সুরমার ঢেউ সংবাদ :: সিলেট বিভাগের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় সয়াবিন তেল নিয়ে চলছে তেলেসমাতি। বাজারে তেলের সংকটের সুযোগে অসাধু ব্যবসায়ীরা সয়াবিন তেল মজুত করে অতিরিক্ত মুনাফা লুটতে ব্যস্ত। কিন্তু, তাতে বাধ সেধেছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টায় বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তেল উদ্ধার ও জরিমানা কশরার পাশাপাশি কিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সিলগালাও করে দিয়েছে।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর সিলেট সূত্রে জানা যায়- গত ৮ মে থেকে ৫ দিনে সাড়ে ২৩ হাজার লিটার সয়াবিন তেল জব্দ করা হয়েছে। অনেক মজুতদারকে জরিমানাও করা হয়েছে। পরে এসব জব্দ তেল ক্রেতাদের কাছে ন্যায্যমূল্যে বিক্রি করা হয়েছে। দৈনিক ইত্তেফাকের এক প্রতিবেদনে ওঠে এসেছে এমন তথ্য। গত ৮ মে সিলেট নগরীর কালিঘাট, কাজিরবাজার, লামাবাজার, মদিনা মার্কেট, আখালিয়া ও টুকের বাজারে তেলের ডিলারদের গুদাম ও দোকানে অভিযান চালায় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। তবে, মজুতের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। কিন্তু, অতিরিক্ত দামে তেল বিক্রির দায়ে ৭ প্রতিষ্ঠানকে ১৬ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। ১০ মে নগরীর কালিঘাটে অভিযান চালিয়ে মাহের ব্রাদার্স নামক একটি প্রতিষ্ঠানের গুদাম থেকে ৫ হাজার টন সয়াবিন তেল জব্দ করা হয়। পরে ওই তেল পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতাদের কাছে ন্যায্যমূল্যে বিক্রি করা হয়। এছাড়া, মাহের এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মাহের আহমদকে ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। ১১ মে নগরীর কাজীটুলায় কামাল ব্রাদার্স নামের প্রতিষ্ঠানের মালিক কামাল আহমেদের বাসা থেকে ৪ হাজার ৬৯৯ লিটার সয়াবিন তেল জব্দ করে তা ন্যায্যমূল্যে বিক্রি করা হয়। এছাড়া, কামাল আহমেদকে ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। এ বিষয়ে মজুতকারী ব্যবসায়ী কামাল আহমদ বলেন, ‘আমি অতিরিক্ত দামে তেল বিক্রি করিনি। দোকানে জায়গা না হওয়ায় সেগুলো আমার বাসায় রাখি এবং ন্যায্যমূল্যেই বিক্রি করছিলাম।’
১১ মে সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার চিনাকান্দি বাজারে অভিযান চালিয়ে ১ হাজার লিটার তেল জব্দ করা করা হয়েছে। তেল মজুত রাখায় মালিককে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। পরদিন ১২ মে সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলায় অভিযান চালিয়ে ৬ প্রতিষ্ঠান থেকে ৮ হাজার লিটার তেল জব্দ করা হয়। এসময় তাদের ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের সিলেট কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আমিরুল ইসলাম বলেন, ‘অনেক ব্যবসায়ী মজুত করে বাজারে তেলের সঙ্কট তৈরি করছেন। তারা অতিরিক্ত দামে তেল বিক্রি করছেন এবং অন্য পণ্য না কিনলে তেল বিক্রি করছেন না। অভিযানে আমরা এসব অপরাধের সত্যতা পেয়েছি। আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে।’ সুনামগঞ্জ জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বাজারে তেলের সংকট তৈরি করার চেষ্টা করছেন ব্যবসায়ীরা, আমরা অভিযান চালাচ্ছি, এ পর্যন্ত ৯ হাজার লিটার তেল আমরা উদ্ধার করেছি।’ মৌলভীবাজার থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৪ হাজার লিটার তেল জব্দ করা হয়েছে। এরমধ্যে ১২ মে জেলার বড়লেখায় মেসার্স সামছু অ্যান্ড ব্রাদার্সের গুদাম থেকে মজুতকৃত অবস্থায় ৩ হাজার ৫০০ লিটার তেল জব্দ করা হয়। তেল মজুতের দায়ে ওই প্রতিষ্ঠানসহ চারটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানকে ৫৬ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এ ছাড়া, লখায় মেসার্স সামছু অ্যান্ড ব্রাদার্সকে সিলগালা করা হয়। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর জানায়, তেল মজুদ রাখা ও বেশি দামে তেল বিক্রি করা, বিক্রয় রশিদ প্রদর্শন না করার কারণে এসব জরিমানা করা হচ্ছে। হবিগঞ্জে সয়াবিন তেলের অতিরিক্ত দাম নেওয়ার অপরাধে অর্থদ- করেছে উপজেলা প্রশাসন ও ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের ভ্রাম্যমাণ আদালত। এদিকে, গত ৭ মে থেকে ১২ মে বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত জেলা সদর, নবীগঞ্জ ও শায়েন্তাগঞ্জে তিনটি অভিযান চালানো হয়। এসময় ৫০০ লিটার তেল জব্দ করা হয়। জরিমানা করা হয় ৮ জন ব্যবসায়ীকে।