সুরমার ঢেউ সংবাদ :: করোনা ভাইরাস সংক্রমণের ১৭ মাসেও মৌলভীবাজারে স্থাপন করা হয়নি পিসিআর ল্যাব (নমুনা পরীক্ষা কেন্দ্র)। পিসিআর ল্যাব স্থাপনের জন্য প্রবাসী অধ্যূষিত মৌলভীবাজার জেলাবাসী একাধিকবার দাবি জানালেও কর্ণপাত করছেনা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
জেলাভিত্তিক নমুনা পরীক্ষা এবং রোগী শনাক্তের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়- ৩১ মার্চ সারাদেশে শনাক্তের হার ছিল ১৯ দশমিক ৯০ শতাংশ। এসময় মৌলভীবাজারে শনাক্তের হার ছিল ২২ দশমিক ২০ শতাংশ। ওইসময় শনাক্তের হারে দেশের শীর্ষে ছিল মৌলভীবাজার। করোনা পরীক্ষা কেন্দ্র রয়েছে এমন জেলাগুলোতে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বেশী। পরীক্ষাকেন্দ্র না থাকা জেলায় রোগী শনাক্তের পরিমাণ কম। এসব জেলায় নমুনা পরীক্ষার ফলাফল পেতেও বেশী সময় লাগছে। দূরের পরীক্ষাকেন্দ্রে পাঠানোর সময় অনেক ক্ষেত্রে নমুনা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
করোনা মহামারির শুরু থেকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে- করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের প্রাথমিক শর্ত রোগী শনাক্ত করা। পরীক্ষা যত বেশী হবে আক্রান্ত ব্যক্তিও তত বেশি শনাক্ত হবে। রোগী শনাক্ত হলে এবং এরপরের ধাপগুলো ট্রেসিং, কোয়ারেন্টাইন ও আইসোলেশন যথাযথভাবে পালন করা হলে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। কিন্তু, দেশে নমুনা পরীক্ষা কম হওয়ায় সংক্রমণের প্রকৃত চিত্র উঠে আসছে না। মৌলভীবাজার জেলার নমুনা পরীক্ষা করা হয় সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবে। ফলাফল পেতে সময় লাগে ২/৩ দিন। আবার কখনও কখনও ৪/৫ দিনও লেগে যায়। প্রতিদিন গড়ে ৫০/৬০ জন রোগীর পজেটিভ আসছে। নমুনা দেয়ার পর থেকে ফলাফল আসার পূর্ব পর্যন্ত রোগীরা বাহিরে ঘুরাফেরা করছেন এবং পরিবারের সবার সাথে একত্রে উঠাবসা করছেন। অথচ, দেখা গেছে তাদের নমুনা পরীক্ষার ফলাফল পজেটিভ এসেছে। তাদের মাধ্যমে আক্রান্ত হয়েছেন আরও অনেকে। এ নিয়ে দায়সাড়া বক্তব্য দিচ্ছে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। গতানুগতিক কাজের বাহিরে গিয়ে কিছু করার চিন্তা করছে না জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের এমন দায়সাড়া কাজ নিয়ে অসন্তুষ্ট জেলার সচেতন মহল। তাদের দাবী জেলাসদর হাসপাতালে স্থাপনকৃত জিনএক্সপার্ট মেশিন দিয়ে নমুনা পরীক্ষা করা সম্ভব। কিন্তু, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ১৭ মাসেও কোনো উদ্যোগ নিচ্ছেনা। তারা চেয়ে আছে সরকারী বরাদ্দের দিকে। এখানে পরীক্ষা করা হলে ফলাফল আসতে এতো সময় লাগতো না। সংক্রমনের হারও কমে আসতো।
সদর হাসপাতালে নমুনা দেয়া আব্দুস সামাদের সাথে কথা হলে তিনি বলেন- নমুনা সংগ্রহের ৪/৫ দিন পরে ফলাফল আসে। এ সময়ের মধ্যে পজেটিভ রোগীর মাধ্যমে অনেকের মাঝে সংক্রমন ছড়িয়ে পড়ে। যুক্তরাজ্য অনলাইন প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আজিজুল আম্বিয়া বলেন- এটা অত্যান্ত দুঃখজনক। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে মৌলভীবাজারের প্রবাসীদের ভূমিকা কোনো অংশে কম নয়। অথচ এ জেলাকে সব সময়ই সরকারী বরাদ্দের দিক থেকে পিছিয়ে রাখা হচ্ছে।
করোনায় মৃত্যুবরণকারী রোগীদের দাফন কাফন কাজে নিয়োজিত মৌলভীবাজারে সর্বপ্রথম প্রতিষ্ঠিত তাকরীম ফিউনারেল ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও টিম লীডার সাইফুল ইসলাম সরকার জুনেদ বলেন- জেলাবাসীর সাথে আমরাও মৌলভীবাজারে পিসিআর ল্যাব স্থাপনের দাবী জানিয়ে আসছি। কিন্তু, এ দাবী আলোর মুখ দেখছেনা।
করোনায় মৃত্যুবরণকারী রোগীদের দাফন কাফন কাজে নিয়োজিত শেখ বোরহান উদ্দিন (রহ.) ইসলামী সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান এম মুহিবুর রহমান মুহিব বলেন- সংক্রমনের শুরু থেকেই আমরা মৌলভীবাজারে পিসিআর ল্যাব স্থাপনের দাবী জানিয়ে আসছি। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছেনা।
সিভিল সার্জন ডাঃ চৌধুরী জালাল উদ্দিন মুর্শেদ বলেন- একাধিকবার চাহিদা পাঠানো হয়েছে। কিন্তু, এখন পর্যন্ত কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছেনা। সরকারী সিদ্ধান্তের বাইরে যাবার সুযোগ নেই। জিন এক্সপার্ট মেশিন দিয়ে করোনা পরীক্ষার বিষয়ে তিনি বলেন- এটা অনেক ব্যয়বহুল। এ কারণে আমরা সেদিকে এগোতে পারছিনা।