ইশরাত জাহান চৌধুরী :: মৌলভীবাজারে এবার বিরূপ আবহাওয়া সত্ত্বেও চা উৎপাদন গত বছরের চেয়ে ৫ মিলিয়ন কেজি বৃদ্ধি পেয়েছে। যদি পরিমিত বৃষ্টি হতো তাহলে চলতি বছরে চা উৎপাদনের চমকপদ রেকর্ড হতো বলে মনে করেন চা বিশেষজ্ঞরা। বাংলাদেশ চা বোর্ডের শ্রীমঙ্গলস্থ প্রকল্প উন্নয়ন ইউনিটের পরিচালক ড. এ.কে.এম. রফিকুল হক জানান- প্রতিকুল আবহাওয়ার মধ্যেও চলতি মৌসুমে জুলাই পর্যন্ত চা উৎপাদন হয়েছে ৩৮.৩১ মিলিয়ন কেজি- যা ২০২০ সালের জুলাই মাসে ছিলো ৩৩.৯৯ মিলিয়ন কেজি। তিনি জানান- ২৪ আগষ্ট সকল বাগান থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত মধ্যবর্তী উৎপাদন তালিকা তার হাতে এসে পৌছায়। যার যোগফলে গতবছর জুলাই পর্যন্ত উৎপাদনের চেয়ে চলতি মৌসুমে ৪.৩২ মিলিয়ন কেজি চা বেশি উৎপাদন হয়েছে। উৎপাদনের এ ধারা অব্যাহত থাকলে ও পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হলে এবছর উৎপাদন রেকর্ড হবার সম্ভাবনা রয়েছে।
এ ব্যাপারে শ্রীমঙ্গল জেরিন চা বাগানের ব্যবস্থাপক সেলিম রেজা চৌধুরী জানান- গত বছরের তুলনায় এখন পর্যন্ত তাদের বাগানে প্রায় ৩% চা বেশি উৎপাদন হয়েছে। তিনি জানান- এবছর চায়ের জন্য প্রয়োজনীয় বৃষ্টিপাত হয়নি। গত বছরের তুলনায় এখন পর্যন্ত প্রায় ২০ ইঞ্চি বৃষ্টিপাত কম হয়েছে। গত বছর জুলাই পর্যন্ত বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছিলো ৬০ ইঞ্চি। আর, চলতি মৌসুমে এখন পর্যন্ত রেকর্ড করা হয়েছে ৪০ ইঞ্চি। তিনি জানান- চায়ের জন্য বছরে ৮০ থেকে ১০০ ইঞ্চি বৃষ্টিপাত প্রয়োজন। অন্যদিকে মৌশুমের শুরুর দিকে চা শিল্পখড়ার মূখে পড়ে। তিনি জানান, যদি পরিমিত বৃষ্টিপাত পাওয়া যেতো তাহলে এ বছর চায়ের উৎপাদন শত মিলিয়ন কেজি ছাড়িয়ে যেতো।
এদিকে চলতি বছরে বৃষ্টির মৌসুম প্রায় শেষ। আর খুব বেশি বৃষ্টি পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। শ্রীমঙ্গল আবহাওয়া অফিস সুত্রে জানা যায়- এ বছর শ্রীমঙ্গলে এতো কম বৃষ্টিপাত হয়েছে যা বিগত কয়েক বছরের মধ্যে কম বৃষ্টিপাতের জন্য রেকর্ড বছর হতে পারে।
শ্রীমঙ্গলের সর্বাধিক চা বাগান কোম্পানী ফিনলে টি এর সিইও তাসিন আহমদ চৌধুরী জানান- বছরের শুরুর দিকে তাদেরকে প্রতিকুল আবহাওয়ার মধ্যে পড়তে হয়েছে। কৃত্রিম পানি দিয়ে চা গাছকে বাঁচিয়ে রাখতে হয়েছে। গত দুই মাস ধরে ভালো বৃষ্টিপাত পাওয়ায় উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এখন পর্যন্ত তাদের বাগানগুলোতে গত বছরের তুলনায় প্রায় ২০ শতাংশ চা বেশি উৎপাদন হয়েছে। তবে ২০১৯ সালে চায়ের রেকর্ড বছরের চেয়ে কম। তিনি জানান- মৌসুমের বাকী সময়টুকু পরিমিত বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে আশাব্যঞ্জক উৎপাদন হবে।
এ ব্যাপারে শ্রীমঙ্গল আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়া পর্যবেক্ষক মুজিবুর রহমান জানান- এ বছর শ্রীমঙ্গলসহ মৌলভীবাজার জেলায় বৃষ্টি কম হয়েছে। অন্যদিকে প্রখর রোদের পরিমানও কম ছিলো। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ চা গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক ড. মোহাম্মদ আলী বলেন- বিরূপ আবহাওয়ার বছরের শুরুর দিকে উৎপাদন অনেক কম হয়েছে। তবে বর্তমান আবহাওয়া চায়ের জন্য পুরোপুরো অনুকূলে। পোকা মাকড়ের উপদ্রবও কম। এ আবহাওয়া অব্যাহত থাকলে এ বছরের লক্ষ্যমাত্রা ৭৫ মিলিয়ন কেজি ছাড়িয়ে ৯০ মিলিয়নের কাছাকাছি যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন ।