নিজস্ব সংবাদদাতা :: মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলায় ১৭৮তম ঐতিহ্যবাহী মণিপুরী রাস উৎসব অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আগামীহাল ৩০ নভেম্বর সোমবার। মণিপুরী সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব “রাসমেলা”। মহারাসলীলা উৎসব উপলক্ষ্যে উপজেলার মাধবপুর এবং আদমপুর ইউনিয়নের মণিপুরী অধ্যুষিত গ্রামগুলি উৎসবের প্রতীক্ষায়। মন্ডপগুলিতে সাজসজ্জার কাজ প্রায় শেষ। সোমবার সকাল ১১টায় মাধবপুরের শিববাজার উন্মুক্ত মঞ্চ প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হবে গোষ্ঠলীলা বা রাখাল নৃত্য। রাতে জোড় মন্ডপে অনুষ্ঠিত হবে রাস উৎসবের মূল পর্ব মহারাসলীলা। রাস উৎসবে মণিপুরী সম্প্রদায়ের পাশাপাশি দেশি-বিদেশি পর্যটকরা এবং ভারত থেকে আগত মণিপুরী সম্প্রদায়ের লোকজনসহ ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে হাজার-হাজার লোকজন আনন্দ উৎসবে মেতে উঠেন।“রাসমেলা” উপভোগে আগত কবি,সাহিত্যিক,সাংবাদিক,বরেণ্য জ্ঞানী-গুণীজন, রাজনৈতিক ব্যাক্তিত্বরা ও প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠে মাধবপুর এবং আদমপুরের ম-প প্রাঙ্গণ। রাস উৎসবকে ঘিরে সাদা কাগজের নিপুণ কারুকাজ খচিত নকশার আবরণে সাজানো হয়েছে মাধবপুর ও আদমপুরের ম-পগুলো। চোখ ধাঁধানো আলোকসজ্জা তো আছেই। মণিপুরী শিশু নৃত্যশিল্পীদের সুনিপুণ নৃত্যাভিনয় রাতভর মনমুগ্ধ করে রাখবে ভক্ত এবং দর্শনার্থীকে।
মাধবপুরের রাসমেলা অনুষ্ঠিত হবে বিষ্ণুপ্রিয়া সম্প্রদায়ের মণিপুরী মহারাসলীলা সেবা সংঘ কর্তৃক। অপরদিকে আদমপুরে পৃথক রাসমেলা অনুষ্ঠিত হবে মণিপুরী মৈতৈ সম্প্রদায়ের আয়োজনে। আদমপুরে এবার অনুষ্ঠিত হবে ৩৮তম রাস উৎসব। এখানেও থাকবে যথারীতি রাখাল নৃত্য ও মহারাসলীলা। তবে, বিষ্ণুপ্রিয়া ও মৈতৈ সম্প্রদায় পৃথক স্থানে আয়োজন করলেও উৎসবের অন্তঃস্রোত, রসের কথা, আনন্দ-প্রার্থনা সবকিছু একই। উৎসবের ভেতরের কথা হচ্ছে বিশ্বশান্তি, সম্প্রীতি ও সত্যসুন্দর মানবপ্রেম।
আয়োজকরা জানিয়েছেন, রাস উৎসব সফল করতে প্রায় ১মাস যাবৎ ৩টি বাড়ীতে রাসনৃত্য এবং ৩টি বাড়ীতে রাখাল নৃত্যের প্রশিক্ষণ ও মহড়া চলেছে। মাধবপুরে ৩টি জোড় মন্ডপের আওতায় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। একেকটি মন্ডপে আছেন ১ জন পুরোহিত। সেই পুরোহিতের পরামর্শে ১ জন প্রশিক্ষক ধর্মীয় বিধিবিধান মতো গোপী বা শিল্পীদের প্রশিক্ষণ দেন। গোপীবেশী শিল্পীদের বয়স ১৬ থেকে ২২ বছর। শুধুমাত্র রাধার বয়স ৫ থেকে ৬ বছর। নৃত্যের প্রতিটি দলে ন্যূনতম ১২ জন অংশ নিয়ে থাকে। একইভাবে রাখাল নৃত্যেরও প্রতিটি দলে ১৪ থেকে ১৫ বছর বয়সী ২০ থেকে ২২ জন বালক অংশ নিয়ে থাকে। মহারাসলীলা মূল উপস্থাপনা শুরু হবে সকাল ১১টা থেকে ‘গোষ্ঠলীলা বা রাখালনৃত্য’ দিয়ে। গোষ্ঠলীলায় রাখাল সাজে কৃষ্ণের বালকবেলাকে উপস্থাপন করা হবে। এতে থাকবে কৃষ্ণের সখ্য ও বাৎসল্য রসের বিবরণ। গোধূলি পর্যন্ত চলবে রাখাল নৃত্য। রাত ১১টা থেকে পরিবেশিত হবে মধুর রসের নৃত্য বা শ্রী শ্রী কৃষ্ণের মহারাসলীলা অনুসরণ। রাসনৃত্য চলবে ভোর (ব্রাহ্ম মুহূর্ত) পর্যন্ত। রাসনৃত্যে গোপিনীদের সাথে কৃষ্ণের মধুরলীলার কথা, গানে ও সুরে ফুটিয়ে তুলবেন শিল্পীরা।