শ্রীমঙ্গলে বৃক্ষরোপন না করেও ‘প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় পুরষ্কার ২০১৯ পদক’

শ্রীমঙ্গলে বৃক্ষরোপন না করেও ‘প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় পুরষ্কার ২০১৯ পদক’

সুরমার ঢেউ সংবাদ :: শ্রীমঙ্গলে বৃক্ষরোপন না করেও পরিবেশ মন্ত্রনালয়ের বৃক্ষ রোপণে ‘প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় পুরষ্কার ২০১৯ পদক’ এর জন্য ধর্ষন মামলার আসামী হৃদয় দেবনাথকে মনোনীত করার ঘটনায় বিষ্ময় প্রকাশ করেছেন অনেকে।
হৃদয় দেবনাথ তার ফেসবুক আইডিতে ‘লাউয়াছড়া উদ্যানসহ বিভিন্ন স্থানে ‘ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য সবুজ পৃথিবী গড়ার প্রত্যয়ে বৃক্ষ রোপনের কর্মসূচী’ হাতে নিয়ে এ পর্যন্ত ২ হাজার বৃক্ষরোপন ও ২শ’ বন্য প্রাণী অবমুক্তের দাবী করেন। সরকার তার এ কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ তাকে প্রধানমনন্ত্রী পদকের মনোনীত করার তথ্য প্রকাশ করেন। তবে, কোন ব্যক্তির গাছ লাগানোর এমন তথ্য উড়িয়ে দিয়েছে সিলেট বন বিভাগ ও স্থানীয় পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো।
জানা যায়- হৃদয় দেবনাথের বিরুদ্ধে ধর্ষন, মাদকসেবন, অবৈধভাবে বালু বিক্রিসহ বিভিন্ন সরকারী বে-সরকারী প্রতিষ্ঠানে চাদাঁবাজী ও তদবির বাণিজ্যের নানা অভিযোগ রয়েছে। এ নিয়ে হৃদয় দেবনাথের ‘চাঁদাবাজি কান্ডের’ বেশ কয়েকটি অডিও ভিডিও রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এ ডামাডোলে ‘প্রধানমন্ত্রীর পদক’ এর খবর জানাজানি হলে মানুষের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়।
লাউয়াছড়া জীব-বৈচিত্র আন্দোলনের আহবায়ক প্রভাষক জলি পাল ক্ষুদ্ধ কণ্ঠে বলেন- ‘খবরটা শুনে দুঃখ পেয়েছি। আমরা স্থানীয় মানুষ হিসেবে জানি হৃদয় কখনও গাছ লাগাননি। সে অন্যের লাগানো গাছ নিজের বলে ছবি তুলে প্রচার করেছে। হৃদয় দেবনাথের বিরুদ্ধে মাদক ও ধর্ষনের অভিযোগ রয়েছে। জলি প্রশ্ন করেন- তার মতো মানুষ প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় পুরষ্কারের জন মনোনয়ন পান কিভাবে ?
এ সংগঠনের এডভোকেট হাসান অনির্বাণ বলেন- ‘হৃদয়ের বিরুদ্ধে সরকারী বে-সরকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে। তাই প্রধানন্ত্রীর পদক নয়, তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি’।
দীর্ঘদিন ধরে লাউয়াছড়া বনের প্রকৃতি ও বন্য প্রাণী নিয়ে কাজ করছে স্ট্যান্ড ফর আওয়ার ইন্ডেনগ্রেড উইল্ড লাইফ এর ফাউন্ডার খোকন সিংহ বলেন- গতবছর আমরা রাজনগর থেকে ৬টি মেছোবাঘ সাবক উদ্ধার করে নিবির পরিচর্যা করি। আমরা জানতে পেরেছি হৃদয় নিজে পরিচর্যা করছে এমন মিথ্যা তথ্য দিয়ে বন বিভাগ থেকে ১০ হাজার টাকা গ্রহন করে। আরেক ফাউন্ডার সোহেল শ্যাম একই তথ্য দিয়ে বলেন- ‘হৃদয় নিজ উদ্যোগে কখনও বন্যপ্রাণী অবমুক্ত করেছেন এমনটা শুনিনি’।
মৌলভীবাজার জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ মনসুরুল হক বলেন- ‘বিষয়টি জেনে অবাক হয়েছি। প্রধানমন্ত্রীর পদকের মতো রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ পদক বিতর্কিত কারো হাতে তুলে দেয়া রাষ্ট্র ও দলের জন্য বিব্রতকর।
শ্রীমঙ্গল বণ্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষন বিভাগের সদ্যবদলী হওয়া সহকারী বন সংরক্ষক আনিসুর রহমান জানান- ‘১০ হাজার গাছ লাগানো দূরের কথা তার সময়ে হৃদয় দেবের বৃক্ষরোপনের কোন ঘটনাই ঘটেনি’। একই কথা জানান ওই সময়ে দায়িত্বে থাকা বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা মোনায়েম খাঁন। তিনি জানান- ‘সামাজিক সংগঠনগুলো বিশেষ দিবসগুলোতে বনে বৃক্ষরোপন করে। হৃদয় সাথে থেকে ছবি তুলে থাকতে পারেন, মোটা দাগে বনায়নে তার ভূমিকার কোন রেকর্ড বন বিভাগে নেই’।
জানতে চাইলে বণ্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ সিলেট বিভাগীয় কর্মকর্তা রেজাউল করিম চৌধুরী বিষ্ময় প্রকাশ করে বলেন- ‘ব্যক্তি উদ্যোগে লাউয়াছড়া বনে গেল ১০ বছরে কেউ ২ হাজার গাছের চারা রোপন করেছেন এমনটা তার জানা নেই। তিনি বলেন- ‘হৃদয় দেবনাথ প্রাণী বৈচিত্র সংরক্ষণ নামে একটি ফাউন্ডেশনের নামে করোনায় দুঃস্থদের সাহায্যের কথা বলে কয়েক দফা চাঁদার জন্য এসেছিল। চক্ষু লজ্জায় কয়েকবার দিয়েছিও। এর আগে গভীর রাতে বনের ভেতর বে-আইনী ডিজে পার্টি করেছিল হৃদয় দেবনাথ। এ নিয়ে কঠিন জবাবদিহির মধ্যে পড়তে হয়েছিল। আবার বৃক্ষরোপনে জাতীয় পদকের জন্য তাকে মনোনয়ন দেয়ার ঘটনায় আমরা বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছি’।
পরিবেশকর্মী কৃপেশ দত্ত ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়ায় বলেন- ‘খোজঁ নিন, জানতে পারবেন, বৃক্ষরোপণে হৃদয় দেবনাথের বিন্দুমাত্র ভূমিকা নেই। এমন ধূর্ত ব্যক্তিকে প্রধানমন্ত্রীর রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদক দেয়া আমাদের জন্য অত্যন্ত লজ্জার ও অবমাননার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *