হবিগঞ্জের সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে ১৮টি রকেট লাঞ্চারের গোলা উদ্ধার

হবিগঞ্জের সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে ১৮টি রকেট লাঞ্চারের গোলা উদ্ধার

সুরমার ঢেউ সংবাদ :: হবিগঞ্জ জেলার চুনারূঘাট উপজেলার সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে আবারো অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) বিশেষ অভিযান চালিয়ে ১৮টি ট্যাংক বিধ্বংসী রকেট লাঞ্চারের গোলা উদ্ধার করে। বিজিবি এক সংবাদ সম্মেলনে গোলাবারুদ উদ্ধারের কথা নিশ্চিত করেছে। এ নিয়ে সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে ৭ম বারের মতো অস্ত্র উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করা হল।
গত ৩ মার্চ মঙ্গলবার বিকেল ৪টায় বিজিবির একটি বিশেষ দল সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের গভীর অরণ্যে প্রবেশ করে, বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত থেকে এক কিলোমিটার বাংলাদেশ অভ্যন্তরে মাটির নিচে পলিথিনে মোড়ানো অবস্থায় ১৮টি লাঞ্চারের গোলা উদ্ধার করা হয়।
গত ৪ মার্চ বুধবার সকাল ১১টায় সাতছড়িতে এক সংবাদ সম্মেলনে ৫৫ বিজিবির অধিনায়ক লেঃ কর্নেল এস এন এম সামীউন্নবী চৌধুরী জানান, গভীর অরণ্যে সন্ত্রাসীরা অস্ত্র গোরাবারুদ মজুদ করছে এমন গোপন তথ্য পেয়ে বিজিবি গত কয়েকদিন ধরে চিমটিবিল ও সাতছড়ি এলাকাটি নজরদারিতে রাখে। এরই ধারাবাহিকতায় ৩ মার্চ মঙ্গলবার বিকেলে অভিযান চালানো হয়। বিজিবির বিশেষ দল ওই স্থানটি এখনো কর্ডন করে রেখেছে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সামিউন্নবী বলেন, সন্ত্রাসীরা দেশী না বিদেশী তা গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য পাওয়ার পর নিশ্চিত করা যাবে। তিনি বলেন, গোপন তথ্য পেয়ে সীমান্ত এলাকা কড়া নজরদারিতে আনা হয়। সন্ত্রাসীরা সাধারণত প্রকাশ্যে রাস্তায় চলাফেরা করে না। একেক সময় একেক পথ ব্যবহার করে। পরবর্তীতে ধারণা করা হয়, একটি নির্ধারিত স্থানে সন্ত্রাসীরা আসা যাওয়া করে। এরপর স্থানটি সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে এ অভিযান চালানো হয়। অভিযানে কেউ গ্রেফতার হয়নি। অনেক চেষ্টা করেও গোলাবারুদ কোন দেশের তৈরী এবং মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তিনি বলেন, নতুন গোলার কার্যকারিতা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। তবে, পুরানো গোলা আরো বেশী ক্ষতিসাধন করে। লেঃ কর্ণেল সামিউন্নবী বলেন, সম্প্রতি শ্রীমঙ্গল ও হবিগঞ্জে আটক হওয়া ৩ জনের সাথে এ গোলাবারুদ উদ্ধারের কোন সম্পর্ক নেই। সংবাদ সম্মেলনে সেক্টর কমান্ডার কর্নেল তুহিন মাসুদসহ অন্য কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে র‌্যাব ২০১৪ সালের ১ জুন থেকে ১৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৩ দফায় অভিযান চালিয়ে সেখান থেকে ৩৩৪টি কামান বিধ্বংসী রকেট, ২৯৬টি রকেট চার্জার, একটি রকেট লাঞ্চার, ১৬টি মেশিনগান, একটি বেটাগান, ৬টি এসএলআর, একটি অটো রাইফেল, ৫টি মেশিনগানের অতিরিক্ত খালি ব্যারেল, প্রায় ১৬ হাজার রাউন্ড বুলেটসহ বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদ উদ্ধার করে।
এরপর একই বছরের ১৬ অক্টোবর ৪র্থ দফার গহীন অরণ্যে মাটি খুঁড়ে ৩টি মেশিনগান, ৪টি ব্যারেল, ৮টি ম্যাগজিন, ২৫০ গুলির ধারণক্ষমতা সম্পন্ন ৮টি বেল্ট ও উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন একটি রেডিও উদ্ধার করা হয়। পরে ১৭ অক্টোবর দুপুরে এসএমজি ও এলএমজির ৮ হাজার ৩৬০ রাউন্ড, ত্রি নট ত্রি রাইফেলের ১৫২ রাউন্ড, পিস্তলের ৫১৭ রাউন্ড, মেশিনগানের ৪২৫ রাউন্ডসহ মোট ৯ হাজার ৪৫৪ রাউন্ড বুলেট উদ্ধার করা হয়। ৫ম দফায় ২০১৮ সালের ২ ফেব্রয়ারী সাতছড়িতে অভিযান পরিচালনা করে ১০টি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ৪০ এমএম অ্যান্টি-ট্যাংক রকেট উদ্ধার হয়। সর্বশেষ ৬ষ্ঠ দফায় ২০১৯ সালের ২৪ নভেম্বর সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান থেকে ১৩টি রকেট লঞ্চারের শেলসহ বেশকিছু বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়।
উল্লেখ্য, ২০১৪ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত অস্ত্র ও বিস্ফোরক আইনে দায়ের হওয়া ৩টি মামলা চুনারুঘাট পুলিশ তদন্ত করে চূড়ান্ত রিপোর্ট আদালতে দাখিল করেছে। পরবর্তী সময়ে দায়ের হওয়া মামলাগুলো তদন্ত সম্পর্কিত কোন তথ্য চুনারুঘাট থানায় পাওয়া যায়নি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *