শ. ই. সরকার :: মৌলভীবাজারে ভূমি অধিগ্রহণে হরিলুট হচ্ছে সরকারী অর্থ। সংশ্লিষ্ট এলাকাসমূহের জনপ্রতিনিধি/প্রভাবশালী লোকজন, সংশ্লিষ্ট ভূমি অফিস ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহণ শাখার সমন্বয়ে এ হরিলুট হচ্ছে। ‘গ’ ফরমে জারীকৃত ভূমি অধিগ্রহণ শাখার ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা অন্তরা সরকার অদ্রি, কানুনগো বশির আহমেদ, সার্ভেয়ার আব্দুল ছায়েম মামুন ও সার্ভেয়ার সঞ্জয় কুমার সিংহ স্বাক্ষরিত ০৩/২০২১-২২নং এল.এ কেসসমূহের ৫৩নং নোটিশসমূহের কয়েকটি যাচাই ও তুলনা করে এবং সরেজমিন জেলার রাজনগর উপজেলার মনসুরনগর ইউনিয়নের প্রেমনগর গ্রামে (সাসমহল মৌজা) অধিগ্রহণকৃত কয়েকটি ভূমি পরিদর্শন করে দেখা গেছে- অধিগ্রহণকৃত কিছু কিছু ভূমির অবকাঠামো/ঘরবাড়ীর মূল্য ধরা হয়েছে কয়েকগুণ বর্ধিত হারে। আধাপাকা অবকাঠামো/ঘরবাড়ীর চেয়ে কাঁচা (টিনের বেড়া ও টিনের ছাউনি) অবকাঠামো/ঘরবাড়ীর মূল্য বেশী ধরা হয়েছে। একই শ্রেণীর অবকাঠামো/ঘরবাড়ীর মূল্য নির্ধারণে করা হয়েছে বৈষম্য। একইভাবে গাছপালার মূল্যও বর্ধিত হারে ধরা হয়েছে। মালিক ভেদে গাছপালার মূল্য নির্ধারণেও কমবেশী বৈষম্য করা হয়েছে। মালিকানার নামের শেষে গং লিখা থাকলেও অধিগ্রহণ নোটিশ প্রদান করা হয়েছে একজনকে। একইভাবে, একাধিক উত্তরাধিকারী থাকা সত্তেও অধিগ্রহণ নোটিশ প্রদান করা হয়েছে একজনকে। আবার একই ভূমি এবং অবকাঠামো/ঘরবাড়ী ও গাছপালার জন্য অধিগ্রহণ নোটিশ প্রদান করা হয়েছে একাধিক জনকে।
পাশাপাশি বসবাসরত ফাকুল মিয়া গং ও খেলা বেগমকে হুবহু একই অধিগ্রহণ নোটিশ প্রদান করা হয়েছে। দুজনেরই টিনের বেড়া ও টিনের ছাউনীযুক্ত অবকাঠামো/ঘরবাড়ীর মূল্য ধরা হয়েছে ১০,২২,৪৮৯/১৪ টাকা- যা প্রকৃত মূল্যের কয়েকগুণ বেশী। তাদের পাশাপাশি বসবাসরত আরজুন বিবির পাকা দেয়াল ও টিনের ছাউনিযুক্ত অবকাঠামো/ঘরবাড়ীর মূল্য ধরা হয়েছে ৯,৬০,৬২২/৬০ টাকা- যা ফাকুল মিয়া গং ও খেলা বেগমের অবকাঠামো/ঘরবাড়ীর মূল্যের চেয়ে বেশ কম। ছুরুক মিয়াকে দুটি নোটিশ প্রদান করা হয়েছে- যাতে পিতার নাম ভিন্ন ভিন্ন। এর মধ্যে একটি নোটিশে ছুরুক মিয়ার সাথে আজিজুর রহমানের নাম রয়েছে। এ একই নোটিশ আজিজুর রহমানও পেয়েছেন। দুটি নোটিশেই অবকাঠামো/ঘরবাড়ীর মূল্য ধরা হয়েছে ৫,৯৫,৩০৮/১৪ টাকা- যা ফাকুল মিয়া গং ও খেলা বেগমের অবকাঠামো/ঘরবাড়ীর মূল্যের চেয়ে অনেক কম। আজিজুর রহমান জানান- ছুরুক মিয়া তার শ্যালক এবং এ ভূমির মালিক। অবকাঠামো/ঘরবাড়ী ও গাছপালার মালিক তিনি নিজে এবং তিনি এখানে বসবাসরত। ছুরুক মিয়ারা ৩ ভাই ও ৩ বোন হলেও ছুরুক মিয়া ছাড়া অন্যরা নোটিশ পায়নি বলে জানা গেছে। নিজাম উদ্দিনের নোটিশে দেখা যায় তার অবকাঠামো/ঘরবাড়ীর মূল্য ধরা হয়েছে ২৭,৩৯৭/১৪ টাকা- যা ফাকুল মিয়া গং ও খেলা বেগমের অবকাঠামো/ঘরবাড়ীর মূল্যের তুলনায় অনেক অনেক কম। আছকর উল্যাকে দুটি নোটিশ প্রদান করা হয়েছে- যাতে পিতার নাম দু’রকম, গ্রামের নামও দুটি। তার একটি নোটিশে অবকাঠামো/ঘরবাড়ীর মূল্য ধরা হয়েছে ৯,৭৪,১৫৮/৬০ টাকা- যা বাস্তবতার সাথে প্রায় মিল নেই। মৌলভীবাজার সদর ও রাজনগর উপজেলায় অধিগ্রহণকৃত ভূমিসমূহ এবং অধিগ্রহণের নোটিশসমূহ পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও তুলনা করলে এরকম আরও অনিয়ম-দূর্ণীতি পাওয়া যাবে।
সংশ্লিষ্ট ভূমি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহণ শাখার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজস ছাড়া অধিগ্রহণকৃত ভূমির অবকাঠামো/ঘরবাড়ী ও গাছপালার মূল্য নির্ধারণ সম্ভব নয়।
একটি গোপন সূত্রে জানা গেছে- অধিগ্রহণকৃত অধিকাংশ ভূমির অবকাঠামো/ঘরবাড়ী ও গাছপালার মূল্য নির্ধারণে ভাগ-বাটোয়ারার অলিখিত গোপন চুক্তিতে সংশ্লিষ্ট ভূমি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহণ শাখার কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং অধিগ্রহণকৃত ভূমি এলাকার স্থানীয় জনপ্রতিনিধি/প্রভাবশালী লোকজনের সমন্বিত অনিয়ম-দূর্ণীতির মাধ্যমে এ হরিলুট হচ্ছে। অধিগ্রহণকৃত ভূমিসমূহ এবং অধিগ্রহণের নোটিশসমূহ পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও তুলনা করলে অনিয়ম-দূর্ণীতির বিষয়টি সহজেই প্রমানীত হওয়া সম্ভব।
এ বিষয়ে জানতে গত ২৩ সেপ্টেম্বর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহণ শাখার কর্মকর্তা অন্তরা সরকার অদ্রি’র বক্তব্য নেয়ার কথা থাকলেও ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৪ দিন বিভিন্ন সময় অফিসে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। এ ৪ দিনে ৭ বার ফোন করলেও ১ বার রিসিভ করে জানান, তিনি পূঁজার ছুটিতে আছেন। এমতাবস্থায়, ভূমি অধিগ্রহণে হরিলুট বিষয়ে তথ্য-প্রমানসহ ভূমি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ও সিলেট বিভাগীয় কমিশনারকে অনুলিপিসহ ৬ অক্টোবর জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। সর্বশেষ ১২ অক্টোবর দুপুরে শেষবারের মতো ফোন করলে ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা অন্তরা সরকার অদ্রি জানান, তিনি ট্রেনিংয়ে আছেন। এভাবে দীর্ঘদিন চেষ্টা করেও তার বক্তব্য নেয়া যায়নি।
