরিবর্ধন এবং স্বেচ্ছাচারিতার বিষয়ে ভুক্তভোগী হবার পর উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে মৌখিকভাবে অবহিত করার পর তারা কাজের বিল পান। জনপ্রতিনিধি হিসেবে নূন্যতম সম্মান তাঁর কাছ থেকে পাননি বলে অভিযোগে উল্লেখ করেন চেয়ারম্যানগণ।
এদিকে, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মেরামত কাজে ২ লাখ টাকা বরাদ্দের বিপরীতে কাজের প্রাক্কলন ও প্রত্যয়ন দিতে স্কুল প্রধান শিক্ষকদের কাছে ৫-১০ হাজার টাকা ঘুষের দাবিতে হয়রানি করে আসছেন বলে অভিযোগ করেন শিক্ষকরা। আর, সরকারি অফিসে এসি না থাকায় অনেক সময় ওই প্রকৌশলী কুলাউড়া পৌর শহরের তাঁর পছন্দের এক ঠিকাদারের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বসে অফিসের দাপ্তরিক কাজ চালান। অফিস চলাকালীন সময়ে অফিসিয়াল পোশাক না পড়ে টিশার্ট (গেঞ্জি) পরিধান করেন।
কুলাউড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও বিএইচ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুল কাইয়ুম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন- উপজেলা প্রকৌশলী আমিনুল ইসলাম মৃধা উপজেলার সব প্রাইমারী স্কুলের মেরামত কাজে প্রাক্কলণ ও প্রত্যয়নপত্র দিতে ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করেন। আমার ৩৫ বছরের শিক্ষকতা জীবনে এ ধরণের ঘুষখোর ও দূর্নীতিবাজ অফিসার কখনো দেখিনি।
উপজেলা প্রকৌশলী আমিনুল ইসলাম মৃধা তাঁর বিরুদ্ধে আনীত সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন- চেয়ারম্যান ও শিক্ষকদের অভিযোগগুলো সঠিক নয়। ইউপি চেয়ারম্যানদের সাথে আমার তেমন কোন কাজ নেই, আমার কাজ উপজেলা পরিষদের সাথে। উপজেলা চেয়ারম্যান একেএম সফি আহমদ সলমান বলেন- উপজেলা প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে সকল ইউপি চেয়ারম্যান ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দসহ পৃথক পৃথক আরো কয়েকটি অভিযোগ পেয়েছি। মাসিক সাধারণ সভায় বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা হয়েছে। অভিযোগের বিষয়টি সভার রেজুলেশনে নথিভুক্ত করে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য এলজিইডি’র উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সিলেট অঞ্চলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী নির্মল কুমার বিশ^াস মুঠোফোনে বলেন- একজন উপজেলা প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে এত অভিযোগ শুনে খুবই আশ্চর্য্য হলাম। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে খুব দ্রুত উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।