সুরমার ঢেউ সংবাদ :: বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসে প্রাণহানি সবচেয়ে কম বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এজন্য যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন তারা।
দেশে প্রাণঘাতি করোনা ভাইরাস সংক্রমণের ৬ মাস অতিক্রান্ত হয়েছে। দীর্ঘ এই সময়ে বিশ্বের অনেক দেশেই সংক্রমণ ও প্রাণহানির নতুন নতুন রেকর্ড হয়েছে। বিশ্বখ্যাত জরিপ সংস্থা ওয়ার্ল্ডওমিটারের তথ্যানুযায়ী বিশ্বের শীর্ষ সংক্রমিত দেশগুলোর তালিকায় বাংলাদেশ এখন ১৪তম স্থানে। এসব দেশের মধ্যে একমাত্র বাংলাদেশেই সংক্রমিত ও মৃতের সংখ্যা কম। পরিসংখ্যান বলছে, করোনাক্রান্ত দেশগুলোর মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, ব্রাজিল, রাশিয়া, পেরু, কলম্বিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, মেক্সিকো, স্পেন, আর্জেন্টিনা, চিলি, ইরান ও যুক্তরাজ্যের পরই এখন বাংলাদেশ।
দীর্ঘ ৬ মাসের করোনা পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সংক্রমণের হারে ৬ মাসে একমাত্র যুক্তরাজ্যের চেয়ে বাংলাদেশে শনাক্তের হার বেশি। তবে বাংলাদেশের তুলনায় যুক্তরাজ্যে প্রায় ৩৬ হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে ভাইরাসটিতে। যুক্তরাজ্যে প্রতি ১০ লাখে ৬১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর বাংলাদেশে এই হার ২৭ জন। এছাড়া এই ১৪ দেশের মধ্যে একমাত্র বাংলাদেশেই মৃত্যুর সংখ্যা কম- যা প্রাণহানির তালিকায় ২৯তম।
গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনার প্রাদুর্ভাব ঘটে। এর ১০ দিনের মাথায় গত ১৮ মার্চ প্রথম ১ জনের মৃত্যু হয়। এ হিসাবে সংক্রমণের ১৮৪তম দিনে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৩ লাখ ২৭ হাজার ৩৫৯ জন। এর মধ্যে প্রাণহানি ঘটেছে ৪ হাজার ৫১৬ জনের। আক্রান্তদের মধ্যে সুস্থ্য হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছেন ২ লাখ ২৪ হাজার ৬৭৩ জন। আক্রান্ত ও প্রাণহানির শীর্ষ দেশ যুক্তরাষ্ট্রে ১৮৪ দিনের মাথায় গত ২৪ জুলাই পর্যন্ত ৪২ লাখ ৪৯ হাজার ২৪ জন আক্রান্ত হয় এবং ১ লাখ ৪৯ হাজার ৬৮ জন মৃত্যুবরণ করেন। সংক্রমণের দিক থেকে ২য় স্থানে থাকা ভারতে একই সময়ে করোনার ভুক্তভোগীর সংখ্যা দাঁড়ায় ১৮ লাখ ৪ হাজার ৭০২ জনে। এর মধ্যে প্রাণহানি ঘটে ৩৮ হাজার ১৬১ জনের। ৩য় স্থানে থাকা ব্রাজিলে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ায় ৩৮ লাখ ১২ হাজার ৬০৫ জনে, আর মৃত্যু হয় ১ লাখ ১৯ হাজার ৫৯৪ জনের।
৪র্থ স্থানে থাকা রাশিয়ায় ১৮৪ দিনের মাথায় গত ২ আগস্ট পর্যন্ত ৮ লাখ ৫০ হাজার ৮৭০ জন আক্রান্ত এবং ১৪ হাজার ১২৮ জন মৃত্যুবরণ করেন। ৫ম স্থানে থাকা পেরুতে এ সময়ে ৬ লাখ ৮৩ হাজার ৭০২ জন আক্রান্ত এবং ২৯ হাজার ৬৮৭ জন প্রাণ হারান। ৬ষ্ঠ স্থানে থাকা কলম্বিয়ায় আক্রান্ত বেড়ে হয় ৬ লাখ ৫৮ হাজার ৪৫৬ জন এবং মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২১ হাজার ১৫৬ জনে পৌঁছায়। ৭ম স্থানে থাকা দক্ষিণ আফ্রিকায় ৬ লাখ ৩৫ হাজার ৭৮ জন আক্রান্ত এবং ১৪ হাজার ৬৭৮ জন মৃত্যুবরণ করেন। ৮ম স্থানে থাকা মেক্সিকোতে ১৮৪ দিনের মাথায় ৩০ আগস্ট পর্যন্ত ৫ লাখ ৯১ হাজার ৭১২ জন আক্রান্ত এবং ৬৩ হাজার ৮১৯ জন মৃত্যুবরণ করেন। ৯ম স্থানে থাকা স্পেনে ৩ আগস্ট পর্যন্ত ৩ লাখ ৩৪ হাজার ৬৩৪ জনের করোনা শনাক্ত হয় এবং মারা যান ২৮ হাজার ৪৭২ জন। ১০ম স্থানে থাকা আর্জেন্টিনায় এ সময় করোনার শিকার হয় ৪ লাখ ৫১ হাজার ১৯১ জন এবং মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৯ হাজার ৩৬১ জনে।
১১তম স্থানে থাকা চিলিতে আক্রান্ত বেড়ে হয় ৪ লাখ ১৪ হাজার ৭৩৯ জন এবং প্রাণহানি ঘটে ১১ হাজার ৩৪৪ জনের। ১২তম স্থানে থাকা ইরানে ৬ মাসে আক্রান্ত হন ৩ লাখ ৫২ হাজার ৫৫৮ জন এবং না ফেরার দেশে চলে যান ২০ হাজার ২৬৪ জন। ১৩তম স্থানে থাকা যুক্তরাজ্যে ১৮৪ দিনের মাথায় ৩ জুলাই পর্যন্ত ২ লাখ ৮৫ হাজার ১০৩ জন আক্রান্ত এবং ৪০ হাজার ৫৭৮ জন মৃত্যুবরণ করেন। আর ১৪তম স্থানে থাকা বাংলাদেশে এই সময়ে সংক্রমিতের সংখ্যা বেড়ে ৩ লাখ ২৭ হাজার ৩৫৯ জনে দাঁড়ায়। এর মধ্যে প্রাণহানি ঘটে ৪ হাজার ৫১৬ জনের।
এই পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সংক্রমণের ১৮৪ দিনের মাথায় শীর্ষ ১৪ দেশের মধ্যে একমাত্র যুক্তরাজ্যের চেয়ে বাংলাদেশে বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। অন্য দেশগুলোতে বাংলাদেশের তুলনায় সংক্রমণ বেশি ছিল।
এদিকে স্বাস্থ্য বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা মনে করেন, দেশে করোনার দাপট আগের তুলনায় কমে আসছে। গত কয়েকদিনে সংক্রমণের হার ১৬ থেকে ১৭ শতাংশের মধ্যে রয়েছে। এটি ২ সপ্তাহ ধরে স্থিতিশীল থাকলে মনে করতে হবে, সংক্রমণ কমে আসতে শুরু করেছে।
তবে জনস্বাস্থ্য, রোগতত্ত্ববিদসহ বিশেষজ্ঞদের অধিকাংশের মত, অন্তত ২ সপ্তাহ সংক্রমণ হার একই অবস্থানে থাকলে সংক্রমণ কমতে শুরু করেছে বলে ধরে নেয়া যেতে পারে। কিন্তু এখনই বলা যাবেনা সংক্রমণের হার কমছে।