সুরমার ঢেউ সংবাদ :: হবিগঞ্জ জেলার বাহুবল উপজেলা যেন প্রকৃতির এক অনন্য নিদর্শন। এখানে যেমন রয়েছে দেশের নামিদামী ‘দ্যা প্যালেস লাক্সারি রিসোর্ট’ তেমনি রয়েছে ‘বৃন্দাবন চা-বাগানসহ অসংখ্য পাহাড় টিলা।
উপজেলার বেশিরভাগ অংশের সঙ্গে সীমান্তবর্তী এলাকা থাকায় সীমান্ত এলাকাজুড়ে রয়েছে অসংখ্য সরকারি পাহাড় ও টিলা। আর, এসব পাহাড় ও টিলার ওপর এখন কুনজর পড়েছে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের।
এ সিন্ডিকেটটি এক্সকেভেটরের মাধ্যমে পাহাড় ও টিলা কেটে মাটি নিয়ে যাচ্ছে। ফলে, দিন দিন আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে যাচ্ছে সিন্ডিকেটের লোকজন। এছাড়াও প্রতিনিয়ত মাটি কেটে নেয়ার ফলে পাহাড় ও টিলা সংলগ্ন এলাকায় বসবাসরত লোকজন রয়েছেন ভূমি ধসের শঙ্কায়। তাই, স্থানীয়দের দাবি দ্রুত যেন বিষয়টি নজরে এনে যথাযথ পদক্ষেপ নেন প্রশাসন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাহুবল উপজেলার পুটিজুরি, ভবানীপুর, সুন্দ্রাটিকি, পানি উমদাসহ বেশ কিছু এলাকায় মহাসড়কের পাশসহ সীমান্ত ঘেষা অসংখ্য পাহাড় ও টিলা রয়েছে। বেশ কিছুদিন যাবত প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে ওইসব টিলা ও পাহাড় থেকে মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে একটি ওই সিন্ডিকেট।
পুটিজুরি ইউনিয়নে একটি প্রকল্প পরিদর্শন করতে যান উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা। এসময় এক্সকেভেটর দিয়ে পাহাড় কাটার দৃশ্য নজরে আসে বাহুবল এর ইউএনও সিগ্ধা তালুকদারের। তাৎক্ষণিক তিনি এগিয়ে গেলে এক্সকেভেটর ফেলে পালিয়ে যায় শ্রমিকরা। এ সময় তিনি ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে এক্সকেভেটর ও বিপুল পরিমাণ মাটি জব্দ করেন।
সিন্ডিকেটের সদস্যরা এতটাই শক্তিশালী যে স্থানীয়রা তাদের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পাননা। আবার কেউ কেউ মাঝে মধ্যে তাদের বিরুদ্ধে কথা বললেও তাদেরকে করা হয় বিভিন্ন ভাবে হয়রানি। দেয়া হয় হুমকি ধামকিও। ফলে, বন ও পরিবেশ আইন অমান্য করে তারা মাটি কেটে অন্যত্র বিক্রি করার উৎসবে মেতে উঠেছে। যার ফলে পরিবেশ হারাচ্ছে তার প্রাকৃতিক ভারসাম্য। পাহাড়ে বসবাসরত প্রাণীকূল হারাচ্ছে তাদের নিরাপদ আবাসস্থল।
পরিচয় গোপন রাখার শর্তে স্থানীয়দের অভিযোগ, এসব পাহাড় ও টিলা কাটার মূলে রয়েছে দলীয় কিছু পাতি নেতাকর্মীরা। তারা স্থানীয় রাজনীতির প্রভাব খাটিয়ে এসব টিলা ও পাহাড় কেটে সাবাড় করে দিচ্ছে। কিন্তু, প্রশাসন মাঝে মধ্যে লোক দেখানো অভিযান চালালেও কাজের কাজ হচ্ছেনা কিছুই। তাই বর্ষা মৌসুমে ভারি বৃষ্টিপাত হলে ভূমিধ্বসের শঙ্কায় রয়েছেন সাধারণ নিরীহ লোকজন। তাই, বিষয়টি নজরে এনে প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য জেলা প্রশাসনের প্রতি দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগী লোকজন।
ভূমি ধ্বসের শঙ্কায় থাকা পুটিজুরি গ্রামের বাসিন্দা আফতাব আহমেদ জানান, আমাদের পুটিজুরি এলাকায় অসংখ্য পাহাড় ও টিলা রয়েছে। কিন্তু, কালের বিবর্তনের ফলে এসব টিলা ও পাহাড় এখন অস্তিত্ব হারাতে বসেছে। মাটি খেকোরা প্রতিনিয়ত এসব পাহাড় ও টিলা থেকে মাটি কেটে নেয়ার ফলে ভূমিধ্বসের শঙ্কায় রয়েছেন তিনিসহ বহু পরিবার।
হেলাল আহমেদ জানান, পাহাড় ও টিলা ক্টার ব্যাপারে প্রশাসনের কঠোর নজরদারী প্রয়োজন।
রহিমা খাতুন জানান, পাহাড় ও টিলা কেটে মাটি নেয়ার ফলে বাড়ি ঘরের পার্শ্ববর্তী অনেক স্থানে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টির মৌসুমে এসব গর্তে পড়ে আমাদের ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের প্রাণহানি ঘটতে পারে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাহুবলের ইউএনও জানান, পাহাড় ও টিলা কাটা একটি জঘন্যতম অপরাধ। এর সঙ্গে যারা জড়িত তারা যত বড় শক্তিশালীই হোক না কেন তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে। এ বিষয়ে ডিসি ইশরাত জাহানের কঠোর নির্দেশনা রয়েছে। এরই মধ্যে বেশ কিছু স্থানে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। দায়ের করা হয়েছে মামলা। এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।