সুরমার ঢেউ সংবাদ :: বাংলাদেশের হিন্দু বিধবারা স্বামীর সম্পত্তিতে ভাগ পাবেন মর্মে রায় ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। ফলে, এখন থেকে কৃষিজমিসহ স্বামীর সব সম্পত্তিতে হিন্দু স্ত্রীরা ভাগ পাবেন, ভোগদখল এবং বিক্রিও করতে পারবেন বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা। এ সংক্রান্ত একটি মামলার চূড়ান্ত শুনানি শেষে হাইকোর্টের বিচারপতি মিফতাহ উদ্দিন চৌধুরীর একক বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন।
বাংলাদেশের সংবিধানে নারী-পুরুষের সমান অধিকারের কথা বলা হয়েছে। নারীনীতিতেও বলা হয়েছে সমান অধিকারের কথা। কিন্তু সম্পত্তিতে এ দেশের হিন্দু নারীর উত্তরাধিকার প্রতিষ্ঠা পায়নি এতকাল। এ রায়ের ফলে হিন্দু নারীরা সেই উত্তরাধিকারের স্বীকৃতি পেলেন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। আদালতে ব্যারিস্টার উজ্জ্বল ভৌমিক এ মামলায় এমিকাস কিউরি (আদালতের বন্ধু) হিসেবে মামলা পরিচালনায় সহায়তা করেন। বাদী গৌরীদাসীর পক্ষে আইনজীবী মো. আব্দুল জব্বার ও তার দেবরের পক্ষে ছিলেন নাফিউল ইসলাম। আদালতে এমিকাস কিউরি হিসেবে হাইকোর্টকে সহযোগিতা দেয়া আইনজীবী ব্যারিস্টার উজ্জ্বল ভৌমিক জানান, ১৯৪১ সালে ইন্ডিয়ান ফেডারেল কোর্টের এ সংক্রান্ত এক মামলার রায়, ১৯৩৭ সালের হিন্দু আইন এবং ১৯৭২ সাল থেকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় কাঠামো পরিবর্তনের পর আইন পর্যালোচনা করে আদালত বলেন, দেশে প্রচলিত যে আইন আছে তাতে জমির (কৃষি এবং পতিত ভূমি) মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। সে জন্যই স্বামীর সব জমিতে অংশীদারিত্ব পাবেন হিন্দু বিধবা নারীরা।
এ রায়ের ফলে ৮৩ বছর পর স্বামীর সম্পত্তিতে অধিকার পেলেন হিন্দু বিধবারা। হাইকোর্টের এ রায়ের ফলে এখন থেকে কৃষিজমিসহ স্বামীর সব সম্পত্তিতে স্ত্রীরা ভাগ পাবেন। দেশে প্রচলিত আইন অনুযায়ী, হিন্দু বিধবারা স্বামীর কৃষিজমিরও অংশীদারি পেতোনা। অথচ ১৯৯৬ সালে খুলনার বটিয়াঘাটার হিন্দু বিধবা নারী গৌরীদাসীর নামে কৃষিজমি রেকর্ড হয়। এর বিরুদ্ধে একই বছর খুলনার বিচারিক আদালতে (বটিয়াঘাটা) মামলা দায়ের করেন গৌরীদাসীর দেবর জ্যোতিন্দ্র নাথ।
শুনানি শেষে বিচারিক আদালত এই মামলার রায়ে বলেন, হিন্দু বিধবারা স্বামীর অ-কৃষিজমিতে অধিকার রাখলেও কৃষিজমির অধিকার রাখেননা। এরপর সে রায়ের বিরুদ্ধে ১৯৯৬ সালেই গৌরীদাসী খুলনার জজ আদালতে আপিল আবেদন করেন। ওই আবেদনের প্রেক্ষিতে হিন্দু বিধবা নারী স্বামীর কৃষিজমির ভাগ পাবেন বলে ২০০৪ সালে রায় দেন। এরপর খুলনার জজ আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিভিশন আবেদন করা হয়। উভয়পক্ষের দীর্ঘ শুনানি এবং এমিকাস কিউরিদের মতামত নিয়ে হাইকোর্ট এ রায় ঘোষণা করেন।