সুরমার ঢেউ সংবাদ :: ইতালির উদ্দেশ্যে যাত্রা করে ২০ দিন ধরে নিখোঁজ রয়েছেন হবিগঞ্জের ৮ যুবক। তাদের সন্ধানে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন মা-বাবাসহ স্বজনেরা। অবিলম্বে দালালদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়াসহ নিখোঁজদের উদ্ধারে সরকারি সহযোগিতা চেয়েছেন তারা। জীবিকার তাগিদে গত ১ ফেব্রুয়ারী লিবিয়া হয়ে ইউরোপের দেশ ইতালি যাবার উদ্দেশ্যে হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলার পুকড়া ইউনিয়নের কাটখাল গ্রামের আব্দুল মমিনের ছেলে মাসুম মিয়া (২২), আব্দুস শহিদের ছেলে রজব আলী (২২), ধলাই মিয়ার ছেলে রুহুল আমিন (২১), অমৃত মিয়ার ছেলে সিদ্দিক আলী (২১), মুছিউর রহমানের ছেলে রুবেল মিয়া (২১), আব্দুল মতিনের ছেলে আব্দুল হেকিম ফয়সল ও একই উপজেলার পুরান পাথারিয়া গ্রামের টেনু মিয়ার ছেলে নাইম মিয়া (২২) এবং লাখাই উপজেলার কাটাইয়া গ্রামের সফিকুল ইসলামের ছেলে জসিম উদ্দিন (২১) বাড়ি থেকে রওয়ানা দেন।
তারা লিবিয়া পৌঁছে পরিবারের লোকজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। সেখানে কিছুদিন অবস্থানের পর দালালরা তাদের পরিবারকে বাকি টাকা দেয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করে। প্রথম দফায় তারা জনপ্রতি ৩ লাখ টাকা করে নিলেও দ্বিতীয় দফায় আরও ৪ লাখ করে হাতিয়ে নেয়। দুই দফায় ৭ লাখ টাকা দেয়ার পর ৩য় দফায় আরও ১ লাখ টাকা করে নেয়। এরপর থেকে তারা নিখোঁজ হয়ে যায়।
তাদের ইতালির উদ্দেশ্যে লিবিয়ায় পাঠিয়েছে কাটখাল গ্রামের বাসিন্দা আমির আলী। তার কাছে তাদের সন্ধান চাইলে সে জানায়- তারা লিবিয়ার কারাগারে আটক আছে। তাদের ছাড়াতে আরও সাড়ে ৩ লাখ টাকা দিতে হবে। এতে হতাশায় পড়েন নিখোঁজ যুবকদের অভিভাবকরা। পরে তাদের সন্ধানের জন্য দালাল আমির আলীকে বারবার চাপ সৃষ্টি করলেও নিখোঁজদের কোনো সন্ধান দিতে পারেনি সে ও তার সহযোগী আলমগীর মিয়া।
এদিকে, বিক্ষুব্ধ হয়ে নিখোঁজদের স্বজনরা ২৮ মে শনিবার বিষয়টি গ্রামবাসীকে জানালে ওই রাতেই গ্রামে এক সভার আয়োজন করা হয়। সভায় আমির আলীকে মানব পাচারকারী হিসেবে চিহ্নিত করে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য রেজুলেশন তৈরি করা হয়। পরদিন ২৯ মে রবিবার দুপুরে সাবেক মেম্বার আফরোজ মিয়ার সভাপতিত্বে নিখোঁজদের সন্ধানের দাবিতে জরুরি সভার আয়োজন করা হয়। সভায় নিখোঁজদের স্বজনরা জানান- আমির আলী ও তার সহযোগী আলমগীর মিয়ার কুমন্ত্রণায় পড়ে অবৈধ পথে ইতালি যাবায় জন্য আকৃষ্ট হন। শুধু তাই নয়, গ্রামের আরও ৫ যুবক ইতালি যাবার জন্য উদ্বুব্ধ হন। পরে আমির আলী ও সহযোগী আলমগীর মিয়ার সঙ্গে জনপ্রতি ৭ লাখ টাকা খরচে ইতালিতে যাবার চুক্তি হয়। এছাড়া লিবিয়াতে যাবার পরই জনপ্রতি আরও ১ লাখ টাকা নিখোঁজ যুবকদের পরিবারের কাছ থেকে হাতিয়ে নেয়া হয়। ওই টাকা নিয়ে আমির আলী বাড়িতে নতুন ভবন নির্মাণ কাজ শুরু করে। আমির আলীর বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে মানবপাচারের অভিযোগ রয়েছে। ওই সভায় আমির আলী ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেয়ার জন্য প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। পরে নিখোঁজদের পরিবারের সদস্যরা বিক্ষোভ মিছিল করে আমির আলী ও তার সহযোগীর বাড়ি ঘেরাও করেন। তবে, অভিযুক্ত আলমগীর জানায়- সে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত নয়। তাকে হয়রানি করার জন্য অভিযুক্ত করা হয়েছে। মূলত আমির আলী নিখোঁজদের লিবিয়ায় পাঠিয়েছে। আমির আলীর বাড়িতে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি এবং তার মোবাইল ফোনও বন্ধ রয়েছে। ফলে, তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।